কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। উপার্জন ভাগ্য ভালো। কর্মে উন্নতির যোগ আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা মিলবে। ব্যবসা ... বিশদ
অসমের গোলাঘাট জেলার হালমিরা চা বাগান প্রকল্প। গত মাসে এখানেই ঘটে গিয়েছে ভয়াবহ ট্রাজেডি। বিষাক্ত মদ্যপানে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬০ জন। যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই গোলাঘাট ও পার্শ্ববর্তী জোরহাটের চা শ্রমিক। যাঁদের মধ্যে আবার ৪৭ জন হালমিরার। গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শতাধিক। যার ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল চা শিল্পে। কিন্তু, একমাস পর আর এটা বোঝার উপায় নেই যে সেখানে এত বড় ঘটনা ঘটে গিয়েছে। কারণ, কাজ না করলে তাঁদের জুটবে না রুটি-রুজি। সেকারণেই পরিজনের শোক ভুলে কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। কিন্তু, লোকসভা নির্বাচনের আগে বিষাক্ত এই মদ ট্রাজেডি শ্রমিকদের মনে একটা বিষয় গেঁথে দিয়েছে, ভোটের নামে নেতাদের থেকে আর মদ ‘উপঢৌকন’ নিতে চান না তাঁরা। উল্টে চান, বেআইনি মদকে ভোটের ইস্যু করে তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করুন নেতারা।
অসমজুড়ে রয়েছে ৮০০-এরও বেশি চা বাগান। কাজ করেন প্রায় ৬০ লক্ষ কর্মী। যা রাজ্যের মোট ভোটারের ১৭ শতাংশ। এই শ্রমিকরাই অসমের ১৪ লোকসভা আসনের মধ্যে কমপক্ষে চারটি ভাগ্য নির্ধারণ করেন। সেইমতো গত লোকসভা ভোটে তেজপুর, জোরহাট ও ডিব্রুগড় আসন তিনটি জিতেছিল বিজেপি। বাকি কালিয়াবর কেন্দ্রে জিতেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ পুত্র গৌরব। আর সেকারণেই এবারের ভোটে বড় ইস্যু হতে চলেছে হালমিরার বিষমদ ট্রাজেডি।
গত ৩০ মার্চ রাজ্যের আদিবাসি অধ্যুষিত ডিব্রুগড় জেলার মোরানে একটি বিশাল জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে একমাত্র ‘চা ওয়ালা’ই চা শ্রমিকদের যন্ত্রণা বুঝতে পারেন জানিয়ে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের স্বার্থে এনডিএ সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরেন মোদি। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার পাশাপাশি চা শ্রমিকদের দুই কিস্তিকে ৫০০০ টাকা, বিনামূল্যে চাল ও দু’কেজি চিনি দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু, একবারের জন্যও বিষমদকাণ্ডের কথা মুখে আনেননি প্রধানমন্ত্রী। তবুও, পাঁচ বছরে শ্রমিক স্বার্থে কাজের সুবাধে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি।
হালমিরার চা কর্মী বাবলু ভূমিজ বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে কংগ্রেসকে ভোট দিলেও চোখের সামনে গাজর ঝুলিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই হয়নি। বিজেপি সরকারের আসার পর থেকে আমাদের জন্য বেশকিছু উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। তবে, অবশ্যই ভোট কিনতে বাগানে মদ পাঠানোর রীতি কংগ্রেস-বিজেপি নির্বিশেষে অনুসরণ করে। কেননা, শ্রমিকদের ভোট কেনার এটাই সহজ পন্থা।’ দীর্ঘদিনের কংগ্রেস সমর্থক হলেও ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে শিবির বদল করে বিজেপি হন বাবলু।
হালমিরার আর এক চা কর্মী লক্ষ্মণ জানান, ‘বর্তমানে চা বাগানের ৭০ জন বিজেপির সমর্থক। বেশ কিছু জায়গায় আবার তা ৯০ শতাংশ। যে দল আমাদের সুবিধা দেবে, আমরা তাদেরই ভোট দেব। তবে, গত ৫০ বছরের কংগ্রেস শাসনের থেকে পাঁচ বছরে বিজেপি বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেছে। কংগ্রেস ভাবত, আমরা যেহেতু প্রান্তিক তাই যা দেওয়া হবে, তাই আমরা গ্রহণ করতে বাধ্য হব। চা শ্রমিক সম্প্রদায় কংগ্রেসকে বহু মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক দিলেও নিজেদের পরিবার ও বন্ধুদের জন্যই কাজ করেছে কংগ্রেস।’ শুধু আর্থিক সাহায্য নয়, প্রতিটি চা বাগানের মধ্যে সব মরশুমে চলার রাস্তা করতে এক কোটি টাকা করে বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। যা বিজেপিকে এবারের ভোটে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। যদিও, বরাদ্দ বাজেটের খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস।
পালে হাওয়া থাকলেও জোরহাট থেকে বর্তমান এমপি কামাক্ষ্যাপ্রসাদ তাসাকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। তার জায়গায় প্রার্থী করা হয়েছে অসমের মন্ত্রী তপন গগৈকে। তেজপুরে টিকিট দেওয়া হয়েছে আরেক মন্ত্রী তথা তরুণ চা শ্রমিক নেতা পল্লবলোচন দাসকে। তবে, ডিব্রুগড়ে প্রার্থী বিদায়ী এমপি রামেশ্বর তেলিই। তাঁর লড়াই আরেক চা শ্রমিক নেতা তথা কংগ্রেসের প্রাক্তন মন্ত্রী পবনসিং ঘাটওয়ারের সঙ্গে। যদিও, চা শিল্পের উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি বণিক সভা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোলাঘাটের এক চা মালিক বলেন, ‘অর্ধেক শিল্প লোকসানে চলছে। অর্ধেক ধুঁকছে। আক কিছু লাভে চলছে। এই পরিস্থিতি ভোটের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলি শুধু আশ্বাস দেয়। আর কর্মীরা উপঢৌকনের আশায় কাজের বদলে জনসভায় যান।’