কর্মরতদের সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা ও ব্যবহারে সংযত থাকা দরকার। ... বিশদ
হাওড়া থেকে রাতে পশ্চিম ভারতগামী ট্রেনে চড়ে ভোরবেলা পৌঁছন চক্রধরপুর স্টেশনে। সূর্যদেব পুব আকাশে উঁকি দিলে স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে কচুরি-জিলিপি-চা দিয়ে ভরপেট প্রাতঃরাশ সেরে নিন। একটা গাড়ি ঠিক করে ২/৩ দিনের রেশন মানে সব্জি-মাছ-ডিম কিনে রওনা দিন। চক্রধরপুর থেকে হেসাডি ৩৯ কিমি। প্রায় দশ কিমি যাওয়ার পর শুরু হবে ঘাট রোড। রাস্তার দু’পাশে শাল, সেগুন, মহুয়া, আর কেন্দু গাছের সারি। মাঝে মাঝেই চোখে পড়বে আদিবাসী নারী-পুরুষদের। তারা দল বেঁধে মাথায় কাঠের বোঝা, অথবা ঘর-গেরস্থালির জিনিসপত্র নিয়ে হাসি-গল্পে মেতে ঘরের পথে।
আরও কিছু দূর যাওয়ার পর চোখে পড়বে ছবির মতো এক জনপদ। নাম নাকটি। আরও কিছুটা পর আসবে জিলাবি ঘাটি। যেখানে রাস্তা অনেকটাই জিলিপির মতো প্যাঁচানো। এরপর পড়বে টেবো। বেশ বড় জনপদ। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবি কল্পনায় স্থান পাওয়া এ শহর। টেবো ছাড়ালেই এক এক করে পার হবেন লোটা, কুরুন, কুন্দরগুট্ট প্রভৃতি গ্রাম। শেষে আসবে জরাকেল। যেখানকার ঘন জঙ্গল থেকেই ব্রিটিশ পুলিসের হাতে ধরা পড়েছিলেন বীরসা মুণ্ডা। আদিবাসীরা যাকে বলতেন ‘ধরতি আনা বীরসা ভগওয়ান’। জরাকেল পার হয়ে কিছুক্ষণ গেলেই হেসাডি। থাকার ব্যবস্থা পিডব্লুডির বাংলোয়।
বাংলোয় দুপুরের খাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে চলুন হিরণি জলপ্রপাত দেখতে। প্রায় একশো ফুট ওপর থেকে হিরণি নদীর মূলধারা তিরিশ ফুট চওড়া হয়ে নীচে নেমেছে। নামার পথে সে সঙ্গী করেছে আরও দু-তিনটি পাহাড়ি ঝোরাকে। পর্যটকদের জন্য তৈরি চাতালের বাঁদিকে একটা ছোট্ট সাঁকো। যেটা টপকে নদীর ওপারে যাওয়া যায়। তারপর সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠলেই ভিউ পয়েন্ট। একটু বাঁদিকে এগলেই হিরণি-জলপ্রপাতের মূল উৎস। চারপাশে ঘন জঙ্গল। দূরে পাহাড়ের খাঁজে সমতলে ধান গাছ বাতাসে মাথা দোলায়। অজানা পাখির ডাক ভেসে আসে।
জলপ্রপাত থেকে ফিরে যাওয়া যাবে আদিবাসী হাটে। এসব অঞ্চলে হাট হল আদিবাসীদের জীবনের অক্সিজেন। এটাই তাদের মিলন মেলা। চার চোখের মিলনে এই হাটেই পুরুষ খুঁজে নেয় তার মনের মানুষ। হাটেই তারা ঘর বাঁধে আবার হাটেই তাদের ঘর ভাঙে। ছোট বেলায় পড়া হাট কবিতার বাস্তব রূপ এখানেই চোখে পড়ে। মুড়ি-সব্জি-বাসনপত্র-তেলেভাজা থেকে শুরু করে জামাকাপড়, হোমিওপ্যাথি ভ্রাম্যমান চিকিৎসা কেন্দ্র সব এক ছাতার তলায়। এ অঞ্চলে মূলত মুণ্ডা, হোঁ, ওঁরাও প্রভৃতি আদিবাসীদের বসবাস। হেসাডির আশপাশে হাট বসে বুধবার বন্দরগাঁও। বৃহস্পতিবার মুরহু, শুক্রবার খুঁটি, শনিবার চাকিতে।
