শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
সম্প্রতি বিধাননগর পুলিস কমিশনারেটের অন্তর্গত বাগুইআটি থানায় সাড়ে তিন কোটি টাকার একটি প্রতারণার মামলা দায়ের হয়। অভিযোগ, চেন্নাইয়ে বসবাসকারী এক মহিলার টাকা বাগুইআটির একটি ব্যাঙ্ক থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। দফায় দফায় মোট ৩.২ কোটি টাকার ‘উইথড্রল’ হয়েছে বলে মেসেজ পান ওই তিনি। প্রতারিত মহিলা সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করে গোটা ঘটনাটি জানান। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বাগুইআটি থানায় সরাসরি অভিযোগ দায়ের করে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বিধাননগর সাইবার থানার পুলিস তদন্ত করে দেখে, ওই ব্যাঙ্কের দুই কর্মী সমীরণ সাহা এবং বাপ্পাদিত্য বিশ্বাস এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ওই মহিলার অ্যাকাউন্ট ট্র্যাক করছিলেন। প্রথমে সমীরণকে গ্রেপ্তার করা হলেও খোঁজ মেলেনি বাপ্পাদিত্যের। শেষ অবধি ফেব্রুয়ারিতে বাপ্পাদিত্য বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিস।
ওই তদন্তে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্যের হদিশ পান গোয়েন্দারা। জানা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রতারণা চক্রের নজর এখন উত্তর-পূর্ব ভারতে। বিশেষত, অসম এবং নাগাল্যান্ডে বিভিন্ন অব্যবহৃত অ্যাকাউন্টকে নিয়মিত ট্র্যাক করছে তারা। দেখা গিয়েছে, যে সব গ্রাহক মারা গিয়েছেন, কিংবা যাঁদের বয়স ৬০ পেরিয়েছে, তাঁদের অ্যাকাউন্টকেই ‘টার্গেট’ করছে ‘ফ্রডস্টার’রা। এই অ্যাকাউন্টগুলিতে নজরদারি চালানো হচ্ছে কীভাবে? গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতারকদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের এজেন্টদের। যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে ব্যাঙ্কের কর্মী নন, কিন্তু ঋণ বা অন্যান্য কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরাই লোকচক্ষুর আড়ালে সেই সব অ্যাকাউন্টে নজর রাখেন। বিধাননগর পুলিসের এক গোয়েন্দা জানান, এই সব এজেন্টরা দীর্ঘদিন ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তারা বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ কাজ শিখে নেন। ফলে বিভিন্ন কেসের তদন্তে দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন লেনদেন না হওয়ায় ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে লিঙ্ক থাকা আধার কার্ড এবং মোবাইল নম্বর বদলে গিয়েছে। যা থেকে সন্দেহের তির বিভিন্ন এজেন্টদের দিকেই।
সাইবার পুলিস সূত্রে খবর, অনলাইন প্রতারণায় লুট করা টাকা এই সমস্ত অব্যবহৃত অ্যাকাউন্টগুলিতে ছড়িয়ে দেয় প্রতারকরা। টাকা ক্রেডিট হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে সেই টাকা তুলে নেওয়া হয় অ্যাকাউন্ট থেকে। ফলে তদন্তকারীদের পক্ষে প্রতারিতদের খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টকে প্রতারকরা টার্গেট করছে কেন? পুলিসের অনুমান, মেট্রোপলিটন সিটি কিংবা দেশের যে কোনও বড় শহরের ব্যাঙ্কগুলিতে কর্তৃপক্ষের নজরদারি অত্যন্ত কড়া। সেখানে কারচুপি করার সম্ভাবনা কম। প্রতারকরা তাই টার্গেট করেছে অসম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টকে। ‘ফ্রডস্টার’দের থেকে সচেতন থাকতে অ্যাকাউন্টগুলির উপর ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের নজরদারি আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন গোয়েন্দারা।