ব্যবসায় বাড়তি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত সাফল্য নাও দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি শ্বাসকষ্ট ও বক্ষপীড়ায় শারীরিক ক্লেশ। ... বিশদ
শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী: প্রধানমন্ত্রীর আর্জিতে যেভাবে শব্দ ও আতসবাজি পোড়ানো হল, তা একেবারেই অনভিপ্রেত। রবিবার রাত ৯টার সময় উৎসবের আমেজ তৈরি হল। মানুষ মোমবাতি নিয়ে, বাজি ফাটিয়ে উৎসব পালন করল। দেশের এই পরিস্থিতিতে উৎসব কেন? এই ঘটনার ঘোরতর নিন্দা জানাচ্ছি।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মন্ত্রী: অজ্ঞাত কারণে সরকার যা বলছে, মানুষ তাই করছে। সরকারের যে বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছেছে, তা অর্ধেক। মানুষের এতে কোনও দোষ নেই। পরম্পরা অনুযায়ী, কালীপুজোয় মোমবাতি জ্বালানোর পাশাপাশি আমরা বাজি পোড়াই। সরকারের বলা উচিত ছিল, মোমবাতি জ্বালালেও কেউ বাজি পোড়াবেন না। যদিও ঘরের আলো নিভিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মোমবাতি জ্বালানোর আর্জি একেবারেই বিজ্ঞানসম্মত নয়।
আব্দুল মান্নান, বিরোধী দলনেতা: কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ। প্রধানমন্ত্রী শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ রসিকতা করেছেন তাঁর আর্জির মাধ্যমে। ওঁর ওই আবেদনের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল না। নিছকই পাগলামি করছেন উনি। উনি যদি দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কাজ করেন, তাহলে সাধারণ মানুষের কোনও দোষ নেই। ওঁর এই মনোভাব করোনা মোকাবিলার প্রচেষ্টাকে বেশ খানিকটা শিথিল করে দিয়েছে। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
সৌমেন্দ্রনাথ বেরা, অধ্যাপক (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়): অত্যন্ত অসংবেদনশীল পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রীর এই আর্জির সঙ্গে বাস্তবতার কোনও মিল নেই। দেশের লক্ষ লক্ষ দিনমজুর ও দরিদ্র মানুষ দুরবস্থার মধ্যে রয়েছেন। সরকারের উচিত, এই সময়ে মানুষকে আরও বেশি সচেতন ও সক্ষম করে তোলা। তাহলেই এই লড়াইয়ে আমরা জিততে পারব। এদিন অনেক জায়গায় দেখা গিয়েছে, মানুষ মোমবাতি নিয়ে রাস্তায় মিছিল করছে। যা দেশের সংবেদনশীলতা ও সংহতির উপর এক বড়সড় ধাক্কা। দেশের এই পরিস্থিতিতে প্রকৃত ঐকমত্যের দিকে আরও কিছুটা নজর দেওয়া উচিত প্রশাসনের।
বিশ্বজিৎ দাস, অধ্যাপক (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়): রবিবারের ঘটনায় একাংশের মানুষ চরম অশিক্ষা এবং অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আর্জিতে যৌক্তিকতা বা বিজ্ঞানমনস্কতা রয়েছে কি না, তা অন্য বিষয়। মানুষকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে হলে আরও অনেক বেশি দায়িত্বজ্ঞান হতে হবে। ইদানীং লকডাউন চলাকালীন মানুষ তাঁর মৌলিক প্রয়োজন থেকে সরে গিয়ে বিনোদনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ভারতবর্ষ এখনও এই মারণ ভাইরাসের প্রকৃত প্রকোপ সম্পর্কে অবগত নয়। তাই মানুষের পেটে বিদ্যা থাকলেও প্রকৃত শিক্ষার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
অর্জুন দাশগুপ্ত, চিকিৎসক: পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রধানমন্ত্রীর আর্জির পাশাপাশি আরও একটু বিস্তারিত বার্তার প্রয়োজন ছিল। এই অকাল দীপাবলির উৎসব কীসের, তা আমরা জানি না। এই পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত উপযুক্ত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই বা পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্টের সংখ্যায় বিপুল ঘাটতি রয়েছে। অবিলম্বে সেই ঘাটতি পূরণ করা অত্যন্ত আবশ্যিক।
সনাতন দিন্দা, শিল্পী: সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিওতে দেখলাম একদল মানুষ মোমবাতি মিছিল করছে, বাজি ফাটাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে কোনও সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং নেই। মানুষ বোধবুদ্ধি সমস্ত হারিয়ে ফেলেছে। এই ভয়ানক সময় কিছু অসচেতন মানুষের মধ্যে এই বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস কোথা থেকে আসছে, তা জানা নেই। কিছু মানুষের এই মনোভাবকে অত্যন্ত ঘৃণা করছি। ফলে এখনই সচেতন না হলে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হতে চলেছে।
কনীনিকা ব্যানার্জি, অভিনেত্রী: যে সব মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন শব্দ ও আতসবাজি পুড়িয়েছে, তাঁরা এক কথায় অশিক্ষিত। প্রধানমন্ত্রীর আর্জি সঠিক থাকলেও মানুষ তা বুঝতে ভুল করেছে। আসলে তারা বুঝতেই চায় না। মানুষের সচেতনতা মানুষের নিজের হাতে। বাড়ির ভিতরে থেকেই প্রদীপ, মোমবাতি কিংবা মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালানোর আবেদন রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দেখা গেল সম্পূর্ণ ভিন্ন ছবি। ফলে সারা পৃথিবী ভারতবর্ষের মানুষকে দেখে হাসছে।