মেষ: পঠন-পাঠনে আগ্রহ বাড়লেও মন চঞ্চল থাকবে। কোনও হিতৈষী দ্বারা উপকৃত হবার সম্ভাবনা। ব্যবসায় যুক্ত ... বিশদ
ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তাঁর এক অদ্ভুত আকর্ষণ ছিল। নিজেও খুব ভালো এসরাজ আর বাঁশি বাজাতে পারতেন। ছাত্রাবস্থায় হেদুয়ার ধারে সত্যেন্দ্রনাথের বন্ধুদের আড্ডার মূল আকর্ষণ ছিলেন হরিৎকৃষ্ণ। কারণ, এই হরিৎকৃষ্ণ সত্যেন্দ্রনাথের অনুরোধে একের পর এক রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শোনাতেন। পরবর্তীকালে সত্যেন্দ্রনাথ তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, তিনি হঠাৎ জানতে পারলেন তাঁর এক ছাত্র খুব ভালো সেতার বাজায়। সেই ছাত্রটিকে ডেকে তিনি বললেন, ‘তোমার বাজনা শোনাও।’ উত্তরে ছাত্রটি বলল, ‘স্যার আমি তো আমার যন্ত্রটা আনিনি, আমি না হয় পরে একদিন আপনার বাড়ি গিয়ে শুনিয়ে আসব।’ কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথ সেসব শুনলেনই না। তিনি ছাত্রটিকে নিজের ঘরেই বসিয়ে রাখলেন তারপর অন্যদের দিয়ে আনালেন তাঁর সেতারটা, সেই সঙ্গে আনালেন একজন তবলা বাদককেও। এরপর, দু’জনকেই বসিয়ে দিলেন নিজের টেবিলে।
সত্যেন্দ্রনাথের বিয়ের সময় তাঁর দাবিও ছিল খুব অদ্ভুত। তাঁর বন্ধুবান্ধবের সংখ্যা ছিল বিশাল। ১৯১৪ সালে যখন ঊষাবতী দেবীর সঙ্গে বিয়ে হয়, সেই সময় তিনি ঊষাবতী দেবীর বাবা যোগীন্দ্রনাথ ঘোষকে বলেছিলেন যে, বিয়েতে তিনি কোনওভাবেই টাকা-পয়সা পণ হিসাবে নিতে পারবেন না। তবে তাঁর একশোজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বরযাত্রী হিসাবে। বোস-আইনস্টাইন তত্ত্বের জনক হিসাবে সত্যেন্দ্রনাথের নাম গোটা পৃথিবী বিখ্যাত। খুব সহজ ভাষায়, তার আবিষ্কৃত এই তত্ত্ব অনুযায়ী, একাধিক কণা যাদের আলাদাভাবে চেনা অসম্ভব এবং যাদের মধ্যে কোন মিথস্ক্রিয়া (Interaction) নেই, তারা তাপগতীয় সাম্যাবস্থায় (Thermodynamic equilibrium) সহজলভ্য শক্তিস্তর গুলিতে বিন্যস্ত থাকতে পারে এবং এই কণাগুলিকে বলে বোসন। আসলে তার এই তত্ত্বটা নিয়ে একটা মজার ঘটনা আছে। একবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী পল ডির্যাক। ডির্যাককে আনার জন্য সত্যেন্দ্রনাথ তার কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে একটা গাড়ি করে গিয়েছেন দমদম বিমানবন্দরে। ডির্যাকের সঙ্গে আছেন তাঁর স্ত্রী ম্যান্সি। ফেরার সময় সত্যেন্দ্রনাথ ছাত্রদের গাড়ির পিছনে বসতে বলে ডির্যাক ও তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে উঠলেন গাড়ির সামনে। পথে যেতে যেতে ডির্যাক বললেন, ‘মিস্টার বোস, আমার মনে হয় গাড়িটা আমাদের জন্য খুব ছোট হয়েছে, আপনার ছাত্ররা গাড়ির পিছনে ভালো করে বসতে পারছে না।’ উত্তরে কৌতুক করে সত্যেন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘আমার ছাত্ররা সব বোসন, ওরা ওই জায়গাতেই নিজেদের বিন্যস্ত করে নেবে।’