দ্বিতীয় দিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ুন। রাঁচির রাস্তায় ১৩ কিমি দূরে বন্দরগাঁও। বীরসা মুণ্ডার জীবনের শেষ ঠিকানা। বদগাঁও থেকে প্রায় ৬ কিমি দূরে পঞ্চপ্রপাত। একটা ছোট্ট ব্রিজ টপকে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠলেই নদী। নাম তার বনাই। যেটি ওপর থেকে নীচে নামার পথে পাঁচটি ধারায় ভাগ হয়েছে। সে জন্যই নাম হয়েছে পঞ্চপ্রপাত। ঝাড়খণ্ড সরকার এখানে একটি পিকনিক স্পট বানিয়েছে। বর্ষায় ভিড় কম থাকলেও শীতে লোকে-লোকারণ্যর চেহারা নেয়।
পঞ্চপ্রপাত দেখে চলুন দশ কিমি দূরের মুরহু বা মুড়ি। ওখানে ১৮৭৪ সালে তৈরি প্রাচীন চার্চে কিছুটা সময় কাটিয়ে যাওয়া যাবে পিঙ্গুরা জলপ্রপাত। জনশ্রুতি এই জলপ্রপাতের নীচে কেউ যায় না। কারণ গেলে সে আর ফিরে আসবে না। বর্ষায় জলপ্রপাতের চেহারাই বদলে যায়। সেটা দেখতেই পর্যটকরা ভিড় জমান পিঙ্গুরায়।
পিঙ্গুরা থেকে মুড়ি ফিরে দুপুরের খাবার খাওয়া। তারপর তামার মোড় পার হয়ে প্রায় দশ কিমি মেঠো পথে গাড়ি চলার পর পৌঁছনো যাবে কাজলা নদীর ধারে। এরপর কিছুটা পায়ে হাঁটা। বালিয়াড়ি পার হয়ে জঙ্গল। সেটাও টপকে পাথরের ওপর সাবধানে পা ফেলে নদী। যেখানে নীচে নেমেছে সেখানে পৌঁছলে চোখে পড়বে চারদিকে রং-বেরঙের পাথর ছড়ানো-ছিটানো। ওপর থেকে নামা জলের তোড়ে সৃষ্টি হয়েছে প্রাকৃতিক গুহা। এই জলপ্রপাতের নাম রানি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর রানি জলপ্রপাতের রূপ মিলে-মিশে একাকার এখানে। যে রূপ-মাধুরী পথের ক্লান্তি ভোলায়। মনকে মুগ্ধ করে।
কাজলা নদীর ধারে রানি জলপ্রপাতের কাছে কিছুটা সময় বয়ে যেতে দেওয়া যেতেই পারে। এরপর পথের ধারে কোথাও গরম গরম পকোড়া ও চা খেয়ে সোজা ফেরা হেসাডি। রাতে যদি বৃষ্টি নামে তাহলে হ্যারিকেনের আলোয় বৃষ্টির ঝরনার শব্দ ডাক বাংলোয় তৈরি করবে এক রোম্যান্টিক পরিবেশ। যে পরিবেশে দিশি মুরগির ঝোল আর গরম ভাত সঙ্গে ঝিঁঝিঁর ডাক। রাতের ঘুম জমে যাবে। পরদিন সকালে আবার ফেরার পালা।
প্রয়োজনীয় তথ্য
কীভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে পশ্চিম ভারতগামী যে কোনও ট্রেনে চক্রধরপুর। স্টেশন থেকে একটু দূরের বাসস্ট্যান্ড থেকে রাঁচিগামী বাসে পৌঁছনো যায় হেসাডি। তবে দু-রাত্রি তিন দিনের জন্য গাড়ি বুক করে যাওয়াই ভালো। তাতে ঘোরাঘুরির সুবিধা হয়।
থাকার ব্যবস্থা
পিডব্লুডি বাংলো। বুকিং যোগাযোগ—
এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার
পিডব্লুডি (রোডস), চাইবাসা সদর। চাইবাসা, জেলা-সিংভূম।
ঝাড়খণ্ড।