বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
কর্মদিবস সৃষ্টির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে একাধিক তথ্য উঠে আসছে। একদিকে, যেমন চলতি বছরে এই প্রকল্পে একাধিক কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তেমনই হাজিরা দিলেই যে কর্মদিবস হবে সেই রীতি ভাঙা হয়েছে। যার জেরে অনেকক্ষেত্রেই শ্রমিক পেতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া কিছুক্ষেত্রে এই প্রকল্পে নিয়মিত টাকা না আসাকেও দায়ী করা হচ্ছে। সর্বোপরি জনপ্রতিনিধিদের এলাকায় সক্রিয়তার অভাব এবং দাপটের ঘাটতিতে কাজ তুলতে সমস্যা হচ্ছে বলে বহু প্রশাসনিক কর্তার মত।
১০০দিনের প্রকল্পেরও রাজ্যের পারফরমেন্স অন্য সব রাজ্যকে একাধিকবার টেক্কা দিয়েছে। বহু ক্ষেত্রে ভিন্ন রাজ্যের সচিব পর্যায়ের প্রতিনিধি দল এখানে এসে কীভাবে এই প্রকল্পে কাজ হচ্ছে তা দেখে গিয়েছে। তাই ১০০দিনের প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে বাংলা যথেষ্টই গর্বিত। তবে চলতি অর্থবর্ষে ১০০দিনের কাজের কর্মদিবস সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে ঠিক যেন উল্টোটাই দেখা গিয়েছে। কর্মদিবস পূরণের ধারে কাছে নেই রাজ্য। শেষ দু’মাসে তা পূরণ করাও কার্যত অসম্ভব বলেই অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
২২ জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষে রাজ্যে কর্মদিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩০কোটি ১৩লক্ষ ৮৯হাজার ৫৩১। তার জায়গায় কর্মদিবস সৃষ্টি হয়েছে ১৫কোটি ৫১লক্ষ ৪৬হাজার ৩৩৭। যা শতাংশের হিসেবে ৫১.৪৮। কয়েকটি জেলার অবস্থা আরও করুণ। পূর্ব বর্ধমানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২কোটি ৬৫লক্ষ ২৯ হাজার ১২৫, হয়েছে ১কোটি ৪৯হাজার ৫৬৩। মাত্র ৩৭.৮৮শতাংশ। ছোট লক্ষ্যমাত্রা থাকা পশ্চিম বর্ধমানে জেলার অবস্থাও খারাপ। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ লক্ষ ৭২হাজার কর্মদিবস সৃষ্টির, হয়েছে ১৫লক্ষ ৫২হাজার ২৯২।
১০০দিনের কাজে ব্যক্তিগত জমিতে পুকুর কাটা, ড্রেন পরিচ্ছন্ন করা, মরামের রাস্তা করা সহ একাধিক কাজের উপর চলতি অর্থবর্ষে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে অনেক জেলায় লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছে পৌঁছরে পারেনি বলে জানা গিয়েছে। তবে পশ্চিম বর্ধমান জেলার সমস্যা আরও রয়েছে, একদিকে এখানে খাস জমির অভাব রয়েছে। তার উপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থ পেতে দেরি হওয়ায় শ্রমিকরা এই সব কাজে আসতে চাইছেন না। তাছাড়া এলাকার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণ কমেছে। তাই নেতৃত্ব দিয়ে কাজ করানোর অভাব প্রকট হচ্ছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার ক্ষেত্রে শতাংশের হিসেবে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে কাঁকসা, দুর্গাপুর, ফরিদপুর ও অণ্ডাল ব্লক। এখানে লক্ষ্যমাত্রার ৪০শতাংশও কাজ হয়নি।
এছাড়া নদীয়া জেলায় কর্মদিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা ১কোটি ৩২ লক্ষ ৩৪ হাজার ১৬৭ থাকলেও হয়েছে মাত্র ৩৫লক্ষ ১৬হাজার ৩০৯। শতাংশের হিসেবে যা ২৬.৫৭, হুগলি জেলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২কোটি ৭লক্ষ ৯৬হাজার ৭২৫, সেখানে হয়েছে ৫৬ লক্ষ ৭৩ হাজার৯৮৬। যা ২৭.২৮শতাংশ। এছাড়াও দক্ষিণ ২৪পরগনা, হাওড়া, বীরভূম, আলিপুরদুয়ারের মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলা লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ করতে পারেনি।
তবে একাজে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে মালদহ জেলা। তাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১কোটি ৪লক্ষ ২২হাজার ৩১২, হয়েছে ৮৬লক্ষ ৮৮ হাজার ৩৮। ৮৩.৩৬ শতাংশ, বাঁকুড়া জেলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১কোটি ২৪লক্ষ ৭৪হাজার ৯৩৮, হয়েছে ৮৬ লক্ষ ৮৪হাজার ৫৪। শতাংশের বিচারে যা ৬৯.৬১। দক্ষিণ দিনাজপুরেরও এই কাজে ধারাবাহিকতা রয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০লক্ষ ৯৮হাজার ২৪০, হয়েছে ২৮লক্ষ২৩ হাজার ৮২৩। হাতে গোনা কয়েকটি জেলার অবস্থা ভালো থাকলেও বেশিরভাগ জেলার খারাপ অবস্থার জেরে এই কাজে গতি আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রশাসন। ঘন ঘন রাজ্য প্রশাসন জেলা প্রশাসনগুলির সঙ্গে এনিয়ে বৈঠক করছে। জেলা প্রশাসনও ব্লক প্রশাসনের উপর কাজের গতি আনার জন্য চাপ বাড়াচ্ছে।