বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
প্রসঙ্গত, একটি সংস্থার উদ্যোগ ডিজিটাল লিটারেসি প্রোগ্রামের মাধ্যমে মহিলাদের স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার, ইন্টারনেট সার্ফিং সহ নানা ব্যবহার শেখাচ্ছেন। এই মুহূর্তে যাঁদের মোবাইল ব্যবহার শেখানো হয়েছে তাঁদের নাম, বয়স, আধার কার্ডের জেরক্স, ছবি সহ নানা তথ্য সংগ্রহ করছেন তাঁরা। আর এতেই একের পর এক গ্রামে এনআরসি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে ইন্টারনেট সাথীদের। আতঙ্কে ঘরছাড়া হতে হচ্ছে তাঁদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে এনআরসি, সিএএ, এনপিআর নিয়ে কোনও কাজ হচ্ছে না বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে বাধ্য হয়েছেন নলহাটি-১ ও মুরারই-২ ব্লকের বিডিও। গুজবে কান না দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু, এরপরও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। ফলে, বিক্ষোভ অব্যাহত। কিন্তু, বুধবার মল্লারপুরের গৌরবাজার গ্রামের বিক্ষোভ অন্যমাত্রা পেয়েছে। সেখানে এক ইন্টারনেট সাথীর বাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে দেয় গ্রামবাসীরা।
গ্রাম সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের চুমকি খাতুন ইন্টারনেট সাথীর কাজের জন্য তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ নেওয়া মহিলাদের ছবি তুলছিলেন। আর এতেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এনআরসি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসীরা ওই কর্মীর বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভের পাশাপাশি ইট-পাটকেলও ছোঁড়ে। গ্রামবাসীরা এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে যে প্রথমে পুলিস ঢুকতেই পারেনি। পরে গ্রামে এসে ওই মহিলাকর্মীকে উদ্ধার করতে গেলে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় পুলিসকে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে পুলিসের ধস্তাধস্তি চলে। কম সংখ্যক থাকায় পুলিস পিছু হটে ফিরে আসে। পরে রাতে বিশাল পুলিসবাহিনী গিয়ে ওই কর্মী ও তাঁর বাবা-মাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
এদিন সকালে ফের ওই কর্মীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসীরা। তারা গ্রামের মোড়ে সাঁইথিয়া-বহরমপুর রাস্তার উপর ঝাঁটা, লাঠি ও ‘নো এনআরসি’ প্লাকার্ড হাতে টায়ার ও খড় জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। খবর পেয়ে পুলিস এসেও বিক্ষোভ তুলতে পারেনি। পরে সেই আগুন নিয়ে এসে ওই কর্মীর টিনের চালাবাড়িতে কেরোসেনি ঢেলে ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনে একটি বাইক সহ বেশকিছু আসবাবপত্র পুড়ে যায়।
গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য মোহন শেখ বলেন, ওই কর্মী মহিলাদের মোবাইল ব্যবহার শেখানোর নাম করে তথ্য সহ ছবি এবং সরকারি সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে ভাঁওতাবাজি করে টাকা তুলছেন। আমি মঙ্গলবারই বিষয়টি বিধায়কের নজরে নিয়ে এলে উনি এই সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি। এরপর গ্রামে ফিরে এসে দেখি ওই কর্মীর বাড়ির সামনে বহু মানুষ প্রতারকের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। পরে এসডিপিওর নেতৃত্বে পুলিস আসে। তদন্ত করে কী কারণে তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে তা জানাবে বলে আশ্বাস দিলে ওই কর্মী ও তাঁর বাবা-মাকে পুলিসের হাতে তুলে দিই। তিনি বলেন, আমরা এনআরসি, সিএএ বরদাস্ত করব না। তবে, এদিন ওই কর্মীর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া অন্যায় হয়েছে। তবে, মানুষজনকে বোঝানোর পর দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
এলাকার তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের কো-মেন্টর ধীরেন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এনআরসির বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে কোনও কিছু সার্ভে করতে হলে তা নিয়ে যথেষ্ট বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। ইন্টারনেট সাথীর বিষয়টি নিয়ে জনমত গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিল প্রশাসনের। আমার মনে হয়, সেই কাজটা ঠিকমতো হয়নি।
এদিকে অনেকেই মনে করছেন, এখনই জেলা প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই আতঙ্ক কাটিয়ে না তুললে তিরের গতিতে অন্যত্র বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ শুরু হয়ে যাবে।
জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বলেন, এই ইন্টারনেট সাথীর আতঙ্ক তো জেলার সব জায়গায় হয়নি। তাই জেলাজুড়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে মানুষকে ভয় পাইয়ে দেব কেন। তাই যেখানে যেখানে এরকম সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে সেখানে বিজ্ঞপ্তি জারির পাশাপাশি মাইকিং ও লিফলেট ছড়িয়ে প্রচার করার জন্য বিডিও এবং এসডিওদের বলা হয়েছে।