নয়াদিল্লি: তাপপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি, বন্যা। দেশের নানা অঞ্চল এই মুহূর্তে কোনও না কোনও প্রাকৃতিক বিরূপতার কবলে। আবহাওয়া বিশারদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব পুরোদমে পড়তে শুরু করেছে দেশের উপর। যত দিন যাবে, প্রকৃতির ভয়াল রূপ আরও স্পষ্ট হবে বলেই তাঁদের আশঙ্কা। কয়েকদিন আগেই সাম্প্রতিক কালের মধ্যে উষ্ণতম মার্চ ও এপ্রিল মাসের অভিজ্ঞতা হয়েছে দেশবাসীর। মে মাসের মাঝামাঝি এসেও তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশের রাজধানী দিল্লি সহ উত্তর ভারতের নানা এলাকা। কেরল ও লাক্ষাদ্বীপে গত রবিবার অস্বাভাবিক বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিছু জায়গায় জারি করতে হয়েছে লাল সতর্কতা। পূর্ব ভারতের অসমে ডিমা হাসাও জেলায় আচমকা হড়পা বান নেমে এসেছে এবং বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক ধস নেমেছে। এসব ঘটনা কোনওটাই বিচ্ছিন্ন নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলশ্রুতি বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদ ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। 
সম্প্রতি দিল্লির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস টপকে যায়। পার্শ্ববর্তী শহর গুরগাঁওয়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, দেশের রাজধানীর এই তাপমাত্রা ১৯৬৬ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাকিল আহমেদ রমশুর মতে, তাপপ্রবাহ আরও বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই দেশজুড়ে বাড়বে এই ঘটনা। পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটেরোলজির তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, মধ্য এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে চলতি বছর এপ্রিলে গত ১২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের আইপিসিসির রিপোর্ট আগেই জানিয়েছে, সারা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে শুধুমাত্র তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে ভাবলে ভুল হবে। এই পরিস্থিতির কারণে বায়ুপ্রবাহের হেরফের পর্যন্ত হচ্ছে। বায়ুমণ্ডলে নানা পরিবর্তনের কারণে আমূল বদলে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গার আবহাওয়া। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কার্বন নিঃসরণ কমানো, গাছ লাগানো, পরিবেশবান্ধব উপায়ে নগর পরিকল্পনা ইত্যাদি না করা গেলে মানব সভ্যতাই অচিরে ধ্বংসের মুখে পড়বে বলে ফের সতর্ক করে দিয়েছেন তাঁরা।