লন্ডন: ১৯৮৯-৯০ সালে শেষবার কেনি ডালগ্লিশের কোচিংয়ে লিগ জিতেছিল লিভারপুল। তারপর কেটে গিয়েছে ৩০ বছর। অধরা রয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড সেরা হওয়ার তকমা। গত বছর শেষ ম্যাচ পর্যন্ত লড়াই করেও এক পয়েন্টের জন্য হাতছাড়া হয়েছিল খেতাব। তবে হার মানেননি তারা। ঝাঁপিয়েছেন নতুন উদ্যমে। চলতি মরশুমে যে কোনও মূল্যেই চ্যাম্পিয়নশিপের স্বাদ পাওয়াই লক্ষ্য ছিল সালাহ, ফারমিনোদের। অবশেষে বৃহস্পতিবার যা সফল হল। চেলসির কাছে সিটি হারতেই সাত ম্যাচ আগে লিগ নিশ্চিত করে লিভারপুল। আর এই সাফল্য কেনি ডালগ্লিশকে উৎসর্গ করলেন জুরগেন ক্লপ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘অবিশ্বাস্য। এই মুহূর্তে আমার কী অবস্থা, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। লিভারপুলের এই খেতাব জয়ের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক কিংবদন্তি। যাঁদের মধ্যে অন্যতম ডালগ্লিশ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য কেনি আমাদের প্রচুর সমর্থন জুগিয়েছেন। কেনি, এই খেতাব আপনার। ক্লাবের এই জয় দেখতে আপনাকে ৩০ বছর অপেক্ষা করতে হল।’ ২০১৫ সালে লিভারপুলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ক্লপ। সেই সময় অ্যানফিল্ডের ক্লাবটির অবস্থা যথেষ্ট ভাঙাচোরা। প্রথম ম্যাচে ২-২ গোলে কোনওক্রমে ড্র করে মাঠ ছেড়েছিলেন এই জার্মান কোচ। সমর্থকদের তির্যক মন্তব্যও তাঁর ফোকাস নড়াতে পারেনি। বরং সবসময় ফুটবলারদের উৎসাহ জুগিয়েছেন তিনি। ক্রমশ অর্জন করেছেন সমথর্কদের আস্থা এবং ভালোবাসা। ১৩ মাসের মধ্যেই উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ক্লাব বিশ্বকাপ, আর এবার প্রিমিয়ার লিগ খেতাব জয়ের মাধ্যমে ক্লপ বোঝালেন, পেপ-মরিনহোর চ্যালেঞ্জার হিসেবে তিনি তৈরি। একাধিক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আবেগই তাঁর মূলধন। এদিন লিভারপুল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আনন্দে কাঁদতে দেখা যায় তাঁকে। অভিজ্ঞ ক্লপ জানতেন, খেতাব জয়ের পথ সহজ হবে না। তাই যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত রেখেছিলেন ফুটবলারদের। তাঁর পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করেছেন ভার্জিল ফন ডিক, হেন্ডারসন, মো সালাহরা। প্রথম জার্মান কোচ হিসেবে প্রিমিয়ার লিগ খেতাব জয়ের নজির গড়লেন তিনি। আর এই সাফল্যের কৃতিত্ব দিলেন ফুটবলারদের। ক্লপ বলেন, ‘আমি যেরকম ভেবেছিলাম, লিগ জয় তার থেকেও অনেক বেশি কিছু। মনে হচ্ছে, এখনও কল্পনার স্বর্গরাজ্যে বাস করছি। ফুটবলারদের জন্যও আমি গর্বিত।’
বৃহস্পতিবার চেলসির কাছে সিটি হারতেই লিভারপুলের খেতাব জয় নিশ্চিত হয়। তাই ম্যাচ শেষে নতুন চ্যাম্পিয়নকে শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি গতবারের খেতাবজয়ী কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা। লিভারপুলের খেলার মধ্যে যে প্যাশন ছিল, তা এই মরশুমে তাঁর দলের মধ্যে দেখা যায়নি। হারের পর গুয়ার্দিওলা বলেন, ‘খেতাব জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ইচ্ছাশক্তির অভাব ছিল আমাদের। ওরা প্রতিটি ম্যাচ এমনভাবে খেলেছে যেন এটাই শেষ সুযোগ। এটাই বাস্তব। এই জায়গায় আমরা অনেক পিছিয়ে।’ লিভারপুলের আর এক প্রাক্তন কোচ রাফায়েল বেনিতেজও ট্যুইট করে ক্লপ-ব্রিগেডকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ‘লিভারপুলকে অভিনন্দন। ৩০ বছর পর স্বপ্ন সত্যি হল। ভবিষ্যতে আরও সাফল্য কামনা করি।’