নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বারলার ‘বঙ্গভঙ্গ’ প্রস্তাব ধামাচাপা দিতে তৎপর তাঁর দলেরই উচ্চতর নেতৃত্ব। তাঁর এ সংক্রান্ত মন্তব্য খারিজ করে দিয়েছেন বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। যদিও এই ইস্যুতে রাজ্য-রাজনীতিতে শোরগোল পড়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমের কিছু ঘটনা। সেখানে প্রতিদিনই বাড়ছে বিক্ষোভ। কেন এই বিক্ষোভ? দার্জিলিংয়ের সঙ্গে সিকিমের সংযুক্তিকরণের পুরনো বিষয়টি সুকৌশলে ফের প্রচারে তুলে এনেছে গেরুয়া শিবির। দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা কয়েকদিন আগেই জানিয়েছেন, তাঁরা জিটিএ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। কারণ গোর্খাল্যান্ড সংক্রান্ত সমস্যার কোনও সমাধান জিটিএ করতে পারবে না। একইসঙ্গে তিনি জানান, শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এই সময় গোর্খা রাষ্ট্রীয় কংগ্রেস রাজ্যপাল জগদীপ ধনকারকে দেওয়া স্মারকলিপিতে ডুয়ার্সের একাংশ, দার্জিলিং ও সিকিমকে সংযুক্তিকরণের প্রস্তাব দিয়েছে। সিকিমবাসীর একাংশের মনে এখন প্রশ্ন, রাজু বিস্তার কথা অনুযায়ী গোর্খাল্যান্ড সমস্যার সমাধান কি তাহলে এই সংযুক্তিকরণের পথেই করার কথা ভাবছে কেন্দ্র? এই প্রশ্নে সিকিমে বিক্ষোভ বাড়ছে। সংযুক্তিকরণের প্রস্তাব বা ভাবনাচিন্তার বিরুদ্ধে ক্রমশ একজোট হয়ে পথে নামছে সিকিমের ছাত্র-যুবরা। মূলত পূর্ব সিকিম এবং দক্ষিণ সিকিমের বিভিন্ন অংশে গত ক’দিনে বেশ কিছু বিক্ষোভ সেখানকার প্রশাসনের মাথাব্যথা বাড়িয়েছে। সিকিমের বিভিন্ন এলাকায় মূলত ছাত্রছাত্রীরা এখন বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ন্যাশনালিস্ট সিকিম ইউনাইটেড অর্গানাইজেশন নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে। তাদের অন্যতম নেতা দেওকুমার প্রধান বলেন, ২০১৬ সাল থেকে কেন্দ্র এই রকম একটা চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা কোনওভাবেই এই সংযুক্তিকরণের প্রস্তাব মেনে নেব না। এই সংযুক্তিকরণে সিকিমের মানুষের কোনও লাভ নেই। উল্টে নানা সমস্যায় পড়তে হবে আমাদের। তাছাড়া চরিত্রগতভাবে দু’টি এলাকা আলাদা। তাই আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছি।
ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, সিকিমের এই আন্দোলন যদি ক্রমশ বাড়তে থাকে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে অচিরেই এর প্রভাব পড়বে। পৃথক গোর্খাল্যান্ডের অন্যতম দাবিদার বিমল গুরুংরা রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে চলে যাওয়ায় এই ইস্যুতে তারা নীরব রয়েছে এখনও। এখন বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকার সিকিমের সঙ্গে দার্জিলিংয়ের সংযুক্তিকরণের কথা ভাবলে ফের আগুন জ্বলতে পারে পাহাড়ে। সিকিমের আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, তারা পৃথক গোর্খাল্যান্ডের বিপক্ষে নয়। আর গোর্খাল্যান্ডের সমর্থকরাও কেউ সিকিমের সঙ্গে মিশে যেতে চায় না। তারপরও এই পথে কেন্দ্র সমাধান চাইলে তা উল্টে নতুন সমস্যার জন্ম দিতে পারে।
রাজনৈতিক মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, সিকিমের সঙ্গে দার্জিলিংকে জুড়ে দিতে পারলে পরের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি’র কিছু বাড়তি সুবিধা হতে পারে। সেই সম্ভাবনা থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার এমন প্রস্তাব কার্যকর করতে পারে। এই পথে গোর্খাল্যান্ড সমস্যার সমাধান হয়ে গেল বলেও তারা পাহাড়ে প্রচারে দাবি করতে পারে। যদিও সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং গোলে এই ধরনের প্রস্তাব নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। সিকিমের বিজেপি সভাপতি ডি বি চৌহানও এই প্রস্তাবের সরাসরি বিরোধিতা করেছেন। এই সংযুক্তিকরণের কোনও প্রসঙ্গই নেই বলে জানান তিনি।