বিদ্যার্থীদের কোনও বৃত্তিমূলক পরীক্ষায় ভালো ফল করবে। বিবাহ প্রার্থীদের এখন ভালো সময়। ভাই ও বোনদের ... বিশদ
এইসব শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন প্রায় চার ঘণ্টা ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে সাধ্য অনুযায়ী দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। যে সকল নাটকের শিক্ষার্থী এখানে আগে নাটক প্রদর্শন করেছে বা আগামী দিনে করবে তাদের সঙ্গে নাটক নিয়ে আলোচনা, নাটক শেখানো ও বোঝানো হয়। এইসব শিশু-কিশোররা এই প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে যেমন তারা নাটকে অভিনয় শিখতে পারে ঠিক তেমনই নাট্যকলা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে পারে। পরে এরাই একসময় নাট্যকলায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। এখানকার প্রশিক্ষিত ছেলেমেয়েরা প্রথমে লাইব্রেরির নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহে নাটক প্রদর্শন করে। এরপর মিনার্ভা থিয়েটারে তিনটি ছোট ছোট নাটক ‘পাখিদের পাঠশালা’, ‘ভাঙ্গা ম্যাকবেথ’ এবং ‘আলোয় ফেরা মঞ্চস্থ’ করে।
আলোয় ফেরা নাটকটি লীলা মজুমদারের একটি রচনার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। বাকি দুটো মৌলিক রচনা। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এই ছেলেমেয়েদের নাটক দেখার জন্য মিনার্ভা থিয়েটারের হল দর্শক পরিপূর্ণ ছিল। এই তিনটি নাটকে প্রায় বত্রিশজন ছেলেমেয়ে অংশগ্রহণ করে।
এখানে প্রশিক্ষিতরা ইতিমধ্যে রপ্ত করে নিয়েছে কোথায় দাঁড়ালে আলো ঠিকভাবে পাওয়া যাবে, শব্দ ঠিকভাবে নিক্ষেপ করা যাবে এবং মঞ্চে সঠিক পজিশন নিয়ে অভিনয় করা যাবে। এরা সবকিছু এত তাড়াতাড়ি রপ্ত করে নিয়েছে না দেখলে বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন। এইসব ছেলেমেয়েরা সংলাপ ভুলে যায় না, বরং অভিনয়ের সবকিছু নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করে। এইসব শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরা নিজেরাই থিম ভেবে সংলাপ রচনা করে। যদি কোথাও ভুল পাওয়া যায় তাহলে অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী শুধরে দেন। ছোট থেকে নাট্যমনস্ক না হলে বড় হয়ে শুরু করলে একটু সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই নাট্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকেই একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার শিক্ষা শুরু হয়। সুগতবাবু জানালেন, তাঁদের সংস্থা সরাসরিভাবে নাটক, সিরিয়াল বা সিনেমায় সুযোগ করে দিতে না পারলেও এইসব ছেলেমেয়েরা তাদের নিজস্ব কর্মগুণে সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তাদের নিজস্ব অনুষ্ঠানে বোদ্ধা দর্শকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে। সেই সব আমন্ত্রিত গুণী মানুষদের থেকেও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা পাওয়া যায়। সাধারণত নাটকের শিক্ষার্থীদের প্রতি শনিবার ও রবিবারের ক্লাসে প্রশিক্ষণ দেন নাট্য প্রশিক্ষক অমিত দে। নাট্যব্যক্তিত্ব প্রকাশ ভট্টাচার্য ও অদ্রিজা দাশগুপ্ত নিয়মিত ক্লাস না নিলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে তাঁরা গোটা বিষয়টি দেখভাল করেন। মাঝে মাঝে বিশেষ ক্লাসে অন্যান্য অভিজ্ঞ নাট্যব্যক্তিত্বদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রিত শিক্ষকরাই ওই দিনের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। সুরঞ্জনা দাশগুপ্ত এখানকার ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গিয়েছেন। প্রতি মাসের অন্তত একটি দিন বিশেষ ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করা হয় এবং সেই ক্লাসে বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্বদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই সংস্থার সাংস্কৃতিক সম্পাদক সোমা ভট্টাচার্য জানালেন, তাঁদের নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে ছোটদের নাট্যচর্চার প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। অন্যতম সদস্য চন্দ্রকান্ত ঘোষ বলেন, এই নাট্য প্রশিক্ষণকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের উচ্চমানের প্রশিক্ষণ দিয়ে ভালো মানের অভিনেতা-অভিনেত্রী সৃষ্টি করা এবং এইসব শিক্ষার্থীদের নাটকের প্রতি দায়িত্বশীল তৈরি করাটাই তাঁদের মুখ্য উদ্দেশ্য। সমস্ত কর্মকাণ্ডের পিছনে কৌস্তভ ঘোষের অবদান অনস্বীকার্য।