সোমবার, 23 জুন 2025
Logo
  • সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

পানের পিক ফেলায় ধাওয়া করে ধাক্কা, ১৭ দিন পর মৃত্যু, বালিগঞ্জ দুর্ঘটনাকাণ্ডে নয়া মোড়

বালিগঞ্জ দুর্ঘটনাকাণ্ডে নয়া মোড়। গত ৫ মে রাতে বাইক চালক নীতিন আগরওয়াল দুর্ঘটনার কবলে পড়েননি। এক কিলোমিটার ধাওয়া করে তাঁর বাইকে ধাক্কা মেরেছিল নীল বাতি লাগানো গাড়ি।

পানের পিক ফেলায় ধাওয়া করে ধাক্কা, ১৭ দিন পর মৃত্যু, বালিগঞ্জ দুর্ঘটনাকাণ্ডে নয়া মোড়

নিজস্ব প্রতিনিধি,কলকাতা: বালিগঞ্জ দুর্ঘটনাকাণ্ডে নয়া মোড়। গত ৫ মে রাতে বাইক চালক নীতিন আগরওয়াল দুর্ঘটনার কবলে পড়েননি। এক কিলোমিটার ধাওয়া করে তাঁর বাইকে ধাক্কা মেরেছিল নীল বাতি লাগানো গাড়ি। তাতেই তিনি ছিটকে রাস্তায় পড়ে গুরুতর জখম হয়েছিলেন। দুর্ঘটনার পর নীল বালি লাগানো গাড়ির মালিক রঞ্জিৎ তাঁতি বন্ধু-তথা চালক মন্টু কুমার সাউকে বাঁচাতে নিজেই আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। দুর্ঘটনাকাণ্ডের তদন্তে নেমে এহেন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে বালিগঞ্জ থানা। এদিকে দুর্ঘটনার ১৮ দিন পর বৃহস্পতিবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিতিনের মৃত্যু হয়েছে। এরপরই মামলায় নতুন ধারায় যুক্ত করতে চেয়ে আলিপুর আদালতে আবেদন করেছে পুলিস। 
পুলিস সূত্রে খবর, ৫ মে রাত আড়াইটে নাগাদ বালিগঞ্জ থানার কাছে খবর আসে, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে বাইক দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিস ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি বাইক উদ্ধার করে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পুলিস জানতে পারে, নীল বাতি লাগোনো গাড়িটি ওই বাইককে ধাক্কা মেরে পালিয়েছে। তার পিছনে থাকা একটি গাড়ি দুর্ঘটনা দেখে থামে। ওই গাড়িতে থাকা ব্যক্তিরা নেমে এসে স্থানীয়দের সাহায্যে ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। বাইকের নম্বর দেখে  পুলিস জানতে পারে, এটির মালিক বন্দর এলাকার। তাঁর সঙ্গে তদন্তকারীরা যোগাযোগ করলে জানা যায় গাড়িটি একটি শোরুমে বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই শোরুম থেকে জানা যায় গাড়িটির মালিক নিতিনের দাদা। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিস জানতে পারে, বাইকটি ভাই চালাচ্ছিলেন। নিতিনের দাদা পুলিসকে বলেন ভাইয়ের মোবাইল দুটি একজন বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব হল, তার তদন্ত করতে গিয়ে তদন্তকারীরা দেখেন নিতিন. একটি পানশালায় গিয়েছিলেন। সেখানকার এক কর্মী বাইকের পিছনে বসেছিলেন। তাঁর কাছে নিতিনের দুটি মোবাইল ছিল।  মাঝরাস্তায় তিনি নেমে যান। এই সময় নিতিনকে দুটি মোবাইল নিতে বললেও, তিনি না নিয়ে বেরিয়ে যান। ওই যুবকের বাড়ি পানশালা কর্মী চিনতেন। যে কারণে সেটি বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
পানশালা ওই কর্মীর সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারী অফিসার জানতে পারেন, গাড়ি চালাতে চালাতে পানের পিক ফেলছিল নিতিন। এই সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিল একটি গাড়ি। নীল বাতি লাগানো ওই গাড়িতে পানের পিক পড়লে তাতে সওয়ার ব্যক্তিরা রেগে যান। বাইকের কাছে এসে গাড়ির চালক এর প্রতিবাদ করলে, তর্ক জুড়ে দেন নিতিন। এই নিয়ে দুপক্ষে মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। এরপর দ্রুত গতিতে বাইক চালাতে শুরু করেন নিতিন। গাড়িটিও তাঁর পিছনে ধাওয়া করছিল। এত জোরে বাইক চালানোয় সওয়ারি ওই পানশালার কর্মী নেমে যান। তদন্তকারী অফিসারের মনে সংশয় জাগে, তাহলে ঝামেলা থেকে কোনও ঘটনা ঘটেছে।  বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ  বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নীল বালি লাগানো গাড়িটি এক কিলোমিটার ধাওয়া করেছে ওই বাইকটিকে। তদন্তকারীরা নিশ্চিত হন, গাড়িটি ইচ্ছাকৃতভাবে বাইকে ধাক্কা মেরেছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়। ওই সময় গাড়িতে ছিলেন মালিক রঞ্জিত তাঁতি। গাড়িটি চালাচ্ছিল তার বন্ধু মন্টু কুমার সাউ। বন্ধুকে বাঁচাতে রঞ্জিত নিজেই আত্মসপর্মণ করে আদালতে। গাড়ির মালিককে নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠানো হলেও, বারবার এড়াতে থাকেন। তাতে পুলিসের সন্দেহ হওয়ায় গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করা হয়। আদালতের নির্দেশ নিয়ে রঞ্জিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই জানা যায় গাড়িটি চালাচ্ছিল মন্টু। এরপরই মন্টুকে পাকড়াও করা  হয়।