নবজ্যোতি সরকার: চারদিকে সরকারিভাবে কাটা পুকুর ও খাল। সরকারি তরফে জল ধরো জল ভরো প্রকল্পে কাটা পুকুর ও খালে জল রয়েছে। কিন্তু সেই জল নোনা। রবি চাষে সেই জল কোনও কাজে আসবে না। ফলে রবি মরশুমে সব্জি যেমন বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টম্যাটো, মূলো, পালংশাক, বিট প্রভৃতির চাষ জলের অভাবে মার খাচ্ছে সুন্দরবনের বাসন্তী ও গোসাবা ব্লকে। ওই এলাকায় চাষে সেচের জল বলতে কিছু ব্যক্তিগত পুকুর ও শ্যালো টিউবওয়েল রয়েছে। কিন্তু তা দিয়ে জলের অভাব মেটানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এলাকার চাষিরা। গোসাবা ব্লকের তারানগর রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিলা চাষি সুচিত্রা দাস ও বাসন্তী বিশ্বাস রবি মরশুমে সব্জি চাষে সেচের জলের অভাব নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। ওই ব্লকের আমতলি গ্রাম পঞ্চায়েতের চম্পা মণ্ডল ও তুলসি মণ্ডলেরও সেচের জল নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। বাসন্তী ব্লকের ঝড়খালি গ্রাম পঞ্চায়েতের মমতা বৈদ্য, রিনা সানা, সারথী রায় ও সন্ধ্যা মণ্ডল বলেন, সরকারি খাল ও পুকুরের নীচের জলের লবণাক্ততা এতটাই বেশি যে, তা সেচের কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
সম্প্রতি আড়াপাঁচ শস্য শ্যামলা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের উদ্যোগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৪টি ব্লকের ৭০জন মহিলা চাষিকে নিয়ে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ শিক্ষা ও গবেষণা কেন্দ্রের আইআরডিএম ফ্যাকাল্টিতে অনুষ্ঠিত হয় প্রশিক্ষণ শিবির। রবি চাষে সুন্দরবনের জলের সমস্যা নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রধান ডঃ নারায়ণ চন্দ্র সাহু বলেন, সেচ দপ্তরের উদ্যোগে কাটা খালগুলি ৯ফুট বা তার বেশি গভীরতা করা হচ্ছে। ফলে রবি মরশুমে মাটির নীচের নুন উঠে এসে জলে গুলে যাচ্ছে। যত গভীরতা বাড়ছে, লবণাক্ততাও ততই বাড়ছে। একই সমস্যা গভীরভাবে কাটা পুকুরগুলির ক্ষেত্রেও। তবে তাঁদের পরামর্শমতো অনেকেই পুকুর কেটেছেন। সেক্ষেত্রে পুকুরগুলি ৫ ফুট গভীর ও তলদেশ সমতলভাবে কাটা হয়েছে। এই সমস্ত পুকুরে নোনা জলের সমস্যা নেই। নোনা পুকুরে বাসন্তী গোসাবার চাষিরা পার্সে, ভেটকি,ভাঙন, এক ধরনের নুন সহনশীল তেলাপিয়া মাছের চাষ করতে পারেন চাষিরা। মিঠে জল কমে যাওয়া কাদা পুকুরে মাগুর মাছের চাষ করা যেতে পারে। মিঠে পুকুরের জল দিয়ে এবং শ্যালো টিউবওয়েল ব্যবহার করে নতুন প্রযুক্তিতে কম জলে রবি চাষ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই বিভিন্ন ফসলের নতুন প্রজাতির বীজ ব্যবহার করতে হবে।