বিদ্যার্থীদের কোনও বৃত্তিমূলক পরীক্ষায় ভালো ফল করবে। বিবাহ প্রার্থীদের এখন ভালো সময়। ভাই ও বোনদের ... বিশদ
শুক্রবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাস ভাড়া বাড়াতে পারছি না। তবে ১ জুলাই থেকে পরবর্তী তিন মাস ছ’হাজার বাস-মিনিবাস মালিকদের প্রত্যেককে ১৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য করা হবে। এর জন্য রাজ্যের খরচ হবে ২৭ কোটি টাকা।’ পাশাপাশি, বাসকর্মীদের স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আনার কথাও ঘোষণা করেছেন মমতা। তবে মালিক সংগঠনগুলির বক্তব্য, আর্থিক প্যাকেজে সাময়িক সমস্যা মেটানো যাবে। কিন্তু প্রকৃত সমস্যা মেটাতে ভাড়া বৃদ্ধি জরুরি। পাশাপাশি তাঁদের বক্তব্য, লকডাউনের আগে গোটা রাজ্যে ২৭ হাজার বাস চলত। প্রত্যেকেই যাতে আর্থিক সুবিধা পান, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
তবে নিত্যযাত্রীদের জন্য স্বস্তির খবর অবশ্যই মেট্রো। রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনায় করার জন্য ইতিমধ্যেই মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বলেন,‘সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মানলে ১ জুলাই থেকে মেট্রোও চলতে পারে। আমার আপত্তি নেই।’ তবে মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, মেট্রো চালুর আগে প্রত্যেকটি রেক এবং আসন স্যানিটাইজ করতে হবে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত চাপিয়েছেন তিনি—আসন সংখ্যার একটিরও বেশি টিকিট যাতে বিক্রি না করা যায়, তার চেষ্টা করতে হবে রেলকে। যদিও মেট্রো রেল কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, কতগুলি টোকেন বিক্রি হল, তার ভিত্তিতে যাত্রী সংখ্যা বিচার করা কঠিন। প্রথমত, কোনও স্টেশনে যত জন যাত্রীকে টোকেন দেওয়া হল, তাঁরা যে প্রত্যেকেই পরবর্তী ট্রেনে উঠবেন এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। দ্বিতীয়ত, টোকেন ছাড়া বহু যাত্রী স্মার্ট কার্ডও ব্যবহার করেন। তৃতীয়ত, বর্তমানে যে ট্রেনগুলি চলছে তাদের কয়েকটি ছাড়া কোনও ট্রেনের ভিতর সিসিটিভি নেই।
কলকাতায় প্রায় ৬ হাজার বেসরকারি বাস চলে। আনলক পর্বে বহু সাধ্যসাধনা করেও আড়াই হাজারের বেশি বাস রাস্তায় নামাতে পারেনি রাজ্য সরকার। যুক্তি, ভাড়ায় পোষাচ্ছে না। কম যাত্রী এবং বর্ধিত তেলের দামের জন্য ক্ষতি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর আজকের প্যাকেজের পর আশা করা যায়, এবার বেসরকারি বাস রাস্তায় নামবে। এবং একইসঙ্গে মেট্রো ও বাস রেগুলার হয়ে গেলে নাকাল হতে হবে না নিত্যযাত্রীদের। লকডাউন পরিস্থিতিতেও জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে রাজ্যকে একটা নিয়মে ফেলে দিয়েছেন মমতা। এদিন তিনি আরও ঘোষণা করেছেন, রাত ন’টার বদলে এবার নাইট কার্ফু হবে রাত ১০টা থেকে সকাল ৫টা পর্যন্ত।
মেট্রোয় ছাড়পত্র দিলেও অন্তর্দেশীয় বিমান পরিষেবা নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি মমতা। তাঁর অভিযোগ, অন্তর্দেশীয় উড়ানেও কোনও নিয়মবিধি মানা হচ্ছে না। ফলে করোনা ছড়াচ্ছে। মুম্বই, দিল্লির মতো হটস্পট এলাকা থেকে বিমান না চালানোরই দাবি তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি তোপ দেগেছেন তিনি স্পেশাল ট্রেন নিয়েও। বলেছেন, ‘হটস্পট এলাকা থেকে রোজ ১০টা করে ট্রেন আসছে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে করোনা রোগী ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরকম লকডাউনের মানেটা কী?’ তবে শুধু কেন্দ্র নয়, লকডাউন নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলগুলিও এদিন ছিল মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায়। তিনি বলেন, ‘কয়েকটি রাজনৈতিক দল লকডাউন আইন মানছে না। আইনও ভাঙবেন, আবার বলবেন এফআইআর কেন হচ্ছে! আইন নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে। ভাষা সন্ত্রাস চলছে। মানুষ এসব ভালোভাবে নিচ্ছে না। এই কঠিন সময়ে ভাঙচুরের রাজনীতি করবে না।’
মহামারীর মধ্যেও যেখানে রাজ্য স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছে, সেখানে মানবিকতাই বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। তারই প্রমাণ রেখে মমতা আরও একবার ফি না বাড়ানোর জন্য বেসরকারি স্কুলগুলিকে অনুরোধ করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্য ৫৩ হাজার কোটি টাকা দেয়নি। তা সত্ত্বেও তিনি শুধু মানবিকতার খাতিরেই থমকে দেননি সামাজিক প্রকল্প। এরপরও কেন্দ্রকে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি ছিল একটাই, ‘বাংলা কিন্তু এই বঞ্চনা মেনে নেবে না।’ সাংবাদিক বৈঠকে মমতা। নিজস্ব চিত্র