নয়াদিল্লি: পশ্চিমবঙ্গে চোখ রাঙাচ্ছে আর্সেনিক দূষণ! জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল বা পরিবেশ আদালতে এমনটাই জানাল কেন্দ্র। আদালতে দেওয়া কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ভূগর্ভস্থ জল থেকে সবচেয়ে বেশি আর্সেনিক দূষণের শিকার পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার। এনজিটিতে চালের মাধ্যমে আর্সেনিক ছড়ানো সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি চলছে। এই বিষয়ে কেন্দ্রের মত জানতে চান পরিবেশ আদালতের চেয়ারপার্সন বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও সদস্য এ সেনথিল ভেল। তার উত্তরে কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক উন্নয়ন মন্ত্রক জানিয়েছে, চাষে বেশি জল প্রয়োজন হওয়ায় ধানগাছ সহজেই জল ও মাটি থেকে আর্সেনিক শোষণ করে নিতে পারে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুই প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে আর্সেনিযিুক্ত ভূগর্ভস্থ জল সেচের মাধ্যমে কৃষিজমির মাটির সঙ্গে মিশছে। পরে শস্যের মাধ্যমে আর্সেনিক আমাদের খাদ্যশৃঙ্খলেও প্রবেশ করছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই রিপোর্ট তৈরি করেছে কেন্দ্র। অন্য রাজ্যগুলি এই দূষণ থেকে নিরাপদ, এমনটা ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই বলেও জানিয়েছে তারা। কারণ আর্সেনিক দূষণ অত্যন্ত বেশি এমন এলাকায় যে চাল উত্পন্ন হয়, তা দূষণহীন বা কম দূষিত এলাকাতেও পাঠানো হচ্ছে। ফলে যে এলাকার জলে আর্সেনিক নেই, সেখানকার বাসিন্দাদের শরীরেও নীরবে প্রবেশ করছে দূষণের বিষ! রিপোর্ট প্রসঙ্গে নবান্নের তরফে বলা হয়েছে, আর্সেনিক মুক্ত জলের জন্য ইতিমধ্যেই নানাবিধ কাজ হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ জল যাতে দূষিত না হয় ও তার স্তর যাতে নীচে নেমে না যায়, তার জন্যও জলজীবন মিশনে সারফেস ওয়াটার ব্যবহারে জোর দেওয়া হচ্ছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাছের শিকড়, কাণ্ড হয়ে পাতায় আর্সেনিক ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের শাক ও যে সব গাছের মাটির নীচের অংশ সব্জি হিসেবে খাওয়া হয়, সেগুলিতে আর্সেনিক থাকে সবচেয়ে বেশি। তুলনায় বেগুন, টম্যাটো বা বিনসের মতো যে সব গাছের ফল সব্জি হিসেবে খাওয়া হয়, সেগুলি থেকে আর্সেনিক শরীরে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম।
তবে শুধু আশঙ্কা নয়, আশার কথাও বলা হয়েছে ওই রিপোর্টে। দূষণ ঠেকাতে বেশি জল শোষণকারী ধানের বদলে আর্সেনিক প্রতিরোধী ধানের চাষ বৃদ্ধি, জমিতে কম জল শোষণকারী সব্জির চাষে জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া যে সব এলাকায় আর্সেনিক দূষণ সবচেয়ে বেশি, সেখানে খাওয়া হয় না এমন গাছ বা ডালজাতীয় শস্যের চাষ করতে বলেছেন তাঁরা। বিশেষভাবে তৈরি চারকোল, সবুজ সার ও সিলিকেট সারের ব্যবহার বাড়ানোর কথাও ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। জলে আর্সেনিকে মাত্রা কমানোর উপায় হিসেবে দূষিত জল কোনও পুকুরে ধরে রেখে তার সঙ্গে বৃষ্টির জল মেশাতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।