উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
এখন মনে হতে পারে, হঠাৎ এ নিয়ে এত আলোচনা কেন? আসলে সিপ্রি বা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরই এই তুলনাটা উঠে আসছে। ভাবতে হচ্ছে কোনটা অগ্রাধিকার? সকলের পেটে ভাতের জোগান নাকি কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ত্রসম্ভার বাড়ানো!
কী আছে এই রিপোর্টে? ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত সিপ্রির রিপোর্টে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সামরিক ব্যয় গত বছর বেড়ে ১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে। অর্থের বিচারে এটি আগের সব হিসেবকে টপকে বিশ্বে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে রীতিমতো চোখ রাঙাচ্ছে। এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত, তাই এই সামরিক প্রতিযোগিতার সূচনা করেছে। আর এতে ইন্ধন জুগিয়েছে আমেরিকা ও চীনের দ্বন্দ্ব।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তার দোহাইয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সশস্ত্রীকরণ একটি অপরিবর্তনীয় বাস্তবতা। স্নায়ুযুদ্ধের সময় এমন অজুহাতে সুস্পষ্টভাবে বিভক্ত দুই শিবিরে এমন সশস্ত্রীকরণের ভয়ঙ্কর রূপ বিশ্ব দেখেছে, যা বিশ্বের মানুষকে নিরাপত্তার বদলে অনিরাপত্তার বোধেই আক্রান্ত করেছে বেশি। সেই সময়টিই যেন আবার ফিরে এসেছে।
শুরুটা হয়েছে অবশ্য আমেরিকার হাতে। আমেরিকার সামরিক বাজেট এমনিতেই বিপুল ছিল। ২০১৮ সালে তা আরও বাড়ানো হয়। সামরিক ব্যয় একটি সীমার মধ্যে রাখার বিষয়ে কংগ্রেসের আরোপ করা বাধ্যবাধকতা ভেঙে সাত বছরে প্রথমবারের মতো এই ব্যয়বৃদ্ধি সারা বিশ্বকেই নতুন প্রতিযোগিতার বার্তা দেয়। এর মূল লক্ষ্য অবশ্যই ছিল চীন এবং রাশিয়া। আর এই দুই দেশ খুব দ্রুত এর পাঠোদ্ধার করে ‘শক্তি দেখানোর প্রতিযোগিতা’য় নেমে পড়ে। যার ফল হল ভয়াবহ। সিপ্রির তথ্য বলছে, গত বছর সারা বিশ্বে সামরিক খাতে ব্যয় হয়েছে ১ লক্ষ ৮২ হাজার কোটি ডলার। আগের বছরের চেয়ে এই পরিমাণ ২.৬ শতাংশ বেশি। আর এই ব্যয়ের প্রায় অর্ধেকই করেছে আমেরিকা ও চীন মিলে। এ দুই দেশ মিলে গত বছর সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ৮৯ হাজার ৯০০ কোটি ডলার।
‘দ্য ইকোনমিস্ট’ জানাচ্ছে, ২০১৭ সালে আমেরিকার সামরিক ব্যয় ছিল ৬৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার, যা প্রথম দশে থাকা আটটি দেশের মোট সামরিক ব্যয়ের প্রায় কাছাকাছি। কিন্তু এটাও সন্তুষ্ট করতে পারেনি পেন্টাগনকে। গত বছর মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনকে বরাদ্দ করে ৭১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। না, এখানেই শেষ নয়। আসছে বাজেটে তারা সামরিক খাতে ৭৫ হাজার কোটি ডলার চেয়ে রেখেছে। একমাত্র ইরাক যুদ্ধ ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার সামরিক বাজেট এত বেশি আর কখনও বাড়ানো হয়নি বলেই দাবি ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর।
