বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে আজকের দিনটা শুভ। কর্মক্ষেত্রে আজ শুভ। শরীর-স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। লটারি, শেয়ার ... বিশদ
তুতো দাদার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলছিলেন আরব সিং সোলাঙ্কি, ‘ছেলেটা গোলমাল একেবারে পছন্দ করত না, জানেন? অথচ ভাগ্যের পরিহাস দেখুন! সেই গোলমালের মাঝে পড়েই প্রাণ হারাতে হল তাকে।’ কীভাবে ঘটল ঘটনাটি? আরব সিং সোলাঙ্কি বললেন, ‘২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পাড়ার মোড়ের দোকান থেকে দুধ কিনতে বেরিয়েছিল রাহুল। ফেরার পথে দেখে, অল্প দূরে একটা জটলামতো হয়েছে। বোধহয় ওর পাড়ার বন্ধুবান্ধবদেরও দেখেছিল। জটলাটা কীসের, তা জানতেই অকুস্থলে গিয়েছিল ও। আচমকাই একটি গুলি এসে ঘাড়ে লাগে রাহুলের। ঠিকমতো চিকিৎসাও করাতে পারিনি আমরা। সঠিক সময়ে চিকিৎসা হলে হয়তো বেঁচে যেত।’ কেন হল না চিকিৎসা? কথা হচ্ছিল রাহুলের বন্ধু শুভমের সঙ্গে। বলছিলেন, ‘চিকিৎসার জন্য তো হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। নিয়ে যাব কীভাবে? গোটা এলাকা অবরুদ্ধ। অ্যাম্বুলেন্সে ফোন করা হয়েছিল। ভিতরে ঢুকতেই পারেনি। শেষে আরেক বন্ধুর মোটরবাইকে চাপিয়ে কাছের তিনটি নার্সিংহোম ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিছুই করা গেল না।’
বাবা, মা, দুই বোন এবং এক ভাই রয়েছে রাহুলের। ভাই এখনও সেভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়। ফলে একদিকে ছেলেকে হারানোর যন্ত্রণা, অন্যদিকে পরিবার কার্যত ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা, কারাওয়াল নগরের সোলাঙ্কি পরিবার আক্ষরিক অর্থেই দিশাহীন। আজ দুপুরেই জিটিবি হাসপাতালের অন্যতম প্রধান শীর্ষ কর্তা ডাঃ সুনীল কুমার জানিয়েছেন, ‘মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২০৪ জন। শুধুমাত্র আজ দুপুর পর্যন্তই আরও ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। যাঁদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। কারও শরীরে গুলি ঢুকেছে, কারও শরীরে ছুরিকাঘাত, কেউ আবার প্রাণে বাঁচতে বহুতল থেকে নিচে ঝাঁপ মেরে মারাত্মক জখম হয়েছেন।’ পূর্ব দিল্লির সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে তাই এই মুহূর্তে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। মর্গের সামনে যখন কান্নার রোল, ময়নাতদন্তের পর প্রিয়জনের দেহ হাতে আসার শূন্য অপেক্ষা, হাসপাতালের এমার্জেন্সি ওয়ার্ডের সামনে তখন আক্ষরিক অর্থেই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি। রক্তাক্ত অবস্থায় একের পর এক আহতদের নিয়ে আসা হচ্ছে, আর দৌড়চ্ছেন কর্মীরা। মুহূর্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে স্ট্রেচার, হুইল চেয়ার। বিন্দুমাত্র যাতে সময় নষ্ট না হয়, সেই কথা মাথায় রেখে এমার্জেন্সি ওয়ার্ডের সামনেই বসিয়ে রাখা হয়েছে সাতজন হাসপাতালের কর্মীকে। তাঁরা বললেন, ‘এটাই ক্যাজুয়াল ডিউটি। কিন্তু অন্যান্য সময় তাও দু’দণ্ড জিরোবার সময় পাওয়া যায়। গত রবিবার থেকে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। এরকম পরিস্থিতি আগে কখনও দেখিনি।’ ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে হাসপাতালের আপৎকালীন পরিষেবার ওয়ার্ডের সামনেই মোতায়েন করা হয়েছে দু’জন পুলিসকে। এছাড়া হাসপাতালের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী তো আছেনই। পরিচয়পত্র দেখালেও অনুমতি শুধুমাত্র হাসপাতাল সুপারের ঘর পর্যন্ত যাওয়ার। এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে ঢোকার ছাড়পত্র নেই। একইভাবে তৈরি রয়েছে দিল্লি গেটের অনতিদূরে এলএনজেপি (লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ) হাসপাতালও। এলএনজেপির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিসকর্মীরা জানিয়েছেন, আজ দুপুর পর্যন্ত দিল্লিতে সংঘর্ষের ঘটনায় দু’জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।