কর্মপ্রার্থীদের বিভিন্ন দিক থেকে শুভ যোগাযোগ ঘটবে। ব্যবসায় যুক্ত হলে ভালোই হবে। প্রেম-প্রণয়ে নতুনত্ব আছে। ... বিশদ
রাতুল ঘোষ : ইউরোপিয়ান ফুটবলের প্রথম সারির ক্লাবের তকমা অনেক দিন আগেই খুইয়েছে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। ২০১৩ সালে দীর্ঘ ২৬ বছরের কোচিং ইনিংস শেষ করে ওল্ড ট্রাফোর্ড থেকে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের প্রস্থানের পর থেকেই এই ক্রমিক অধঃপতনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কেয়ারটেকার কোচ সোলকজারের আমলেও মঙ্গলবার রাতে যা অপরিবর্তিত রইল। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাউন্ড অব সিক্সটিনে প্রথম পর্বের হোম ম্যাচে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে ২-০ গোলে হারিয়ে প্যারি সাঁ জাঁ ওল্ড ট্রাফোর্ড ছাড়ল। এই ঘরের মাঠে অতীতে কোনও ফরাসি ক্লাব হারাতে পারেনি ম্যান ইউকে। আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের হোম ম্যাচে ম্যান ইউয়ের একাধিক গোলে পরাজয়ও এক নজিরবিহীন ঘটনা। তবে মানতেই হবে, পিএসজি’র রক্ষণে থিয়াগো সিলভা, কিমপেম্বেরা অসাধারণ দৃঢ়তা দেখিয়ে শূন্যে ও জমিতে কার্যত বক্সে কারফিউ জারি করেছিলেন। তাই সেইভাবে গোলের মুখ খুলতে ব্যর্থ হয় ম্যান ইউ।
তাও মঙ্গলবার চোটের জন্য পিএসজি’র আপফ্রন্টে খেলতে পারেননি নেইমার ও এডিনসন কাভানি। তা সত্ত্বেও কিলিয়ান এমবাপের দুরন্ত গতি ও অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া’র অনবদ্য গেম মেকিং ম্যান ইউয়ের যাবতীয় সীমাবদ্ধতাকে উন্মোচিত করে দেয়। বাঁ-প্রান্তে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া’কে আটকাতে নাজেহাল হয়ে গেলেন অ্যাশলি ইয়ং। বিরতির আগে ঈষৎ বেপরোয়া হয়ে টাচ লাইনের ধারে তিনি কনুইয়ের গুঁতোয় ডি মারিয়াকে ছিটকে বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ডের ওপর ফেলে দেন। অন্যদিকে, ম্যান ইউয়ের দুই আক্রমণাত্মক ফুটবলার জেসি লিংগার্ড ও অ্যান্টনি মার্শাল প্রথমার্ধের শেষ দিকে এমন চোট পান যে দ্বিতীয়ার্ধে তাঁরা আর মাঠে নামতে পারেননি। তাঁদের দুই পরিবর্ত অ্যালেক্সি স্যাঞ্চেজ ও হুয়ান মাতা শেষ ৪৫ মিনিটে দাগ কাটতে ব্যর্থ হন। মার্কাস র্যাশফোর্ডের অবস্থাও ছিল তথৈবচ। আসলে গত ১১টি ম্যাচের মধ্যে ১০টিতে জয় পেয়ে সোলকজারের কোচিংয়ে ম্যান ইউ সমর্থকরা নিজেদের অপ্রতিরোধ্য মনে করছিল। মঙ্গলবার রাতে পিএসজি তাদের বাস্তবের রুক্ষ জমিতে আছড়ে ফেলল।
ইপিএলের মাঝারি মানের দলগুলির বিরুদ্ধে পরপর জয় পেয়েছিল ম্যান ইউ। তাই অনেক আশা নিয়ে ওল্ড ট্রাফোর্ডের ভিআইপি বক্সে খেলা দেখতে এসেছিলেন কিংবদন্তি কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসন, ডেভিড বেকহ্যাম, রায়ান গিগসরা। কিন্তু তাঁরা মাঠ ছাড়লেন চূড়ান্ত হতাশ হয়ে। আগামী ৬ মার্চ পিএসজি’র ঘরের মাঠ প্যারিসের ‘পার্ক দ্য প্রিন্সেস’ স্টেডিয়ামে দু’গোলের ব্যবধান ঘুচিয়ে ম্যান ইউয়ের পক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানো খুবই কঠিন। কারণ এই ধরনের পিছিয়ে পড়া ম্যাচ জিততে গেলে যে রসদ দরকার তা এই ম্যান ইউ দলের আছে বলে মনে হয় না। যদিও পিএসজি’র পক্ষে গত দু’বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাউন্ড অব সিক্সটিনের ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে দুই মরশুম আগে ঘরের মাঠে বার্সেলোনাকে ৪-০ গোলে চূর্ণ করেও ন্যু-ক্যাম্প স্টেডিয়ামে তাঁরা ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল মেসিদের কাছে। আর গত মরশুমে এই একই পর্যায়ে রিয়াল মাদ্রিদও দু’দফায় তাঁদের পাঁচ গোল মেরেছিল।
