সামাজিক কল্যাণকর্মে সামাজিক স্বীকৃতি আর সন্মান। গৃহ পরিবেশে চাপ। আর্থক প্রগতি বজায় থাকবে। ... বিশদ
কী সেই নয়া প্রযুক্তি?
কলকাতায় অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ন্যাচারাল ফাইবার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (নিনফেট) বিজ্ঞানীরা পাট পচানোর সহায়ক হিসেবে একটি পাউডার ফর্মুলেশন তৈরি করেছেন। নাম দিয়েছেন ‘নিনফেট সাথী’। পাটের জাগের উপর ওই পাউডার ছড়িয়ে দিলে কম সময়ে ভালো মানের তন্তু পাওয়া সম্ভব বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই পাউডার আসলে জৈব ও অজৈব পদার্থের মিশ্রণ। যা পাট পচানোর কাজে সাহায্যকারী জীবাণুদের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ওই পাউডারের মধ্যে কোনও জীবাণু থাকে না। ফলে আর্দ্রতা ছাড়া ওই পাউডার দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত অনায়াসেই রেখে দেওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে পাট পচানোর জন্য কাদা বা কলাগাছের ভেলার প্রয়োজন হয় না। জলাশয়ে পাটের বান্ডিলের প্রতিটি স্তরের উপর ওই পাউডার ছড়িয়ে দিলেই দ্রুত পচন ক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। পাটগাছের গোড়ার দিকে ছাল মোটা হয়। ফলে সেদিকে একটু বেশি পরিমাণে পাউডার দিতে হবে। জলাশয়ে জলের গভীরতা অনুযায়ী পাটের বান্ডিলের দু-তিনটি স্তর পর পর সাজিয়ে পাট জাগ দেওয়া যেতে পারে। মোটামুটিভাবে এক বিঘা জমির পাট পচাতে ৫-৬ কেজি নিনফেট সাথী পাউডারের প্রয়োজন হয়। প্রতিটি প্যাকেটে এক কেজি করে পাউডার থাকে।
কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলাশয়ে জলের মধ্যে পাটের বান্ডিল ডোবাতে পাথর কিংবা বালির বস্তা চাপা দেওয়া যেতে পারে। তবে ৬ ইঞ্চির বেশি যেন পাট না ডোবে। নিনফেট সাথী পাউডার ব্যবহার করে ১০-১২ দিনে পাট পচানো সম্ভব বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। এই পদ্ধতির অন্যতম সুবিধা, প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় পাট পচাতে ৮-১০ দিন সময় কম লাগে। পাটকাঠির গায়ে যে ফেঁসো লেগে থাকে, এই পদ্ধতিতে তা অনেক কম হয়। ফলে বিঘায় অন্তত ৩০-৫০ কেজি বেশি পাট পাওয়া যায়। পাটের গ্রেড উন্নত হয়। যেহেতু তুলনামূলক কম দিনে পাট পচানো যায়, ফলে একই জলাশয়ে অনেক বেশি পাট জাগ দেওয়া সম্ভব হয়। পাউডার ব্যবহার করে পাট পচানোর আরও একটি সুবিধা, সেই জলাশয়ে পরবর্তীতে পাট পচালে পাউডারের পরিমাণ কম লাগে। পাউডার জলের কোনও ক্ষতি করে না। ফলে পাট পচানো হয়ে গেলে সেই জল অনায়াসেই চাষের জমিতে দেওয়া যায়। কিংবা ওই জলে মাছ চাষ করা যায়।
বারাকপুরে অবস্থিত সেন্ট্রাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর জুট অ্যান্ড অ্যালায়েড ফাইবার্স (ক্রাইজাফ)-এর নির্দেশক ড. গৌরাঙ্গ কর জানিয়েছেন, তাঁদের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ‘ক্রাইজাফ সোনা’ মিশ্রণ ব্যবহারে অনেক কম সময়ে পাট পচানো সম্ভব। এমনকী এতে তন্তুর মান ১ থেকে ২ গ্রেড পর্যন্ত উন্নত হয়। গত তিন বছরে পাট উৎপাদক কয়েকটি রাজ্যে তিন লক্ষ ৬০ হাজার কৃষকের কাছে ক্রাইজাফ সোনা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তাঁর দাবি, এটি ব্যবহারে পাট পচানোর সময় অন্তত সাতদিন কমে যায়। সেইসঙ্গে ৭৫ শতাংশ জল কম লাগে পাট জাগ দিতে। গৌরাঙ্গবাবু জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক গবেষণায় ক্রাইজাফের বিজ্ঞানীরা পাট পচানোর ব্যাকটেরিয়ার জিনোম সিকোয়েন্সগুলি ডিকোড করেছেন। তাতে দেখা গিয়েছে, পাট পচানোর ব্যাকটেরিয়াগুলি তন্তুর পক্ষে ক্ষতিকর নয়। বিষাক্ত নয় ব্যাকটেরিয়ার স্রে েনগুলিও। ফলে ব্যাকটেরিয়া যুক্ত পাট পচানোর জল চাষের কাজে ব্যবহার করা যেতেই পারে। ক্রাইজাফ সোনায় এই ব্যাকটেরিয়া রয়েছে।