কর্মরতদের সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা ও ব্যবহারে সংযত থাকা দরকার। ... বিশদ
গত ৪ আগস্ট কাশ্মীর উপত্যকায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট পরিষেবা, ল্যান্ডলাইন সংযোগ প্রভৃতি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছিল মানুষের চলাফেরার উপরেও। গত ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে ২৭২ নম্বর সাংবিধানিক আদেশ জারি করলেন এবং ভারতের সংবিধানের যাবতীয় ব্যবস্থা প্রস্তাবিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের উপর বলবৎ করলেন। ওই একই দিনে জেলাশাসকরা ১৪৪ ধারা জারি করে আন্দোলন এবং জনসমাবেশের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করলেন। শয়ে শয়ে রাজনৈতিক নেতা এবং কর্মীকে আটক করা হল। এমনকী আটক করা হল তিনজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকেও। সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ‘চার্জ’ কিছু আনতে পারেনি। পরিতাপের বিষয় এই, তবুও এখনও তাঁদের হেপাজতে রাখা হয়েছে।
কাশ্মীর টাইমস-এর কার্যনির্বাহী সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন, কংগ্রেস এমপি গোলাম নবি আজাদ এবং অন্যরা সরকারের এই অন্যায় নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে নালিশ জানিয়েছেন। আবেদনকারীদের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে—এই বক্তব্য ছাড়াও, অনুরাধা ভাসিনের প্রতিবাদ এই কারণে যে, তিনি তাঁর সংবাদপত্র প্রকাশ করতে পারেননি এবং তাতে করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হয়েছে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট এক আদেশে রাজ্য সরকারকে বলেছে যে, ‘‘জাতীয় স্বার্থ এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কথা মনে রেখে কাশ্মীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বজায় রাখার জন্য যাবতীয় উদ্যোগ নিতে হবে।’’ আশঙ্কামতোই, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সেখানে ফেরেনি। এরপর ১০ অক্টোবর কেন্দ্রের পেশ করা দাবি আদালতে এই মর্মে নথিভুক্ত হল যে—কিছু নিয়ন্ত্রণ ‘প্রত্যাহার’ করে নেওয়া হয়েছে। যাই হোক, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের পক্ষে অবশ্যপালনীয় কোনও অন্তর্বর্তী আদেশ না-থাকায় জম্মু ও কাশ্মীরে, বিশেষভাবে কাশ্মীর উপত্যকার পরিস্থিতি যথাপূর্বই রয়ে গেল।
সওয়াল-জবাব
মামলাগুলি দিন কয়েক শোনা হল, ২৭ নভেম্বর রায়দান সংরক্ষিত রাখা হল এবং সেটা ঘোষণা করা হল গত ১০ জানুয়ারি।
সমস্যাটিকে আদালত মোট পাঁচটি বিষয়ে ভাগ করে দিল। তার সঙ্গে আদালতের দেওয়া উত্তরের উল্লেখযোগ্য অংশগুলি এখানে তুলে দিচ্ছি:
১. সরকার কি ১৪৪ ধারা জারি করার অর্ডার পেশ করা থেকে কোনও ছাড় দাবি করতে পারে? উত্তর: না।
২. বাকস্বাধীনতা এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবসা চালানোর স্বাধীনতা কি মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য হবে? উত্তর: হ্যাঁ, যথাক্রমে অনুচ্ছেদ ১৯(১)(এ) এবং (জি) অনুসারে, এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার প্রতিটি নির্দেশ সাতদিনের ভিতরে পর্যালোচনা করতে হবে (এবং প্রত্যেক পর্যালোচনার সাতদিনের ভিতরে তা পুনরায় পর্যালোচনা করতে হবে)।
৩. ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়াটা কি একটি মৌলিক অধিকার? কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি।
৪. ধারা ১৪৪ প্রয়োগের নিয়ন্ত্রণগুলি কি বৈধ ছিল? উত্তর: ক্ষমতা হল প্রতিষেধক এবং নিবারক (প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড রেমিডিয়াল)—এটা মনে রেখে এবং সুসংগতির নীতি মেনে, অবশ্যই অধিকার ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে এমনভাবে নির্দেশ দিতে হবে। একই বয়ানের নির্দেশের পুনরাবৃত্তি করা চলবে না। রাজ্য বা কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে আদালতের আদেশ—‘‘নির্দেশগুলির কনটিন্যুয়েন্স বা স্থায়িত্বের কী প্রয়োজন, সেটা অবিলম্বে পর্যালোচনা করতে হবে।’’