মঙ্গলবার ম্যান ইউয়ের খেলায় তেমন ইম্প্রোভাইজেশনের ছাপ চোখে পড়েনি। মন্থর বিল্ডআপ, রক্ষণে দুর্বলতা তো ছিলই, সর্বোপরি জয়ের খিদেটাই তাঁদের খেলায় অনুপস্থিত ছিল। শুরুতে পল পোগবা কিছুটা ঝটকা মারার চেষ্টা করেছিলেন। ১৬ মিনিটে অ্যাটাকিং থার্ডে পৌঁছে একক প্রয়াসে পিএসজি’র দু’জনকে টপকে তিনি প্রথম পোস্টে শট নেন। কিন্তু ৪১ বছর বয়সি কিংবদন্তি গোলরক্ষক গিগি বুফোঁ প্রথম পোস্ট কভার করে বল তুলে নেন। বুফোঁ যেদিন প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে নেমেছিলেন তখন জন্ম হয়নি কিলিয়ান এমবাপে ও মার্কাস র্যাশফোর্ডের। সেই বুফোঁকেই সেইভাবে পরীক্ষার মুখে মঙ্গলবার ফেলতে পারেনি ম্যান ইউ। অন্তিমপর্বে ৮৯ মিনিটে পোগবা দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখে মার্চিং অর্ডার পেয়ে মাঠ ছাড়েন। এর ফলে আগামী ৬ মার্চ ফিরতি ম্যাচে পোগবার সার্ভিস পাবে না ম্যান ইউ। অথচ কাভানি ওই ম্যাচে দলে ফিরবেন।
ছয় মরশুম আগে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ৫৯ মিলিয়ন পাউন্ড গুণে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকে কিনেছিল। কিন্তু তৎকালীন কোচ লুই ফন গল কিছুতেই ডি মারিয়াকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে নিয়মিত সুযোগ দিয়ে থিতু হতে দেননি। তাই ম্যান ইউ ছেড়ে পিএসজি’তে পাড়ি দিয়েছিলেন ডি মারিয়া। মঙ্গলবার বাঁ-প্রান্তে একের পর এক আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়ে এই আর্জেন্তাইন অ্যাটাকারটি তাঁর জাত চেনালেন। পিএসজি’র দুটি গোলই এসেছে ডি মারিয়ার অ্যাসিস্ট থেকে। ম্যান ইউ সমর্থকরা গ্যালারি থেকে ক্রমাগত ব্যঙ্গবিদ্রূপ করে গেলেন ডি মারিয়াকে। কিন্তু তিনি মন-প্রাণ ঢেলে অনবদ্য ফুটবল উপহার দিয়ে একাই ঢেকে দিলেন নেইমার-কাভানিদের অভাব। যদি নেইমার মাঠে থাকতেন তাহলে হয়তো আরও দুরবস্থা হত ম্যান ইউয়ের। প্রথমার্ধের সহজতম সুযোগটি নষ্ট করেন পিএসজি’র কিলিয়ান এমবাপে। ছ গজ দূর থেকে তাঁর শট সাইড নেটে আছড়ে পড়ে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় তোলে পিএসজি। যা সামাল দিতে পারেনি ম্যান ইউ রক্ষণ। ৫৩ মিনিটে ডি মারিয়ার কর্নার যখন ছোট বক্সে উড়ে আসছে তখন পিছন থেকে ছুটে এসে শূন্যে লাফিয়ে বাঁ-পায়ে নিখুঁত ফিনিশ করেন পিএসজি’র ডিফেন্ডার কিমপেম্বে (১-০)। ৬০ মিনিটে পিএসজি’র দ্বিতীয় গোল। বাঁ-দিক থেকে অনবদ্য থ্রু বাড়ান ডি মারিয়া। দুই ম্যান ইউ ডিফেন্ডার লিন্ডেলফ ও এরিক বেইলির মাঝখান দিয়ে ঝড়ের গতিতে বক্সে ঢুকে ছ গজ দূর থেকে ডান পায়ে ফ্লিক করে ম্যান ইউ গোলরক্ষক ডেভিড ডে গিয়াকে পরাস্ত করেন কিলিয়ান এমবাপে (২-০)। এই মরশুমে ইতিমধ্যেই ২৩ গোল করে ফেললেন ফরাসি ফুটবলের এই বিস্ময় প্রতিভা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটি এমবাপের চর্তুদশ গোল। যা জিনেদিন জিদানের সারা জীবনের সংগ্রহ।
ম্যাচের শেষে ম্যান ইউ কোচ সোলকজার স্বীকার করে নেন, ‘আমরা ওদের গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারিনি। অ্যাওয়ে ম্যাচের আগে এই নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। গত ১১টি ম্যাচে আমাদের দল ভালো ফুটবল উপহার দিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার পিএসজি বেটার ফুটবল খেলে জিতেছে। এমবাপের দ্বিতীয় গোলটি টপ কোয়ালিটির ফসল।’ আসলে ম্যান ইউ দূর্গের নীচে ডেভিড ডে গিয়া অনবদ্য দক্ষতায় তিনটি মোক্ষম সেভ না করলে আরও বড় ব্যবধানে হারতো ম্যান ইউ। পিএসজি কোচ টমাস তুসেল অবশ্য ম্যাচের পর জানান, ‘সবে দুই পর্বের ম্যাচের হাফ টাইম হল। দু’ গোলের লিড নিয়ে আমরা ঘরের মাঠে খেলতে নামব এটাই স্বস্তির ব্যাপার।’