বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
সোমবার সিডনিতে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফির চতুর্থ তথা শেষ টেস্টের পঞ্চম দিনের খেলা বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হতেই ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যায় ভারতের। যার কাণ্ডারি কোহলি। প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক হিসাবে ক্যাঙারুর দেশে টেস্ট সিরিজে সাফল্যের ধ্বজা ওড়ালেন তিনি। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কোহলি বললেন, ‘সত্যি বলতে কি, ভারতীয় দলের একজন সদস্য হিসেবে এমন গর্ব আমি আগে কখনও অনুভব করিনি। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময়ই লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছিলাম। গত এক বছর আমরা যা পরিশ্রম করেছি, আজকের সিরিজ জয় তারই ফসল।’
কথাগুলো বলার সময় কোহলির মুখাবয়ব থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছিল তৃপ্তির ঝলকানি। মুখের চওড়া হাসিতে মিশে ছিল কীর্তির গৌরব। আসলে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জিততে না পারার যে মিথ যুগ যুগ ধরে বয়ে বেড়াচ্ছিল ভারতীয় ক্রিকেট, আজ তাঁর হাত ধরেই সেই শাপমুক্তি ঘটেছে। এই সিরিজ জয়কে ব্যক্তিগতভাবে নিজের ক্রিকেট জীবনের সেরা সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন কোহলি। তাঁর কথায়, ‘এটা আমার কেরিয়ারের সেরা সাফল্য। ২০১১ সালে আমরা যখন বিশ্বকাপ জিতেছিলাম, তখন আমার বয়স খুবই কম ছিল। বিশ্বকাপজয়ী সেই দলে আমি ছিলাম সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। চারপাশের সকল সতীর্থকেই সেদিন আমি অদ্ভুত রকম আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে দেখেছিলাম। তবে আমি নিজে সেভাবে ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে পারিনি। কিন্তু আজ আমার মধ্যে এক অন্য অনুভূতি কাজ করছে। বিদেশের মাটিতে এমনই একটা সাফল্য আমরা চেয়েছিলাম। আর সে কারণেই আনন্দটা বেশি হচ্ছে।’ কোহলি সেই সঙ্গে যোগ করেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় এটা আমার তৃতীয় সফর। এতদিন ভারতীয় ক্রিকেট দল যা পারেনি এবার আমরা সেটাই করে দেখালাম। স্বভাবতই এই সাফল্যে আমরা গর্বিত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই জয় আমাদের দলকে নতুন পরিচিতি এনে দেবে। দেশের তরুণ প্রজন্ম এই সাফল্য থেকে অনুপ্রেরণা পাবে ভবিষ্যতে এমন আরও কীর্তির পুনরাবৃত্তি ঘটানোর জন্য।’
বছর চারেক আগে এই সিডনিতেই ভারতীয় দলের পূর্ণাঙ্গ অধিনায়ক হিসাবে টেস্টে পথ চলা শুরু হয়েছিল কোহলির। আর আজ সেখানেই তিনি সাফল্যের বৃত্ত পূর্ণ করে ফেললেন। ভারত অধিনায়ক গর্ব প্রকাশ করেছেন পূজারা-মায়াঙ্ক-ঋষভ-বুমরাহদের মতো একঝাঁক প্রতিভাকে নেতৃত্ব দিতে পেরে। কোহলির কথায়, ‘আমার এই দলের গড় বয়স খুবই কম। তবে তাদের মধ্যে প্রতিভার অভাব নেই। সবচেয়ে বড় কথা হল, কঠিন অস্ট্রেলিয়া সফরে এসেও ছেলেরা কখনও নিজেদের ওপর বিশ্বাস হারায়নি। পুরো সিরিজে অনবদ্য ক্রিকেট উপহার দিয়েছে সকলেই। এই জয় দলীয় লড়াইয়ের সুফল।’ সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘ব্যাটসম্যানরা খুবই দায়িত্বশীল পারফরম্যান্স করেছে। সিনিয়রদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছে তরুণরাও। এই সিরিজে রীতিমতো স্বপ্নের ফর্ম দেখিয়েছে পূজারা। ও একজন দুর্দান্ত টিমম্যান। সবসময় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পছন্দ করে। ও ধারাবাহিক ভাবে বড় রান করায় বাকিদের চাপ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। প্রশংসা করতে হবে মায়াঙ্ক, ঋষভ, হনুমার মতো জুনিয়রদেরও। বিশেষ করে কেরিয়ারের প্রথম টেস্টে চাপের মুখে মায়াঙ্কের দুরন্ত ইনিংস আমাকে মুগ্ধ করেছে। এমন প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের নেতৃত্ব দিতে পেরে আমি গর্বিত। এই ইতিহাসের যোগ্য দাবিদার ওরা।’ পাশাপাশি বোলারদের নিয়েও দারুণ আপ্লুত অধিনায়ক। কোহলি বলেন, ‘ব্যাটসম্যানরা স্কোরবোর্ডে রান তুললে বোলাররা যে তার যোগ্য সম্মান দেবে সেটা জানতাম। সিরিজে ঠিক তেমনটাই হয়েছে। পিচ ও পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তারা নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছে। বুমরাহর কথা আলাদা করে বলতেই হবে। আমার চোখে, এই মুহূর্তে বুমরাহই বিশ্বের এক নম্বর পেসার।’
বাইশ গজে তাঁর আগ্রাসী মেজাজ নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে চলতি টেস্টে সিরিজ চলাকালীনই কোহলির নিন্দায় সরব হয়েছিলেন প্রাক্তনদের একাংশ। ‘বাইরে থেকে অন্য লোকজন কে কী বলল তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে, নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখাটাই হল আসল কথা। তাতে সেরা ফলটা পাওয়া যায়। এবারের অস্ট্রেলিয়া সফরই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ,’ বলছেন ভারতীয় ক্রিকেটের পোস্টার বয়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন: অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়ের জন্য ট্যুইট করে ভারতীয় দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।