কর্মরতদের সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা ও ব্যবহারে সংযত থাকা দরকার। ... বিশদ
জয় চৌধুরি, কলকাতা: ম্যাচের সেরা হোসেবা বেইতিয়া তখন পোডিয়ামে। ২৪ মাস পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে হারানোয় মোহন বাগান গ্যালারিতে তখন উল্লাসের গর্জন। প্রিয় ফুটবলারদের অভিবাদন জানানোর মুহূর্তে মোহন সমর্থদের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। মাঠের মধ্যে তখন পাপা-মুনোজরা তখন আলিঙ্গনাবদ্ধ। ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিয়ে বেইতিয়া আসার পর বাগান ফুটবলাররা ফেন্সিংয়ের দিকে ছুটে গেলেন। এই ছোট্ট ঘটনার মধ্যেই ফুটে উঠল মোহন বাগান দলের স্পিরিট। মর্যাদার ডার্বিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে আই লিগের শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল কিবু ভিকুনার দল। আট ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে তারা।
রবিবার বড় ম্যাচের শেষ ২০ মিনিট হুয়ান মেরা, লালরিনডিকার সৌজন্যে ম্যাচে প্রবলভাবে ফিরে আসার চেষ্টায় ছিল ইস্ট বেঙ্গল। এই পর্বে প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হতেই পারত। এই পর্বে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল মোহন বাগানের। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ফ্রান মোরান্তে-ড্যানিয়েল সাইরাসরা তিন পয়েন্ট নিয়ে ড্রেসিং-রুমে ফেরেন। শেষ ছ’টি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতে জিতল মোহন বাগান। অপরটি ড্র। এই প্রশংসনীয় পারফরম্যান্স সত্ত্বেও বড় ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ডিফেন্ডারদের পরিকল্পনাহীন ফুটবলে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ভিকুনার কপালে। পক্ষান্তরে, হারের হ্যাটট্রিকে ‘আলে স্যারের’ ইস্ট বেঙ্গল লিগ তালিকায় ক্রমশই পিছনের দিকে হাঁটছে। ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট ঝুলিতে নিয়ে সপ্তম স্থানে তারা।
এদিন ম্যাচ শুরুর প্রথম পাঁচ মিনিটের পর মোহন বাগানের পাসিং ফুটবলে চোখে সর্ষে ফুল দেখেছিলেন ক্রেসপিরা। ১ জানুয়ারি ফিফা উইন্ডো খোলার পর নতুন ফুটবলার না নেওয়ার মূল্য ডার্বিতে দিতে হল ইস্ট বেঙ্গলকে। এই পর্বে বেইতিয়া-নাওরেমদের পাসিং অ্যান্ড প্রেসিং ফুটবল সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে খেলার একদম শুরুতে প্রতিপক্ষকে ঝটকা দিতে চেয়েছিল আলেজান্দ্রোর দল। প্রথম মিনিটেই লালরিনডিকার ফ্রি-কিকের মোকাবিলা করতে গিয়ে মোরান্তে প্রতিপক্ষকে কর্নার উপহার দেন। ডিকার ভেসে আসা কর্নারে সাইরাসকে টপকে মার্তি ক্রেপসির হেড সেকেন্ড পোস্টের পাস দিয়ে বেরিয়ে যায়। কাসিম আইদারা আর একটু তৎপর হলেই বলটি গোলে ঠেলতে পারতেন। প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে মোহন বাগান মিনিট দশেকের মধ্যে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সবুজ-মেরুনে সই করার পর পাপা