বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
এবং একটি পরাজয় গোরক্ষপুরকে বদলে দিয়েছে। স্টেশন থেকে ১০ টাকার অটো ভাড়ায় মন্দিরের দু’নম্বর গেটে নামতে হবে। নেমেই সাদা রঙের তোড়ন। দুজন পুলিশ বসে আছে। ভিতরে ঢুকেই বাঁদিকে চোখে পড়বে একটা বিরাট বড় ঝিল। বোটিং হচ্ছে। আর সোজা মন্দির। এই হল গোরক্ষনাথের মন্দির। এত পুলিশ কেন মন্দিরে? গোশালার সামনে তো লাইন দিয়ে পুলিশের এসইউভি দাঁড় করানো। এত বেশি সিকিউরিটি? মূল মন্দিরের পিছনে একটা মিউজিয়ম আছে। এরকম মিউজিয়ম কি আর কোনও মন্দিরে আছে? ভারতের ইতিহাসে প্রধান যে বিখ্যাত সাধু সন্ন্যাসী আর সমাজসেবী ধর্মগুরুরা ছিলেন তাঁদের প্রত্যেকের মূর্তি গড়া হয়েছে। একেবারে ঢুকেই সামনে দেখা যাবে স্বামী বিবেকানন্দ আর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মূর্তিও রয়েছে। এই মূর্তি মিউজিয়মের দায়িত্বে থাকা সুভাষ মহারাজ একটা সারকথা শোনালেন। সম্পদ হোক, মানুষ হোক, রাজ্য হোক, ভালবাসা হোক, আনুগত্য হোক, কেউ যদি ধরেই নেয় যত্ন না করলে, স্বীকৃতি না দিলে, পরিবর্তে কোনও প্রতিদান না দিলেও সেইসব ভালবাসা, আনুগত্য আর রাজ্য আমারই থাকতে বাধ্য এরকম ভেবে দেওয়া ভুল। ভালবাসাকে, আনুগত্যকে যত্ন করতে হয়। অতি আত্মবিশ্বাস ভালো নয়। গোরক্ষনাথজী সব দেখছেন।
সুভাষ মহারাজ এর বেশি বলেননি। কিন্তু তাঁর মন্তব্যের অভিমুখ অত্যন্ত তীব্রভাবে স্পষ্ট। কারণ ঠিক এই একই কথা রামগড় তালের শ্রীনাথ রাজভড়ের গলায় শোনা গেল। সেটি হল যোগী আদিত্যনাথ ১৯৮৯ সাল থেকে লাগাতার গোরক্ষপুরে জয়ী হয়ে আসছিলেন। বিজেপি কিংবা যোগী অদিত্যনাথ নিজেও এই জয়কে খুব অনায়াসলব্ধ ধরে নিয়ে গোরক্ষপুরের ভোট নিয়ে আর সেভাবে গুরুত্ব দেননি। আর তাই অখিলেশ যাদব ও মায়াবতীর জোট প্রার্থী প্রবীণ নিষাদের কাছে বিগত উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী পরাজিত হল। সেটা যোগী আদিত্যনাথের কাছে বিরাট এক সম্মানহানি। গোরক্ষপুর মঠের আজও তিনিই মোহন্ত। স্বয়ং মোহন্ত ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও গোরক্ষপুরে পরাজিত হওয়ার ক্ষত আজও যোগী আদিত্যনাথকে এতটাই জখম দিয়েছে যে সেই কারণেই মঠজুড়ে পুলিশের দল। কারণ মুখ্যমন্ত্রী যোগীজি সব ছেড়ে আপাতত গোরক্ষপুরে রয়ে গিয়েছেন। হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পেতে রোজ তিনটি করে রোড শো, গ্রামে গঞ্জে গিয়ে সভা, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলছেন। একটি পরাজয় কেন গোরক্ষপুরকে পাল্টে দিচ্ছে? কারণ গোরক্ষপুর থেকে ৩০ বছর ধরে এমপি হলেও গোরক্ষপুর এতকাল ছিল বঞ্চনার অন্ধকারে। মঠ ছাড়া আর কিছুই ছিল না এখানে। এবার সেই পরাজয় আর শিশুমৃত্যুর জেরে গোরক্ষপুরে সার কারখানা খুলছে, এইমস স্তরে উন্নীত হচ্ছে মেডিকেল কলেজ, গোরক্ষপুর এয়ারপোর্ট, শহরে একসঙ্গে চারটি ফ্লাইওভার হচ্ছে।
ভোটের আগেই অবশ্য সেই পুরানো পরাজয়ের মৃদু প্রতিশোধ নিয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। অখিলেশ যাদব ও মায়াবতীর যে প্রার্থী বিজেপিকে এই আসনে হারিয়ে দিয়েছিলেন সেই প্রবীণ নিষাদ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। যা জোটের পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তির। এবার এখানে বিজেপি প্রার্থী ভোজপুরী ছবির নায়ক রবি কিষাণ। যিনি দেড় বছর আগেও ছিলেন কংগ্রেসে। আর এবার জোট প্রার্থী আবার সেই নিষাদ সম্প্রদায় থেকেই। এবার জোটপ্রার্থী রামভুয়াল নিষাদ। গোরক্ষপুর আসনে নিষাদ সম্প্রদায়ের ভোটব্যাঙ্ক সবথেকে বেশি। সঙ্গে দলিত ও মুসলিম। এই তিনটি ফ্যাক্টরকে একজোট করেই এখানে জোট জয়ী হয়েছিল। এবারও সেই একই ফর্মুলায় ভরসা রেখেছেন অখিলেশ ও মায়াবতী। আর বিজেপি রবি কিষাণকে প্রার্থী করে ব্রাহ্মণ ভোটকে সন্তুষ্ট করার বার্তা দিয়েছে। হিন্দু যুবা বাহিনীর সুনীল সিং বললেন, গোরক্ষপুরবাসী গতবার ভুল করেছিল। এবার সরাসরি সেকথা বলছেন তাঁরা। মঠে এসে সকলে বলে যাচ্ছেন যে এবার আর ভুল হবে না। এখানে যোগীজিই প্রার্থী ধরে নিন। সুনীল সিং একথা বললেও রামগড় তালের সুরেন্দ্র যাদব প্রশ্ন তুলছেন গোরক্ষবাসীর হয়ে। এই ঐতিহ্যশালী কেন্দ্রে কেন এক ভোজপুরী সিনেমার নায়ক প্রার্থী? যেখানে স্বয়ং বাবা গোরক্ষনাথের আশীর্বাদ রয়েছে, সেই মাটিতে এসে এক ফিল্মস্টার বিগ বসের ডায়লগ দিয়ে ভোট চাইছেন এটা কী গোরক্ষপুরের সম্মান বাড়ছে? সভা সমিতিতে অবশ্য বিগ বসের ডায়ালগ রবি কিষাণ ছিচ্ছেন বটে। তবে বক্তৃতার শেষে তিনি এক মোক্ষম সংলাপ দিচ্ছেন। আমাকে নয়, আমি সাইড আর্টিস্ট। আসল বিগ বস একজনই। আমার নামে আসলে তাঁকেই ভোট দিন। কে ? মোদিজি!