কর্মপ্রার্থীদের বিভিন্ন দিক থেকে শুভ যোগাযোগ ঘটবে। ব্যবসায় যুক্ত হলে ভালোই হবে। প্রেম-প্রণয়ে নতুনত্ব আছে। ... বিশদ
কম খরচে ভালোভাবে ধানের বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটাতে নিজস্ব প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে বিশেষ জার্মিনেটর তৈরি করেছেন রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা সম্পদরঞ্জন পাত্র। থার্মোকলের বাক্স দিয়ে কৃষক নিজেই ওই জার্মিনেটর বানিয়ে নিতে পারবেন। খরচ পড়বে মাত্র চারশো টাকা। ওই জার্মিনেটরের মাধ্যমে বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটিয়ে সুধা পদ্ধতিতে ধান চাষ করছেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলার প্রগতিশীল কৃষকরা। তাঁরা ভালোই সুফল পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। কৃষি দপ্তরের তরফে জেলায় জেলায় এই প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে চাষির জমিতে প্রদর্শনক্ষেত্রও তৈরি করা হয়েছে।
রাজ্য কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গের নদীয়া, হুগলি, বর্ধমান, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুরের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার জেলায় এই পদ্ধতির দারুণ প্রসার ঘটেছে। কীভাবে ‘সম্পদ সিড জার্মিনেটর’ বানাতে হবে, তা নিয়ে চাষিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন কৃষি আধিকারিকরা। বেশকিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠীও এই জার্মিনেটর তৈরি করে কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। বাজারে বিক্রি হওয়া কোনও সংস্থার একটি জার্মিনেটরের দাম যেখানে অন্তত ১০ হাজার টাকা, সেখানে চারশো টাকা খরচে কৃষক ওই জার্মিনেটর তৈরি করে নিতে পেরে খুশি।
রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা সম্পদরঞ্জন পাত্র জানিয়েছেন, এই জার্মিনেটরে একসঙ্গে ৩-৪কেজি বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটানো সম্ভব। ওই পরিমাণ বীজ দিয়ে সুধা পদ্ধতিতে এক একর জমিতে ধান চাষ করা যাবে। তিনদিনের মধ্যে একটি চক্র শেষ হয়ে যাওয়ায় একই জার্মিনেটর ব্যবহার করে ফের নতুন বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটানো সম্ভব হবে। ২৫ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে বোরো ধানের বীজতলা তৈরির সুপারিশ করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে একটি জার্মিনেটর প্রায় ৭-৮বার ব্যবহার করা যেতে পারে।
কীভাবে ব্যবহার করতে হবে এই বিশেষ জার্মিনেটর? হুগলির হরিপালের সহকারি কৃষি অধিকর্তা অরূপ পাঠক জানিয়েছেন, এক বিঘা জমিতে ধান চাষের জন্য ১২০০ গ্রাম বীজ নিতে হবে। এক লিটার জলে ১৮০ গ্রাম লবন দিয়ে সেই জলে বীজ ভিজিয়ে প্রথমে শোধন করতে হবে। এতে চিটে ধান বাদ চলে যাবে। এবার সাধারণ জলে ওই বীজ ধুয়ে নিতে হবে। এর পর জার্মিনেটরে ১২লিটার জলে (তিনভাগ ঠান্ডা ও একভাগ গরম জল) জিঙ্ক সালফেট যোগ করে বীজ জাঁক দিতে হবে। ৩০ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এর ফলে বীজের মধ্যে জল শোষিত হবে। এতে ভালো হবে বীজের অঙ্কুরোদগম। জিঙ্ক সালফেট যোগ করায় অঙ্কুরিত বীজ সুস্থ-সবল হবে, যা পরবর্তীতে ভালো ফলন পাওয়ার পথ সুগম করবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৮লিটার জলে (দু’ভাগ ঠান্ডা জল ও একভাগ গরম জল) ওই বীজ আরও ১৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতেই বীজ অঙ্কুরিত হয়ে যাবে।
অঙ্কুরিত বীজ ২০ বর্গ মিটার জমিতে তৈরি বীজতলায় ছড়িতে দিতে হবে। বীজতলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সারের পাশাপাশি ফসফেট, জিঙ্ক ও বোরন দেওয়া দরকার বলে জানিয়েছেন কৃষি আধিকারিকরা। বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার পর দেড় ফুট উঁচু করে পলিথিনের চাদরে গোটা বীজতলা ঢেকে দিতে হবে। ১৫দিন পুরোপুরি ঢাকা অবস্থায় রেখে দিতে হবে বীজতলাকে। এর পর সকালের দিকে পলিথিনের চাদর সরিয়ে সন্ধ্যায় আবার তা ঢেকে দিতে হবে। পর পর তিনদিন এভাবে চালানোর পর চারা বাইরের পরিবেশের তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে। এই প্রক্রিয়ায় ঠান্ডায় বীজতলা হলুদ হয়ে যাওয়া অর্থাৎ কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। ২১-২৫দিনে বীজতলা তৈরি হয়ে গেলে ৮ ইঞ্চি বাই ৮ ইঞ্চি দূরত্বে একটি করে চারা মূল জমিতে বসাতে হবে।
প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় সুধা পদ্ধতিতে একদিকে যেমন অনেক কম বীজ লাগে, তেমনই বীজতলার জন্য জমির পরিমাণও কম প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া বীজতলার জন্য কৃষককে তেমনভাবে নজরদারিও চালাতে হয় না। কৃষি আধিকারিকরা বলছেন, এই প্রযুক্তি যেমন কৃষক-বান্ধব, তেমনই প্রতিকূল পরিস্থিতি সহনশীল।
রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা বলেন, সাধারণ পদ্ধতিতে বোরো চাষ করলে ধান পাকতে মে-জুন মাস হয়ে যায়। ফলে সেসয় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অনেক বেশি পরিমাণ জলের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া ওইসময় শিলাবৃষ্টিতে ফসল নষ্টেরও আশঙ্কা থাকে। কিন্তু সুধা পদ্ধতিতে এপ্রিলের মধ্যে ফসল কাটা হয়ে যায়। ফলে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কম থাকে। এই পদ্ধতিতে ধানে চিটের পরিমাণও কমে যায়। ফলে লোকসানের আশঙ্কা কমে।