দিওয়ারা প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের ডিসটার্ব করছেন। ফলে মরশুমের প্রথম দিকের মতো ফ্রান গঞ্জালেজ মুনোজকে আক্রমণে তেমন সক্রিয় হতে হচ্ছে না। বরং সাহিলকে পাশে নিয়ে তিনি মাঝমাঠ সামলাতে মন দিতে পারছেন। তাই শেষ ২০ মিনিট ছাড়া মোহন বাগান মাঝমাঠে বেশ বুনোট ভাব দেখা গেল। সাধারণত মোহন বাগান ডান দিক দিয়ে বেশি আক্রমণ গড়ে। কিন্তু এদিন বাঁ দিক দিয়ে নাওরেম ঝড় তুলে ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্ডারদের নাভিশ্বাস তুলে দেন। কমলপ্রীতের দুর্বলতা তার বড় কারণ। বাগানের প্রথম গোলটির নেপথ্যেও নাওরেম। ১৮ মিনিটে বিপক্ষের দুই ফুটবলারের বাধা টপকে তাঁর ঠিকানা লেখা সেন্টার হেডে জালে জড়িয়ে দিতে অসুবিধা হয়নি বেইতিয়ার (১-০)। বিরতির মিনিট পাঁচেক আগে ইস্ট বেঙ্গলকে সমতায় ফেরানোর সুযোগ হাতছাড়া করেন মেহতাব সিং। ৪১ মিনিটে নাওরেমের ক্রস ভিড়ের মধ্যে থেকে গোলে ঠেলতে ব্যর্থ হন পাপা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ম্যাচে ফেরার তাগিদ দেখা যায় ইস্ট বেঙ্গলের মধ্যে। তবে প্রারম্ভিক পর্বে সবুজ-মেরুনেরই প্রাধান্য ছিল। ৫৬ মিনিটে হাফ টার্নে নেওয়া পাপার শট চমৎকার বাঁচান লাল-হলুদ গোলরক্ষক রালতে। এরপর অজ্ঞাত কারণে হঠাৎই রক্ষণাত্মক খোলসে দলকে মুড়ে দেন ভিকুনা। এই সুযোগ কাজে লাগায় আলেজান্দ্রো-ব্রিগেড। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে দু’টি হাফ চান্স নষ্ট করেন মার্কোস। এরপরেই ব্যবধান বাড়ায় সবুজ-মেরুন। বাঁ দিক থেকে বেইতিয়ার কর্নারে পাপার কপিবুক হেড জালে জড়ায় (২-০)। ম্যাচের বয়স তখন ৬৪ মিনিট। দু’গোলে পিছিয়ে পড়ার পর ইস্ট বেঙ্গল যাবতীয় দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে আক্রমণে ওঠে। আর তখনই বেরিয়ে পড়ে মোহন বাগান রক্ষণের দুর্বলতা। পরিবর্ত হিসেবে নামা এডমন্ডের অনবদ্য থ্রু থেকে ইস্ট বেঙ্গলের একমাত্র গোলটি মার্কোসের (২-১)। এরপর দুর্গরক্ষার জন্য মোহন বাগানের সবাই নিজেদের অর্ধে নেমে আসতে বাধ্য হন। ৮২ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া হুয়ান মেরার শট ক্রসপিসে আছড়ে পড়ে। ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট এটাই। উল্লেখ্য, মোহন বাগানের গোলরক্ষক শঙ্কর রায় এদিন সারাক্ষণ স্নায়ুর চাপে ভুগেছেন। রক্ষণ সামলাতে গুরজিন্দর কুমার-চুলোভাকে নামান কোচ ভিকুনা। তাই শুভ ঘোষ কিংবা টারসুনভকে ডার্বিতে ব্যবহার তিনি করতে পারেননি।
মোহন বাগান: শঙ্কর রায়, আশুতোষ মেহতা (গুরজিন্দর সিং ৬২ মি:), ফ্রান মোরান্তে, ড্যানিয়েল সাইরাস, ধনচন্দ্র সিং, শেখ সাহিল (চুলোভা ৮২ মি:), ফ্রান গঞ্জালেজ মুনোজ, সুহের (ব্রিটো ৭৬ মি:), বেইতিয়া, নাওরেম, বাবা দিওয়ারা।
ইস্ট বেঙ্গল: রালতে, কমলপ্রীত সিং, মেহতাব সিং, মার্তি ক্রেসপি, অভিষেক আম্বেকর, কাসিম আইদারা, লালরিনডিকা রালতে, পিন্টু মাহাতা (এডমুন্ড লালরিনডিকা ৫৫ মি:) (অভিজিৎ সরকার ৭২মি:), হুয়ান মেরা, হাইমে স্যান্টোস, মার্কোস এসপাডা।