বীরেশ্বর বেরা, হাওড়া: রাজ্য সরকারের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের পরিচালনাধীন একটি বড় হাসপাতাল রয়েছে হাওড়ার নরসিংহ দত্ত রোডে। হাওড়া শহরে পশুদের চিকিৎসার জন্য এটিই একমাত্র সরকারি হাসপাতাল। চিকিৎসার পাশাপাশি রোগ নির্ণয়ও এখানে করা হয় বলে সরকারি নথি থেকে জানা যাচ্ছে। প্রাণী হাসপাতালে রয়েছে এক্স-রে রুম, ইউএসজি রুম, এমনকী অপারেশন থিয়েটারও। কিন্তু এসব পরিকাঠামো কার্যত ব্যবহার হয় না বলে একাধিক পশুপ্রেমীর অভিযোগ। কেউ কোনও পোষা প্রাণী বা কোনও সংস্থার তরফে রাস্তার অসুস্থ কুকুর, বিড়ালকে এখানে আনলে তেমন কোনও পরিষেবাই মেলে না। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও কর্মী নেই। ফলে এত বড় পরিকাঠামো কার্যত পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ করছেন পশুপ্রেমী ও এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। একাধিকবার আবেদনেও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের। ফলত, প্রিয় পোষ্যদের কোনও অসুস্থতা ধরা পড়লে হাওড়া শহরের বাসিন্দাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এখান থেকে বেলগাছিয়ায় প্রাণী চিকিৎসা কেন্দ্রে ‘রেফার’ করা হয়। অনেকে বাধ্য হয়ে বেসরকারিভাবে কোথাও চিকিৎসা করান পোষ্যের। তবে যেসব পশুপ্রেমী সংগঠন রাস্তার কুকুর, বিড়ালের যত্ন নেয়, তারা সবসময় মোট অর্থ ব্যয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা করাতে পারে না। হাসপাতালে গিয়ে কোনও পরিষেবা না মেলায় কার্যত বিনা চিকিৎসায় অনেক প্রাণী মারা যায় বলেও অভিযোগ। সম্প্রতি এই হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, তা খোলা থাকলেও কার্যত জনমানবশূন্য। অযত্নের ছাপ সর্বত্রই স্পষ্ট। আগাছায় ভরে গিয়েছে উঠোন। হাসপাতালের ভিতরে এক্স-রে, ইউএসজি এবং অপারেশন থিয়েটারের রুম তালাবন্ধ। তাতে ধুলো জমে থাকতে দেখে সহজেই বোঝা যায় ওইসব ঘর খোলা হয়নি দীর্ঘদিন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মী জানান, এখানে মাত্র দু’জন স্থায়ী কর্মী রয়েছেন। চিকিৎসক নিয়মিত আসেন না। এত কম লোকবল নিয়ে পরিষেবা কতটা দেওয়া সম্ভব, তা নিয়ে সন্দিহান তিনিও। একটি পশুপ্রেমী সংস্থা চালান শৈলেশ উপাধ্যায় নামে স্থানীয় এক যুবক।
হাসপাতালে যে তেমন চিকিৎসা মেলে না, সেই কথা তিনি নিজে একাধিক জায়গায় ই-মেলের মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা যাঁরা অবলা প্রাণীগুলোকে একটু ভালো রাখার জন্য চেষ্টা চালাই, আমাদের খুবই সমস্যা হয়, এখান থেকে কোনও পরিষেবা না মেলায়। নানা সময় অসুস্থ প্রাণীদের নিয়ে গিয়ে শুনতে হয়েছে, ‘কোনও চিকিৎসক নেই। অন্য জায়গায় নিয়ে যান।’ অতিরিক্ত খরচের জন্য অনেক সময় তা পেরে উঠি না। অথচ সরকারি উদ্যোগ কেন থাকবে না, সেই প্রশ্নের কোনও জবাব মেলে না। স্থানীয় বিধায়ক ও মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। পরিকাঠামো থাকলেও কার বা কাদের গাফিলতিতে পরিষেবা মিলছে না, পরিকাঠামোর দিক থেকেও কী কী প্রয়োজন রয়েছে—সবটাই খোঁজখবর করা হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গেও কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী।