সামাজিক কল্যাণকর্মে সামাজিক স্বীকৃতি আর সন্মান। গৃহ পরিবেশে চাপ। আর্থক প্রগতি বজায় থাকবে। ... বিশদ
আদালত চত্বরে টেবিল-চেয়ার পেতে চা বিক্রি করেন অনেকে। একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন সমীরবাবু। তখনই মেয়েকে নিয়ে ঢুকলেন বাসন্তী। বাবাকে দূর থেকে দেখতে পেয়েছিল মেয়ে। আচমকা মায়ের হাত ছাড়িয়ে তির বেগে দৌড় বাবার দিকে। বহুদিন বাদে মেয়েকে দেখে আবেগাপ্লুত বাবা। চায়ের ভাঁড় ছুঁড়ে ফেলে দাঁড়িয়ে ওঠেন। দু’কদম এগিয়ে মেয়েকে কোলে তুলে চুমু খান। বাবার গলা জড়িয়ে মেয়ের আবদার, ‘রং-পেন্সিল কিনে দাও।’ বাসন্তীদেবী একটু দূরে একটি দোকানে বসে রইলেন। মেয়েকে কোলে চাপিয়ে বাবা বেরলেন রঙের দোকানের খোঁজে। তবে ওই চত্বরে রং-পেন্সিলের দোকান খুঁজে পেতে মেলেনি। ফলে বাবার সঙ্গে মেয়ের রফা হল, কেক-বিস্কুট-লজেন্স ইত্যাদির। একটি দোকান থেকে সে সব কেনা হয়। খুশিতে মেয়ের হাসি ধরে না। বহুদিন বাদে মেয়েকে কাছে পেয়ে বাবাও খানিক বাড়তি জীবনশক্তি সঞ্চয় করলেন। আদালত চত্বরে অনেকে বাবা-মেয়ের এই অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি প্রত্যক্ষ করে বললেন, বাচ্চাটার জন্য অন্তত ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেওয়া উচিত। কিছুদিন আগে নিজেদের শিশু সন্তানের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আলিপুর আদালতে এসে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন স্বামী-স্ত্রী। সে ঘটনাটা এখনও অনেকের মনে রয়েছে। সেটির উদাহরণও টানছিলেন অনেকে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দম্পতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা থানা এলাকার বাসিন্দা। বিভিন্ন কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হতো না। ২০২১ সালে বাসন্তীদেবী শিশুকন্যাকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে আসেন। ২০২২ সালে আলিপুর আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। খোরপোশের দাবি জানান। সেই মামলায় আদালত মাসিক পাঁচ হাজার টাকা প্রতি মাসে দিতে বলে সমীরকে। মামলাটি চলছে। আদালতের অন্তবর্তী নির্দেশ অনুযায়ী বাসন্তীদেবীকে পাঁচ হাজার টাকা করে দিচ্ছেন সমীরবাবু। মূল মামলাটি এখনও বিচারাধীন। এখন বাড়িতে ছোটখাট হাতের কাজ করেন। সমীর একটি ছোট সংস্থায় কর্মরত।
কেক-বিস্কুট পাওয়ার পর আহ্লাদে আটখানা হয়ে মেয়ে মায়ের কাছে আসে। মায়ের ব্যাগে সদ্য পাওয়া সম্পতিগুলি গচ্ছিত রাখে। একটু দূরে নিজের আইনজীবীর হাত দিয়ে স্ত্রীকে টাকা পাঠান সমীর। তারপর কোনওদিকে না তাকিয়ে প্রায় দৌড়ে পুলিস কোর্টের পিছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে যান। ‘সব কপাল। সব কপালের দোষ। না হলে এমন হয় না’- যেতে যেতে বললেন সমীরবাবু। মনখারাপের ভারে ন্যুব্জ ৪৪ বছরের মানুষটাকে তখন আরও বয়স্ক লাগছিল। কার্টুন: সুব্রত মাজী