সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি, ২০ ডিসেম্বর: নরেন্দ্র মোদির ভাষণ মানেই দেশবাসী লাইভ টেলিকাস্টে দেখে এসেছে কিছু সময় পরই ‘মোদি’ ‘মোদি’ গর্জনে ময়দান কম্পমান এবং উচ্চকিত করতালি। তা সে গুজরাত হোক কিংবা ঝাড়খণ্ড, বারাণসী হোক কিংবা নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার। আবার বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকই হোক কিংবা হাইভোল্টেজ নির্বাচনী প্রচার। তিনিও প্রায় প্রতিটি বাক্যেই উচ্ছ্বসিত করতালি, সরব গর্জনে সাধুবাদ এবং বন্দনার স্লোগানধ্বনি শুনেই অভ্যস্ত। কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর এই চেনা দৃশ্যে ব্যতিক্রম ঘটল শুক্রবার। আর সেই কারণেই সামান্য হলেও যেন বিরক্ত হলেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের অন্যতম বৃহৎ বণিকসভা অ্যাসোচেমের বার্ষিক সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে আজ প্রথম মোদি অর্থনীতি নিয়ে মুখ খুললেন। আর্থিক মন্দার তত্ত্বকে উড়িয়ে দিয়ে লাগাতার তথ্য পরিসংখান দিয়ে দেখালেন আর্থিক মন্দা নয়, বরং ইউপিএ সরকারের আমলে ডুবতে বসা অর্থনীতিকে ভরাডুবি থেকে টেনে তুলেছেন তিনি ও তাঁর সরকার। এই বক্তৃতায় একের পর এক তথ্য তুলে ধরে তিনি যখন সরকারের সাফল্য প্রচার করছিলেন, তখন উপস্থিত শিল্পমহলের নিস্পৃহ এবং দুর্বল প্রতিক্রিয়া তাঁর ভালো লাগেনি। তাই শিল্পমহলের সম্মিলিত মঞ্চ দেশের প্রেস্টিজিয়াস বণিকসভা অ্যাসোচেমের সভায় দফায় দফায় মোদি বলে ফেললেন, ‘কী হল, করতালির শব্দ এত কম কেন? আর একটু বেশি হাততালি আশা করেছিলাম।’ একটা সময় রীতিমতো মৃদু ক্ষোভের সঙ্গেই অসন্তুষ্ট মোদি বলেন, ‘আপনারা মনে হয় এখনও অতীতের তথ্য পরিসংখ্যান মনে রেখে দিয়েছেন। তাই ঠিক বুঝতে পারছেন না আমি কী বলছি। ভালো করে মন দিয়ে শুনলে আরও জোরে হাততালি দেবেন।’ প্রধানমন্ত্রীর কথায় এরপর অবশ্য আর করতালির অভাব অনুভূত হয়নি।
মোদির আজকের ভাষণে অর্থনীতিতে অন্ধকারের কোনও ছায়াই পাওয়া যায়নি। তিনি বরং দেশবাসীকে বলেছেন, ‘অর্থনীতি যথেষ্ট চাঙ্গা হচ্ছে। আসুন, নির্ভয়ে হাত খুলে খরচ করুন।’ তিনি বলেছেন, ‘ইউপিএ সরকারের আমলে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমরাই তো ২০১৪ সালে এসে সেই ভরাডুবি থেকে বাঁচিয়েছি অর্থব্যবস্থাকে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অর্থনীতিকে এমন একটা স্থায়ী শক্তিশালী ভিত্তি দিচ্ছি যে, ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির স্বপ্ন বেশি দূরে নেই।’ অর্থনীতির মন্দা নিয়ে দেশজুড়ে যখন চরম এক অনিশ্চয়তা চলছে এবং জিডিপি বৃদ্ধির হার সহ তাবৎ অর্থনীতি সংক্রান্ত সূচক নিম্নগামী, তখন প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসবাণী, ‘ইউপিএ সরকারের আমলে জিডিপি বৃদ্ধির হার সাড়ে ৩ শতাংশে নেমে গিয়েছিল।’ বণিকসভাকে উৎসাহ দিতে তিনি বলেন, ‘একমাত্র আমাদের শাসনকালে কর্পোরেট ট্যাক্স সর্বনিম্ন। এরকম সর্বক্ষেত্রের সফল সরকার আসেনি। আমরা কৃষক বন্ধু, শ্রমিক বন্ধু, কর্পোরেটের বন্ধু আবার ব্যবসায়ীদেরও সাহায্যকারী।’