নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাংলায় বিক্রি করে ইতিমধ্যেই ৫০ কেজির আলু ভর্তি প্যাকেট থেকে কোথাও ২৫০ আবার কোথাও ৩০০ টাকা মুনাফা মিলেছে! এবার বিস্তর সরকারি বিধিনিষেধের মধ্যে প্রতিবেশী ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড বা বিহারে আলু বোঝাই ট্রাক পৌঁছে দিতে পারলেই মুনাফা কমবেশি তিন লক্ষ টাকা। আর সেই মুনাফার লোভেই নানা কৌশলে সরকারি ‘নাকা’ এড়িয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসের গোড়া থেকে শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত বিশেষ করে ওড়িশায় পৌঁছে গিয়েছে একের পর এক ট্রাক। আর তার জেরেই এ বাংলার খোলাবাজারে হেঁসেলের অন্যতম উপকরণ আলু ‘মহার্ঘ’ হয়ে উঠেছে।
পরিহাসের বিষয় হল, এ রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে আলু যখন কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, তখন ওড়িশার ভুবনেশ্বর, বিহারের কিষানগঞ্জ এবং ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের বাজারে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা কেজিতে তা বিকিয়েছে, পাচারকারীদের সৌজন্যে। কৃষি বিপণন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ রাজ্যের মানুষের কাছে দামের বোঝা চাপিয়ে ভিন রাজ্যে আলু পাঠানো যাবে না, এ নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা সত্ত্বেও প্রতিদিন যেভাবে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে আলু পাচার হচ্ছে, তা চিন্তার। এই পাচার পুরোটা রোধ করা গেলে, রাজ্যের খুচরো বাজারে আলুর দাম অনেকটাই কমবে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ৮ লক্ষ মেট্রিক টনেরও বেশি আলু ভিন রাজ্যে পাচার হয়েছে। এখন রাজ্যের বিভিন্ন হিমঘরে প্রায় ছ’লক্ষ মেট্রিক টন আলু রয়েছে। বঙ্গবাসী চাহিদা মেটাতে মজুত সেই আলুও, মোটা মুনাফার লোভে ভিন রাজ্যে পাচার করতে তৎপর হয়ে উঠেছে অসাধু চক্রের সঙ্গেই এক শ্রেণির হিমঘর মালিকও। কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না জানিয়েছেন, নানা কৌশলে আলু পাচার করা হচ্ছে ভিন রাজ্যে। কোন ট্রাকে কতটা আলু চাপিয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, তার নম্বর জোগাড় করেছে পুলিস। এখন ট্রাকগুলির গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) ট্র্যাক করে তাদের ভিনরাজ্যের যাত্রাপথ দেখা হচ্ছে। কিন্তু আধিকারক-পুলিসের নজরদারি এড়িয়ে ভিন রাজ্যে আলু পাচার হচ্ছে কীভাবে? বেচারামবাবুর কথায়, লোকেশন ট্র্যাক করে যদি জানা যায়, নাকা চেকপোস্ট থাকা সত্ত্বেও, আলু বোঝাই ট্রাক সেখান দিয়ে পার হয়েছে, তবে সংশ্লিষ্ট পোস্টের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকের কাঁধে দায় বর্তাবে। তদন্ত করে দেখা হবে তাঁর ভূমিকাও। কৃষি বিপণন দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, বিহার-ঝাড়খণ্ডে তো পাচার হচ্ছেই, তবে সবচেয়ে বেশি আলু যাচ্ছে ওড়িশাতে। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোড, গড়বেতা, বাঁকুড়ার কোতুলপুর থেকে সবচেয়ে বেশি পাচার হচ্ছে। ওড়িশার ঝাড়সুগদা, সম্বলপুর, কোরাপুট, রউরকেল্লা , রায়গড় এবং ভুবনেশ্বরের কমিশন মান্ডিতে গত কয়েকদিন ধরে শুধুমাত্র ‘ডব্লুবি-৩৩’ আরটিও কোডের ট্রাক-লরির দেখাই মিলছে। এই ট্রাকগুলির প্রতিটিতে ৫০০-৬০০ প্যাকেট আলু বোঝাই হয়ে পৌঁছচ্ছে। দাম কমছে না এ রাজ্যের খুচরো বাজারে।