৫. সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা সত্যিই কি লঙ্ঘিত হয়েছিল? উত্তর: ‘চিলিং এফেক্ট’ নীতি পরীক্ষার পর, এবং সংবাদপত্রের প্রকাশ পুনরায় শুরু হয়েছে বিবেচনা করে আদালত বলেছে, ‘‘এই বিষয়ে আর প্রশ্রয় দেওয়া নয়, বরং বলব যে দায়িত্বশীল সরকারের কর্তব্য সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকে সবসময় মর্যাদা দেওয়া।’’
একটা সামঞ্জস্যের সন্ধান
আদালতের পর্যবেক্ষণ—এবং কিছু বিষয়ে পর্যবেক্ষণ পেশে অনাগ্রহ—বিস্ময়কর ছিল না। রায়দানের একেবারে গোড়ার দিকে, আদালত তার মনোভাব পরিষ্কার করে দিয়েছিল যে, ‘‘স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে ব্যালান্স বা সামঞ্জস্য আমাদের পক্ষে খুঁজে পাওয়ার সুযোগটা সীমিত ... এখানে আমাদের ভূমিকা শুধু এটা নিশ্চিত করতে যে, তখনকার পরিস্থিতিতে সমস্ত ধরনের অধিকার ও স্বাধীনতা যতদূর সম্ভব নাগরিকদের দেওয়া হচ্ছে এবং সেইসঙ্গে নিরাপত্তার দিকটিও সুনিশ্চিত করা হয়েছে।’’
২০১৯-এর ৪ আগস্ট থেকে ২০২০-র ১৩ জানুয়ারির ভিতরে সরকার যখন তথাকথিত ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’ রক্ষা করছিল, তখনই কিন্তু ২০ জন সাধারণ মানুষ এবং ৩৬ জন জঙ্গি ও আটজন নিরাপত্তা কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন।
আপনি যখন এই লেখা পড়ছেন তখন ইন্টারনেট, আন্দোলন, জনসমাবেশ, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, ভাষণ ও লেখালেখি এবং কাশ্মীর উপত্যকার পর্যটকদের উপর নিয়ন্ত্রণ জারি রয়েছে। কোনোরকম ‘চার্জ’ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতাদের হেপাজতবাসও চলছে যথারীতি। সুতরাং প্রশ্ন উঠছে—আদালতের রায়ের পরেও বাস্তবে কিছু পরিবর্তন হয়েছে কি?
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেছেন, ‘‘সাময়িক নিরাপত্তা অর্জনের আশায় যাঁরা অপরিহার্য স্বাধীনতা ত্যাগ করেন, তাঁরা স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার কোনোটাই পাওয়ার যোগ্য নন।’’ প্রসঙ্গটি পৃথক; তা সত্ত্বেও, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার মধ্যে দ্বন্দ্বের সময়ের জন্য উদ্ধৃতিটি ‘ক্লাসিক’ হয়ে ওঠে। আদালত যদি বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের প্রবচনটিকে ‘গাইডিং প্রিন্সিপল’ হিসেবে মনে রাখত, তবে চূড়ান্ত রায়টা কি অন্যরকম হতো?
কিছু কি পাল্টাবে?
আদালতের রায় কাশ্মীর প্রশ্নে সরকারকে স্বৈরাচারী ও সেনানির্ভরতার নীতি থেকে সরে আসার একটা সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু, সরকার এই সুযোগ নেবে কি না আমার সংশয় রয়েছে। আদালতের রায়টি কাশ্মীর উপত্যকার ৭০ লক্ষ মানুষের মনে এই আশাও জাগিয়েছে যে তাদের স্বাধীনতার পুনরুদ্ধার হবে—যদিও আদালত রায়দানের সাতদিন পরেও সেসবের লক্ষণমাত্র নেই।
বিবাদি পক্ষ (রেসপনডেন্ট, এখানে কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) অখুশি এই কারণে যে তাদের পদক্ষেপগুলির উপর সবসময় বিচারবিভাগের পর্যক্ষেণ চলবে। অন্যদিকে, বাদি পক্ষও (পিটিশনার) অখুশি—এই কারণে যে, বিচারের বাণী ছাড়া তাঁরা কোনও সুরাহা পাননি।
প্রাইভেসি মামলার (জাস্টিস পুত্তাস্বামী) মতো, আদালতের মাধ্যমে আরও কিছুটা করা যেত। একটা সুযোগ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। হতে পারে আরও কিছু করা হবে, এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে (আপনি বাজি ধরতে পারেন যে আদালত অবমাননার একটি পদক্ষেপ করা হবে) অথবা পরবর্তী মামলার শুনানিতে। কিছু সময় আইন হতাশ করে।