সায়ন্ত ভট্টাচার্য, ডায়মন্ডহারবার: জলপথে চীনের পেশিশক্তির আস্ফালন ক্রমেই বাড়ছে। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের গতিবিধি নিশ্চিতভাবেই দিল্লির উদ্বেগের কারণ। এমতাবস্থায় ভারতীয় নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করাই মূল লক্ষ্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের। মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ডহারবারে একটি অনুষ্ঠানে এসে বিষয়টি উল্লেখ করে ভারতীয় নৌসেনার প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল সুনীল লানবা বলেন, আমাদের দেশে নৌসেনা অনেক শক্তিশালী। তবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে নৌসেনাকে আরও শক্তিশালী করা হবে। সেই লক্ষ্যেই একাধিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেগুলির মধ্যে অনেকগুলি বাস্তবায়িতও হয়েছে। নৌসেনা প্রধানের এই বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের কথায়, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-তে যে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তার সবক’টি হয়তো সাফল্যের মুখ দেখেনি। কিন্তু যেগুলি বাস্তবায়িত হয়েছে, সেগুলির উপরে ভিত্তি করে দেশ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে ইতিমধ্যেই নৌবাহিনী সারা দেশে তাদের বিমানঘাঁটিগুলোর সীমানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে শুরু করেছে। বিশেষ করে যে সব জায়গায় মিগ-২৯কে যুদ্ধবিমান এবং পোসেইডন-৮আই দূরপাল্লার টহলদারি বিমানগুলো রয়েছে। তৈরি হচ্ছে আধুনিক সমরাস্ত্র বহনকারী যুদ্ধজাহাজও। এদিন ডায়মন্ডহারবারের মিলিটারি ক্যাম্পে হুগলি নদীর পাশে পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম ভারতীয় নৌসেনার সার্ভিস সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) উদ্বোধন করেন সুনীল লানবা। ছিলেন পূর্বাঞ্চলীয় নৌবাহিনীর ফ্ল্যাগ অফিসার ইন কমান্ডিং ভাইস অ্যাডমিরাল করমবীর সিং, রাজ্যের নৌবাহিনীর প্রধান কমোডর সুপ্রভকুমার দে সহ নৌবাহিনীর শীর্ষকর্তারা।
এদিন ডায়মন্ডহারবার থেকে হেলিকপ্টারে নৌসেনা প্রধান গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্সেও আসেন। তাঁরা সেখানে কাজ চলা বিভিন্ন যুদ্ধজাহাজের কাজ ঘুরে দেখেন। কীভাবে শিপইয়ার্ডকে আরও উন্নত ও আধুনিক করে তোলা যায়, সেব্যাপারেও কথা বলেন বলে জানা গিয়েছে।
নৌবাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০.২১ একর জমি উপরে এই এসএসবি তৈরি করা হয়েছে। দেশের মধ্যে চারটি জায়গায় এই এসএসবি রয়েছে। কোয়েম্বাটুর, বেঙ্গালুরু, বিশাখাপত্তনম ও ভূপালে। পঁচ নম্বর এসএসবি তৈরি করে দেশের নৌবাহিনীর মানচিত্রে ডায়মন্ডহারবার অন্য জায়গা করে নিল। দেশের নৌসেনা প্রধান বলেন, জাতীয় অর্থনীতি বৃদ্ধিতে সমুদ্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে এই সামুদ্রিক অর্থনীতি আরও উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠবে। সেই বিষয়টিকে আমরা বরাবর মাথায় রেখে চলছি। তাই যাবতীয় পরিকাঠামো বৃদ্ধিতে আরও বেশি করে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। নৌসেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে এই এসএসবি তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাঝে দু’বছর আইনি জটিলতায় তা আটকে যায়। প্রায় ন’বছর পর কাজ শেষ হল।
নৌসেনার এক কর্তার কথায়, ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর এই এসএসবি-তে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের। প্রতিটি ব্যাচে ১৬০ জন করে থাকবেন। মেয়েদের জন্য ৩২টি এবং ছেলেদের জন্য ১২৮টি আসন রাখা হবে। নৌসেনা প্রধান এদিন অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির যুবদের দেশসেবায় আরও বেশি করে এগিয়ে আসতে হবে। সেনায় এঁরা যাতে আসতে পারেন, তার জন্য ‘লুক ইস্ট’ নীতিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, তিনি বলেন, মেয়েদেরকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথম সারিতে নিয়ে আসা হয়েছে। দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণও। নতুন অধ্যায় তৈরিতে নারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান নৌসেনা প্রধান।