শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
বেলজিয়ামের ইপ্রেস শহরে ত্রয়োদশ শতাব্দীর ‘ক্লথ হল’-এর অনুকরণে গঙ্গার ধারে কলকাতা হাইকোর্টের মূল ভবনটি তৈরি হয়েছিল নিও-গথিক শিল্পশৈলি মেনে। সুউচ্চ ঘরের সঙ্গে মানানসই বিশাল দরজা আর জানালাগুলির গঠনশৈলিও অন্যরকম। সেই দরজায় বসেছিল ব্রিটিশ আমলের সব তালা। কিন্তু, কালের নিয়মে সেইসব তালা হারিয়ে গিয়েছে। এখন পড়ে রয়েছে মাত্র একটি, যা সেই আমলের সাক্ষ্য বহন করে চলছে।
প্রতিদিন কয়েক’শো ঘর খোলা ও বন্ধ করার ঝক্কি কম নয়। কে লাগান এত তালা? কীভাবেই বা বোঝা যায়, কোন চাবিতে খুলবে কোন তালা? এর উত্তর একমাত্র জানেন চাবিবাবুরাই। শুধু মূল ভবনেই চাবির সংখ্যা প্রায় ১৫০। প্রতিটি চাবি বিশেষভাবে চিহ্নিত করা আছে। তিনটি তলের চাবি আলাদা প্রতি তলে রয়েছেন একজন চাবিবাবু। তাঁর কাছেই থাকে গোছা গোছা চাবি। সকাল ৯টা থেকে সওয়া ৯টার মধ্যে তাঁদের আদালতে হাজির হতে হয়। তাঁরা দরজা খুলে দিলে তবেই সাফাই কর্মীরা পরিষ্কার করতে পারেন ঘরগুলি। সাফসুতরো হয়ে গেলে ফের তালা পড়ে ঘরে। সাড়ে ১০টায় বসে এজলাস। তার আগে ফের খুলতে হয় সেই তালা। দিনের শেষে এজলাসের কর্মীরাই ঘর বন্ধ করে ফিরিয়ে দিয়ে যান চাবি। একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় বিচারপতিদের অফিস, চেম্বার বা আইনজীবীদের বার অ্যাসোসিয়েশনগুলির ঘরের ক্ষেত্রে।
তবে কাজের স্বার্থেই অনেক সময় বিচারপতিদের চেম্বার ও অফিস রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। তাঁরা বেরলে তবেই তালা পড়ে ঘরে। যতক্ষণ না তালা পড়ছে, ততক্ষণ ঠায় বসে থাকতে হয় চাবিবাবুদের। সব চাবি জমা পড়লে তবে ছুটি মেলে। এমনকী শনি-রবিবার কোনও বিচারপতি হাইকোর্টে এলে চাবির গোছা হাতে হাজির হতে হয় চাবিবাবুদের। কোনও বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে অসময়ে হঠাৎ আদালত বসাতে হলেও ঘুম বিসর্জন দিয়ে ছুটে আসতে হয় তাঁদের।
এক কোর্ট অফিসারের অধীনেই কাজ করেন এই চাবিবাবুরা। সেই অফিসার জানালেন, তাঁদের কয়েকজন হাইকোর্ট পাড়ায় বা আশপাশে থাকেন। ছুটির দিনে বা রাত-বিরেতে জরুরি পরিস্থিতিতে ডাক পাঠালে তাঁরা এসেই দরজা খোলেন। তাঁরা না এলে শুনানি চালানোই মুশকিল হয়ে যেত। তবে হাইকোর্টের নতুন দু’টি ভবন সহ পুরনো বাড়ির বহু দরজাতেই এখন আধুনিক ‘হ্যাচ’ লেগেছে, বলছিলেন ওই অফিসার। তবে তা এই ঐতিহাসিক ভবনের সঙ্গে মানানসই কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। -ফাইল চিত্র