বৃহস্পতিবার, 15 মে 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

বিপদ এলে কালিম্পং থেকেও ছোঁড়া সম্ভব ‘অগ্নি’!

 ধৈর্য, ঠান্ডা মাথা, পরিমিতিবোধ, প্রযুক্তি ও কৌশলের এক অপূর্ব সমন্বয় দেখতে পারছি ভারতীয় সেনাবাহিনীর আক্রমণে। ভবিষ্যতের যুদ্ধ এরকমই হবে। 

বিপদ এলে কালিম্পং থেকেও ছোঁড়া সম্ভব ‘অগ্নি’!

ডঃ সুবীর চৌধুরি (ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞ): ধৈর্য, ঠান্ডা মাথা, পরিমিতিবোধ, প্রযুক্তি ও কৌশলের এক অপূর্ব সমন্বয় দেখতে পারছি ভারতীয় সেনাবাহিনীর আক্রমণে। ভবিষ্যতের যুদ্ধ এরকমই হবে। ড্রোন, ছোট, নিখুঁত ও নির্দিষ্ট টার্গেটের মারণ বোমা এবং স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সহযোগে যুদ্ধ। 
একবার খেয়াল করে দেখুন, রাশিয়া-ইউক্রেন অথবা ইজরায়েল–হামাসের  লড়াই। একই ফর্মূলা। আমাদের মতো শান্তিপূর্ণ দেশের এই জাতীয় আগ্নেয়াস্ত্র থাকার প্রয়োজন আরও বেশি। কারণ, এই ধরনের মারণাস্ত্রে  কোল্যাটারাল ড্যামেজ সর্বনিম্ন হয়। আর আমরা তো আর পাকিস্তান নই! ল্যা঩জে পা না দিলে, ঝামেলায় জড়াই না। আর জড়ালে লক্ষ্যবস্তু ছাড়া নিরীহ মানুষজনকে বিপদে ফেলায় অভিপ্রায় ভারতের অন্তত নেই। তা বলে কি পৃথ্বী, অগ্নির মতো ক্ষেপণাস্ত্রের দরকার নেই? আলবাত আছে। তাদের দরকার স্ট্যাটেজিক কারণে। ভয় দেখাতে। ভারতের যেমন ২০ হাজার কিমি রেঞ্জের আন্তঃমহাদেশীয় মিসাইল পরীক্ষা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা! 
এবার ভারত স্কাল্প মিসাইল ব্যবহার করেছে। আপনারা জানেন কি না, জানি না, স্কাল্প এক ধরনের লয়েটারিং মিসাইল। প্রায় ২৫০ কিমি রেঞ্জ পর্যন্ত গিয়ে ঘুরপাক খেতে থাকবে। টার্গেট সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আসতে থাকবে। নিশ্চিত হলে সুপারসনিক বেগে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। হ্যামারের মতো অত্যন্ত কার্যকর প্রিসিশন গাইডেড বোমা ব্যবহার করার সিদ্ধান্তটাও প্রশংসনীয়। এছাড়াও আমাদের হাতে থাকার কথা প্রিসিশন গাইডেড এমন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র, যেটা লঞ্চ করলে একইসঙ্গে অনেকগুলি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত সম্ভব। জল, স্থল ও আকাশ, তিন জায়গা থেকেই এই ধরনের মিসাইল ছোঁড়া যেতে পারে। মিসাইলের অভাব নেই আমাদের ভাঁড়ারে। তবে ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র আরও দরকার। 
তবে এখনকার যুদ্ধের মিসাইলগুলি অনেক হাল্কা। তাই বেশি নিখুঁতও। মনে রাখবেন, মিসাইল যত ভারী হবে, নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তু আঘাত হানার ক্ষমতা ততটাই কমবে। আমাদের সমৃদ্ধশালী মিসাইল ভাণ্ডারে দুই সেরা রত্ন হল পৃথ্বী ও অগ্নি। এই দুটি ব্যালেস্টিক মিসাইল শুধু যে পরমাণু অস্ত্র বহন করতে পারে, তা নয়। এগুলি সবই ‘মোবাইল মিসাইল’। ট্র্যাকে, ট্রেনে করেও অন্যত্র নিয়ে যাওয়া সম্ভব। পূর্ব ভারতে বিপদ এলে, চাইলে কালিম্পং থেকে রাওয়ালপিণ্ডি লক্ষ্য করেও ছোঁড়া সম্ভব। 
জানি, অনেকের মনে আর একটি ভয় কাজ করছে, পাকিস্তান যদি পরমাণু অস্ত্র ছোঁড়ে? সেসব নিস্ক্রিয় করার ব্যবস্থাও আছে। কোন দিকে ভবিষ্যতের ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধ যাচ্ছে, শুনলে আশ্চর্য হয়ে যাবেন আপনারা। চীন এমন এক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে, যেটি মিসাইল নয়। কিন্তু শত্রুদেশের মিসাইল লঞ্চ করার সফ্টওয়্যারকে অকেজো করে দেবে। এটি হল এক ধরনের ভাইরাস! ভাবুন! (লেখক প্রাক্তন অধিকর্তা, আরসিআই-ডিআরডিও)