উচ্চতর বিদ্যায় আগ্রহ বাড়বে। মনোমতো বিষয় নিয়ে পঠন-পাঠন হবে। ব্যবসা স্থান শুভ। পৈতৃক ব্যবসায় যুক্ত ... বিশদ
ডায়মন্ডহারবার পুলিস জেলার সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, খুনের বিষয়টি যাতে কেউ ধরতে না পারে তা গুলিয়ে দিতে অভিযুক্তরা নির্মল কুমারের দেহটিকে ঘর থেকে বাইরে বের করে রাস্তার ধারে নিকাশির মধ্যে শুইয়ে রেখে দেয়। যাতে সকলে মনে করে নেশা করে বাড়ি ফেরার সময় পা পিছলে নিকাশিতে পড়ে গিয়েছে। কিন্তু ময়না তদন্ত রিপোর্ট, অভিযুক্তদের দফায় দফায় জেরা এবং মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে শেষ পর্যন্ত সোনালি ও তার প্রেমিককে ধরা হয়। পুলিস সুপার বলেন, প্রথম থেকে সোনালির উপর সন্দেহ ছিল। পরবর্তী সময়ে মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে দেখা যায়, খুনের আগে ও পরে সোনালি দফায় দফায় আরশাদ নামে একজনের সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু এই নামের কারও সঙ্গে তার পরিচয় রয়েছে সে কথা একবারের জন্যও পুলিসকে বলেনি। এরপর তাকে আরশাদের নাম ধরে জেরা করতেই সোনালি ভেঙে পড়ে। খুনের কথা কবুল করে। পুলিস সুপার জানান, ডায়মন্ডহারবার থানার আইসি, এসডিপিও, এসওজিসহ দু’টি আলাদা টিম সক্রিয়ভাবে এর তদন্তে ছিল। এছাড়া তাঁর নেতৃত্বে একটি টেকনিক্যাল টিমও কাজ করেছে।
শুক্রবার বিকেলে ধৃতদের ডায়মন্ডহারবার মহকুমা আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের পুলিস হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
২৮ বছর বয়সী নির্মল কুমার আদতে বিহারের মুঙ্গের জেলার বাসিন্দা। গত তিনবছর আগে মুঙ্গের জেলার হাবেলি খড়গপুর গ্রামের ২২ বছরের সোনালির সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। কর্মসূত্রে নির্মলবাবু ডায়মন্ডহারবার রেল স্টেশনে সহকারি পদে ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে কাছাকাছি ডায়মন্ডহারবার পুরসভার ১১নম্বর ওয়ার্ডের রায়নগরে একটি ভাড়াবাড়িতে তিনি থাকতেন। বিয়ের পর থেকে তাঁর স্ত্রী বাপের বাড়িতে থেকে যান। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ২২ বছরের সোনালির বাপের বাড়ি হাবেলি খড়গপুর থেকে কিছুটা তফাতে তার প্রেমিক আরশাদ জলিলের বাড়ি। বিয়ের অনেক আগে থেকে আরশাদের সঙ্গে প্রেম ছিল সোনালির। সেই সময় দু’জন বিয়ে করে ঘর বাঁধার পরিকল্পনা করেছিল। একাধিকবার দু’জনের শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। বিষয়টি সোনালির বাড়ির লোকজন জেনে যাওয়াতে তাতে বাদ সাধে। এরপর সোনালিকে পাত্রস্থ করার জন্য সক্রিয় হয়। সোনালির অবশ্য এই বিয়েতে প্রথম থেকে আপত্তি ছিল। প্রতিবাদও করেছে। কিন্তু বাড়ির লোকজন তাতে কান দেয়নি। ফলে তিনবছর আগে রেলের চাকুরে নির্মল কুমারের সঙ্গে সোনালির বিয়ে হয়। তাদের একটি দু’ বছরের সন্তানও রয়েছে।
পুলিস সুপার বলেন, বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করলেও মনে মনে চাপা রাগ ছিল। শুধু তাই নয়, দুবাইয়ের কর্মরত প্রেমিক আরশাদের সঙ্গে মোবাইলের যোগাযোগ রাখত। স্বামীর সঙ্গ ত্যাগ করে প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধার কথা বলত সোনালি। পাশাপাশি সোনালিকে হারানোর একটা যন্ত্রণাও ছিল আরশাদের। ফলে নির্মলের উপর একটা চাপা আক্রোশ তৈরি হয় আরশাদের মধ্যে। দু’জনের মধ্যে এই যোগাযোগ সেই প্রতিহিংসাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। দু’জনে ঠিক করে নির্মলকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়া হবে। এরমধ্যে নির্মল কুমার বিহারে গেলে তাঁর সঙ্গে ডায়মন্ডহারবারে আসার বায়না ধরে সোনালি। অতঃপর শ্যালক ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ছটপুজোর দিন বিহার থেকে ডায়মন্ডহারবার ফেরেন নির্মল। এরমধ্যেই দুবাই থেকে চলে আসে আরশাদ। গত ৯ নভেম্বর সোনালির সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে আরশাদ ডায়মন্ডহারবারে আসে। সেখানে এসে সোনালি কোথায় রয়েছে সেই বাড়িও দেখে যায়। এরপর পরিকল্পনা মতো ১০ নভেম্বর গভীর রাতে নির্মল যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, সেই সময় দরজায় টোকা পড়ে। দরজা খুলে দেয় সোনালি। তারপর দু’জনে জোট বেঁধে খুনের অপারেশন শেষ করে।