এই দিক থেকে চীন কিছুটা পিছিয়েই আছে বলা যায়। আমেরিকা যেখানে জিডিপির ৩.২ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করে, চীন সেখানে মাত্র ১.৯ শতাংশ। এর অর্থ হচ্ছে চীনের সামরিক সম্প্রসারণের আরও বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। আর ঠিক সেটাই হয়েছে। সিকি শতক ধরে চীনের সামরিক ব্যয়বৃদ্ধি এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্যে সুস্পষ্ট পরিবর্তন এনেছে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে চীনের সামরিক বাজেট বাড়ে ৮৩ শতাংশ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইআইএসএসের তথ্য বলছে, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে চীন তার নৌবাহিনীর যে ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে, তা ভারত ও ফ্রান্সের নৌবাহিনীর মিলিত শক্তিকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। ইউএস নেভাল ওয়ার কলেজের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু এরিকসন ‘দ্য ইকোনমিস্ট’কে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জি জিনপিংয়ের আমলে চীন যে মাত্রায় সামরিক সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে, তা চীনের ইতিহাসেই বিরল।’
নিজেদের সামর্থ্যবৃদ্ধিতে চীনের এহেন পদক্ষেপ সামষ্টিক শঙ্কাকেই বাড়িয়ে তুলেছে। চীনের সামরিক সম্প্রসারণ বৃদ্ধিকে হুমকি হিসেবে নিয়ে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছে জাপান। চুপ করে বসে নেই ভারতও। ভারত এরই মধ্যে সামরিক ব্যয় যা বাড়িয়েছে, তা ইউরোপের অধিকাংশ দেশকেই ছাড়িয়ে গিয়েছে। ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক ব্যয় ২০০৫ সালের পর সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে চীনের পদক্ষেপে নিভৃতেই এশিয়ায় শুরু হয়ে গিয়েছে সশস্ত্রীকরণ প্রতিযোগিতা। ১৯৮৮ সালে যেখানে এশিয়ার দেশগুলোর বাজেটের ৮ শতাংশ ব্যয় হতো সামরিক খাতে, এখন তা বেড়ে ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে সিপ্রি।
পিছিয়ে নেই ইউরোপীয় দেশগুলোও। ন্যাটোভুক্ত ইউরোপীয় দেশগুলো ২০১৮ সালে সামরিক বাজেট আগের বছরের তুলনায় ৪.২ শতাংশ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে আইআইএসএস। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সামরিক দিক থেকে ইউরোপ সম্মিলিতভাবে বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিধর অঞ্চলে পরিণত হবে, যার শক্তির মাত্রা রাশিয়ার চেয়ে চার গুণ হবে। এই হিসেবটিও নিশ্চয় রাশিয়া করছে। তবে আন্তর্জাতিক এই প্রবণতায় বড় ব্যতিক্রম হচ্ছে আফ্রিকা। সিপ্রির রিপোর্ট বলছে, গত চার বছরে আফ্রিকার দেশগুলির সামরিক বাজেট কমেছে ৮.৪ শতাংশ।
অর্থাৎ, ইচ্ছা থাকলে উপায় ঠিক বের হয়। অপুষ্টি ও ক্ষুধামুক্ত জনগোষ্ঠী অনেক বেশি উৎপাদনশীল হলেও সামরিক খাত শুধু চোখ রাঙাতেই পারে। আর তারপরও এসব খাতে তহবিল জোগানের প্রশ্নকে এড়িয়ে বিশ্বনেতারা নির্দ্বিধায় সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে চলেন। নামেন প্রতিযোগিতায়। আর পোয়াবারো হয় যুদ্ধবাজদের।
কী আছে সিপ্রি বা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিপোর্টে?
২৯ এপ্রিল প্রকাশিত সিপ্রির রিপোর্টে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সামরিক ব্যয় গত বছর বেড়ে ১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে। অর্থের বিচারে এটি আগের সব হিসেবকে টপকে বিশ্বে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে রীতিমতো চোখ রাঙাচ্ছে। এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত, তাই এই সামরিক প্রতিযোগিতার সূচনা করেছে। আর এতে ইন্ধন জুগিয়েছে আমেরিকা ও চীনের দ্বন্দ্ব।