সন্তানের সাফল্যে গর্ব বোধ। আর্থিক অগ্রগতি হবে। কর্মে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ঘাড়, মাথায় যন্ত্রণা বৃদ্ধিতে বিব্রত ... বিশদ
মানব সভ্যতায় বিভিন্ন সম্পর্কের জটিল সমীকরণ, দেহজ প্রেম ও মানসিক প্রেমের তুমুল বৈরিতা এবং যুগে যুগে ঈশ্বরের ক্ষমতার কাছে বাধ্য হয়ে মাথা নত করা কোটি কোটি মানুষের আর্তি ও অসহায়তার আখ্যান এই নাটক। যা প্রমাণ করে হাজার হাজার বছর আগে সাহিত্যিকদের দূরদর্শিতা ও গভীর দর্শনবোধ।
রাজা থিসিয়াসের প্রথমা স্ত্রী ছিলেন হিপলিটো। কিন্তু রাজা পার্শ্ববর্তী কোনও এক রাজ্য জয় করার দরুন শর্তমতো সেই রাজ্যের রানি অসামান্যা সুন্দরী ফ্রেডেরাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করেন। কিন্তু ফ্রেডেরা কোনওদিনই রাজাকে ভালোবাসতে পারেনি। আজন্ম এক নিঃসঙ্গতায় তার অন্তর ডুকরে উঠত প্রায়শই। রাজা যেহেতু দেহজ কামে চূড়ান্তভাবে আসক্ত ছিলেন, তাই প্রথমা স্ত্রীর বোন এন্টিওপের সঙ্গে গোপন অভিসারের ফলে রাজার পুত্র হয়ে জন্মান সৌম্যকান্তি বীর হিপলিটাস। নিজের জন্ম বৃত্তান্ত সম্পর্কে অবগত হওয়ায় দেহজ প্রেম ও কামের বশবর্তী সম্পর্ক নিয়ে ভয়ঙ্কর রকমের ঘৃণা করতেন এবং যাবতীয় নারীসঙ্গ থেকে দূরে রাখতেন নিজেকে। একমাত্র প্লেটোনিক প্রেম বা মানসিক সম্পর্কের দেবী জিয়াসের কনিষ্ঠ কন্যা আর্তেমিসকে তিনি আরাধনা করতেন। কিন্তু আফ্রোদিতে অর্থাৎ জিয়াসের জ্যেষ্ঠা কন্যা ছিলেন উগ্র কামের দেবী। বহু দেবতা ও মানুষকে দেহতত্ত্বের কামে লিপ্ত করার পর তিনি হিপলিটাসকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। হিপলিটাস চূড়ান্ত ঘেন্না সহকারে তা প্রত্যাখ্যান করলে আফ্রোদিতি তাকে ধ্বংস করার প্রতিজ্ঞা করেন। ফলত তিনি হিপলিটাসের সৎ মা ফ্রেডেরার মধ্যে দিয়ে তার সুপ্ত বাসনা চরিতার্থ করার চেষ্টা করেন। তাই মানব সমাজের সবচেয়ে গর্হিত ও নিষিদ্ধ এক মা আর পুত্রের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কই দাবি করে বসেন ফ্রেডেরা। হিপলিটাসের চূড়ান্ত অপমানজনক প্রত্যাখ্যানে তিনি আত্মহত্যা করলে আফ্রোদিতের চক্রান্তে রাজা থিয়াসের কাছে বিকৃত সংবাদ পৌঁছায় যে হিপলিটাস তার মায়ের শয্যা কলঙ্কিত করে এবং এই কারণে ফ্রেডেরা আত্মহত্যা করে।
রাজা তার অপত্য স্নেহের, অন্ধ বিশ্বাসের পুত্রের বিশ্বাসঘাতকতার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে অবিশ্বাস করে রাজ্য থেকে চিরতরে বহিষ্কার করে দেন। দৈববাণী অনুযায়ী বীর হিপলিটাসের মৃত্যু হয়। দেবতার স্বৈরাচারিতার গ্রাসে এক স্বচ্ছ হৃদয় প্রজাদরদি মানব সন্তান হারিয়ে যায়। দিনাজপুর কৃষ্টি প্রযোজিত এই নাটকটির স্টেজ, পোশাক, মিউজিক, কোরিওগ্রাফি এবং নির্দেশনার পাশাপাশি মুখ্য চরিত্রে রূপদান করার দায়িত্ব একার হাতেই সামলেছেন সুরজিৎ ঘোষ। ঘটনার সময় অনুযায়ী পোশাক, আবহ ও মঞ্চসজ্জা নাটকটিকে বাস্তব রূপ দিতে সাহায্য করেছে। বিশেষত মিউজিকের প্রাধান্য থাকায় কাহিনীর গভীরে প্রবেশ করা সহজ হয়েছে দর্শকদের।
হিপলিটাসের ভূমিকায় সুরজিৎ ঘোষ এবং আর্তেমিস ও আফ্রোদিতে দুটি চরিত্রেই সানিয়া প্রসাদ এককথায় অনবদ্য। নৃত্যে পটীয়সী সানিয়ার সহজ সাবলীল ম্যানারিজম, সুদক্ষ অভিনয় দীর্ঘদিন সকলের মনে থাকবে। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে পারমিতা চক্রবর্তী (ফ্রেডেরা), প্রসেনজিৎ ঘোষ (থিসিয়াস), সৌর্য্য শিখর ঘোষ (হেমান) তাঁদের যথাযোগ্য সহযোগিতা করেছেন। ছোট ছোট পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন ভাগ্যশ্রী, সুস্মিতা, মনোজিৎ, বিশাল এবং সংগ্রামজিৎ। আলো সৌমেন চক্রবর্তী।
কলি ঘোষ