বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে আজকের দিনটা শুভ। কর্মক্ষেত্রে আজ শুভ। শরীর-স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। লটারি, শেয়ার ... বিশদ
পুলিসের বক্তব্য অনুযায়ী, খোরপোশ দেওয়ার দায় থেকে মুক্তি পেতে তিনি স্ত্রীকে খুন করেন। ২০০৭ সালে রিমি বিবি’র সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়িতে রিমি অত্যাচারের শিকার হয়ে বিতাড়িত হন। ফিরে যান মা মোলেজান বেওয়ার কাছে। খোরপোশ পাওয়ার জন্য মামলা ঠোকেন। খোরপোশ দিতে ব্যর্থ পিন্টু জেলে যায়। কিন্তু রিমি নিজের গয়না বিক্রি করে পিন্টুকে জেল থেকে বার করে আনেন। এরপর রিমি’র বাড়িতে মাঝেসাঝেই যেতে থাকে পিন্টু। রিমি গর্ভবতী হন। ২০১০ সালের ৭ মার্চ রিমিকে পিন্টু ঠাকুমার বাড়িতে নিয়ে যান। রাতে রিমি বাড়ি ফেরেননি। পরের দিন সব্জিপাড়া গ্রামের লাটের মাঠে রিমির মৃতদেহ মেলে।
২০১০ সালের ৮ মার্চ ইসলামপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। শুধুমাত্র ভারতীয় ফৌজদারি আইনের ৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়। সেইমতো চার্জ গঠিত হলে ১৭ জন সাক্ষীর বয়ানকে ভিত্তি করে ২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট মুর্শিদাবাদের লালবাগ আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন কারাবাস ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে। এই রায় পিন্টু কারান্তরাল থেকেই চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর আইনজীবী মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বেঞ্চকে জানান, এফআইআর-এ যে অভিযোগ ছিল, তা নিম্ন আদালতের শুনানির সময় বদলে গিয়েছে। ঘটনার দিন পিন্টুই রিমিকে ঠাকুমার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন, এই তত্ত্ব বিশ্বাসযোগ্য নয়। যে ছুরি দিয়ে রিমিকে আঘাত করার অভিযোগ ওঠে এবং যেসব রক্তমাখা জামাকাপড় উদ্ধার করা হয়েছিল, সেগুলির কোনও ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়নি। ফলে পারিপার্শ্বিক প্রমাণের তত্ত্ব সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত নয়। যদিও পুলিসের তরফে দাবি করা হয়, রিমির অভিযোগের জেরেই তিনি প্রথম কারাবাসী হন। পরে সেই রিমি’র কৃপায় মুক্তি পেলেও ভয়টা ছিলই। সেখান থেকে মুক্তি পেতেই তিনি খুন করেছেন। তাছাড়া তাঁরই ঠাকুমার বাড়ির বাথরুম থেকে ছুরি ও রক্তমাখা জামাকাপড় মিলেছিল।
মোলেজান বেওয়া ও আরও দুই সাক্ষীর বক্তব্য ছিল, খোরপোশ দেওয়ার দায় এড়াতেই রিমিকে খুন করেন পিন্টু। পুলিসও তাই দাবি করেছে। এই প্রসঙ্গে বেঞ্চের অভিমত, খোরপোশের দাবি করা কোনও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা সেই অর্থ না পেয়ে নিজের গয়না বিক্রি করে আসামিকে কারাগার থেকে মুক্ত করলেন, এই তত্ত্ব অভাবনীয়। মুক্তি পাওয়ার পর আসামি স্ত্রীকে অবহেলা করতেন, সেই প্রমাণও নেই। তার চেয়েও বড় কথা, স্রেফ খোরপোশ দিতে নারাজ বলেই গর্ভস্থ সন্তান সহ স্ত্রীকে খুন করার তত্ত্বটিও অভাবনীয়। এই তত্ত্বগুলির কোনওটিই নিরপেক্ষ কোনও সাক্ষীর বয়ানে সমর্থিত নয়। পিন্টু ও রিমিকে শেষবার একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল, এই দাবিও জোরালো নয়।
অভিযুক্তের বয়ানের ভিত্তিতে ছুরি ও রক্তমাখা জামাকাপড় উদ্ধার হওয়ার দাবি করেছিলেন তদন্তকারী পুলিস অফিসার। অথচ, সেই বয়ান আদালতে পেশ হয়নি। ঘটনার পর আসামি তার ঠাকুমার বাড়ি গিয়েছিলেন, তারও কোনও সাক্ষ্য নেই। গর্ভস্থ ভ্রূণটির ডিএনএ পরীক্ষা হয়নি। ফলে পিন্টুই ওই ভ্রূণের পিতা, তাও প্রমাণিত নয়। অথচ, তা জানা জরুরি ছিল। কারণ, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী’র মতো থাকতেন না। যদি তাঁদের সম্পর্ক ভালোই ছিল, তাহলে খুনটা হল কেন?