কর্মপ্রার্থীরা বেশ কিছু সুযোগের সংবাদে আনন্দিত হবেন। বিদ্যার্থীরা পরিশ্রমের সুফল নিশ্চয় পাবে। ভুল সিদ্ধান্ত থেকে ... বিশদ
এই মন্দিরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আকাশছোঁয়া হলেও সরকারি সহায়তার অভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের কাজ করা যাচ্ছে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সঙ্কটে শিবশক্তি অন্নপূর্ণা মন্দির ও দেবোত্তর এস্টেট কর্তৃপক্ষ। পুজো-পার্বণে ভক্তদের সমাগম হলেও বছরের অন্যান্য সময় কার্যত ফাঁকাই থাকে এই মন্দির। সারাদিনে আসেন হাতেগোনা কয়েকজন। এই মন্দিরের ইতিহাসকে মাথায় রেখে এখানে পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করা যেত বলে দাবি করেছেন তালপুকুর এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের কথায়, রাজ্য সরকার ইচ্ছে করলে এখানে পর্যটনের ব্যবস্থা করতেই পারে। সেক্ষেত্রে সেজে উঠবে তালপুকুর, সংস্কার হবে মন্দিরের। কিন্তু সরকারের এদিকে নজর নেই। ফলে এই মন্দির সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। প্রতি বছর বহু মানুষ বারাকপুরের গান্ধীঘাট কিংবা মঙ্গল পাণ্ডের স্মৃতিসৌধ দেখতে আসেন। কিন্তু প্রচারের অভাবে দেবী অন্নপূর্ণার মন্দির আড়ালেই থেকে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, এখন অনেক কষ্ট করে ভাঙাচোরা অংশে জোড়াতালি দিয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এভাবে আর কতদিন, সন্দেহ রয়েছে। কারণ, এত বড় মন্দির সংস্কার করা মুখের কথা নয়। খরচ বিপুল। রাজ্য সরকার বিভিন্ন জায়গায় স্থাপত্য রক্ষায় টাকা ব্যয় করলেও এই মন্দিরের জন্য খরচ করছে না কেন, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। দেবোত্তর এস্টেটের সদস্য তথা সেবায়েত রাজা বিশ্বাস বলেন, মন্দির সংস্কারের জন্য এখনও রাজ্য সরকার কোনও টাকা দেয়নি। গুরুত্বের বিচারে এই মন্দির ‘হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি রাখে। কিন্তু সেসব কিছুই হয়নি।
কথিত আছে, ১৮৪৭ সালে রানি রাসমণি তাঁর জামাই মাথুর বিশ্বাস, আত্মীয়-স্বজন ও অসংখ্য দাস-দাসী নিয়ে কাশী যাচ্ছিলেন। রাতে নৌকোয় তিনি দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। ফলে কাশীযাত্রা বাতিল করে ফিরে এসে ১৮৫৫ সালে দক্ষিণেশ্বরে রানি প্রতিষ্ঠা করেন মা ভবতারিণীর মন্দির। কাশী গিয়ে অন্নপূর্ণা দর্শন বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় রানি রাসমণির মন বিচলিত হয়ে ওঠে। সেই সময় জামাই মাথুর বিশ্বাস দেবী অন্নপূর্ণার মন্দির প্রতিষ্ঠা করার আশ্বাস দেন। মাথুর বিশ্বাসের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী তথা রানির ছোট মেয়ে জগদম্বাদেবী এব্যাপারে উদ্যোগী হন। দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীর মন্দির প্রতিষ্ঠার ঠিক কুড়ি বছর পর ১৮৭৫ সালের এপ্রিলে চাণকে অন্নপূর্ণা দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। সেদিনের সেই চাণকই হল আজকের বারাকপুর। মন্দির প্রতিষ্ঠার যাবতীয় ব্যবস্থা করেছিলেন মাথুর বিশ্বাসের ছেলে দ্বারিকানাথ। এই মন্দিরে চারবার এসেছিলেন রামকৃষ্ণদেব। তৈরি হয়েছিল ন’টি চূড়া বিশিষ্ট নবরত্ন মন্দির, বৃহৎ নাটমন্দির, ছ’টি আটচালার শিবমন্দির, দু’টি নহবতখানা, গঙ্গার ঘাট, ভোগের ঘর ইত্যাদি। সেই যুগেই এই স্থাপত্য তৈরিতে খরচ হয়েছিল প্রায় তিন লক্ষ টাকা। রয়েছে ছ’টি শিবমন্দিরও। মন্দিরে অধিষ্ঠিত শিব ও অন্নপূর্ণার বিগ্রহ অষ্টধাতু দিয়ে তৈরি। নাটমন্দিরের থামে গোথিক স্থাপত্যের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। -নিজস্ব চিত্র