বৃহস্পতিবার, 17 জুলাই 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

আলিপুরে এক বয়ফ্রেন্ডের বাড়িতেই আশ্রয়, গ্রেপ্তার শ্বেতা, পুত্র আরিয়ানও

বুধবার সকালে আরিয়ান খান। আর রাতে স্বয়ং ‘পর্ন মাফিয়া’ শ্বেতা ওরফে ফুলটুসি। চাকরির টোপ দিয়ে সোদপুরের তরুণীকে টানা পাঁচ মাস ধরে নির্যাতনের যে চিত্র গোটা বাংলাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, তারই ‘কারিগর’ অবশেষে ধরা পড়ল পুলিসের জালে। 

আলিপুরে এক বয়ফ্রেন্ডের বাড়িতেই আশ্রয়, গ্রেপ্তার শ্বেতা, পুত্র আরিয়ানও

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বুধবার সকালে আরিয়ান খান। আর রাতে স্বয়ং ‘পর্ন মাফিয়া’ শ্বেতা ওরফে ফুলটুসি। চাকরির টোপ দিয়ে সোদপুরের তরুণীকে টানা পাঁচ মাস ধরে নির্যাতনের যে চিত্র গোটা বাংলাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, তারই ‘কারিগর’ অবশেষে ধরা পড়ল পুলিসের জালে। গল্ফগ্রিন থেকে আরিয়ান গ্রেপ্তার হওয়ার পরই বোঝা গিয়েছিল, পুলিস জাল গুটিয়ে এনেছে। প্রমাণ মিলল রাতে। আলিপুরে ‘বয়ফ্রেন্ডে’র বাড়ি থেকে শ্বেতার গ্রেপ্তারির পর। পাঁচদিনে সম্পূর্ণ হল বৃত্ত। তবে তারই মধ্যে সামনে এসেছে শ্বেতা, আরিয়ান ও তাদের শাগরেদদের কুকীর্তির ভাণ্ডার। ডোমজুড়ের ফ্ল্যাট থেকে সেক্স র‌্যাকেট পরিচালনা, চাকরির টোপ দিয়ে তরুণীদের ডেকে এনে অশ্লীল ‘ছবিতে’ অভিনয়ে বাধ্য করা, বন্দর এলাকার ডনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের কারবার—কী নেই তালিকায়! কিন্তু কোন উপায়ে শ্বেতা স্রেফ ভ্যানিশ হয়ে গেল? কী কানেকশন তার? পাঁচদিন ধরে কোথায় তারা? উত্তর খুঁজছিল পুলিস। এর মাঝেই একটি ফোন সব জটের কিনারায় পৌঁছে দিল তদন্তকারী অফিসারদের। উদ্ধার হল শ্বেতার বছর ১৩-র নাবালিকা মেয়েও। তিনজন, ভিন্ন সময়ে, তিনটি পৃথক জায়গা থেকে। 
শুক্রবার সকালে সোদপুরের নির্যাতিতা তরুণী কোনওরকমে পালিয়ে এসেছিলেন শ্বেতার ‘কারাকুঠুরি’ থেকে। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে সেদিনই ফ্ল্যাট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় শ্বেতা-আরিয়ানরা। গভীর রাতে আমন নামে স্থানীয় এক পূর্বপরিচিত যুবকের ফোন থেকে একটি অ্যাপ-ক্যাব বুক করা হয়। সেই গাড়িতে আমনকে নিয়ে শ্বেতা চলে যায় নাদিয়ালে এক আত্মীয়ের বাড়ি। ইতিমধ্যে আরিয়ান একটি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। অন্য একটি গাড়িতে ফ্ল্যাট ছাড়ে শ্বেতার নাবালিকা কন্যাও। তিনজনই মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। পুলিস শ্বেতার ফোন নম্বরের কল ডিটেইলস বের করে। কাদের সঙ্গে নিয়মিত শ্বেতা কথা বলেছে, শেষ সাতদিনে কার কার সঙ্গে বেশি কথা হয়েছে, এমন প্রায় ৫০টি নম্বর আলাদা করা হয়। পুলিস দেখে, শ্বেতার এক বয়ফ্রেন্ডের ফোনে কল ঢুকেছে। কিন্তু নম্বর অপরিচিত। এখানেই তদন্তের ট্যুইস্ট। পুলিস ট্র্যাক করে দেখে, নম্বরটি গার্ডেনরিচের এক মহিলার। মঙ্গলবার রাতে হাওড়া সিটি পুলিসের টিম হানা দেয় ওই মহিলার বাড়িতে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মঙ্গলবার একটি বেসরকারি বাসে তাঁর এক মহিলা সহযাত্রী ফোনটা চেয়েছিল। কেমন দেখতে ছিল সে? বোরখার জন্য খুব ভালো বুঝতে পারেননি মহিলা। বলেছিল, ‘ফোন খারাপ হয়ে গিয়েছে। যদি একটা দরকারি ফোন করতে দেন।’ সরল বিশ্বাসে তিনি মহিলাকে ফোন দিয়েছিলেন। একটা কথা তাঁর কানে এসেছিল। ফোনে কাউকে সে বলেছিল, ‘আমি পুলিসের নজরে আছি। হোয়াটসঅ্যাপ কল করবে।’ তখন পুলিস তাঁকে শ্বেতা খানের একটি ছবি দেখায়। বোরখা পরা মুখ যতটুকু তিনি দেখতে পেয়েছিলেন, তার ভিত্তিতেই মহিলা বলেন, ‘হতে পারে।’ তদন্তকারীরা বুঝে যান, শ্বেতা কলকাতাতেই রয়েছে। বারবার বেশভূষা বদলে। এরই মধ্যে নজরদারিতে থাকা ফোন নম্বরগুলির মধ্যে আরও দু’টিতে ফোন এসেছে। সেও অপরিচিত নম্বর। তার মধ্যে একটি ট্র্যাক করেই প্রথম সাফল্য হাতে আসে পুলিসের। নরেন্দ্রপুর থেকে উদ্ধার হয় শ্বেতার নাবালিকা কন্যা। শ্বেতারই এক বয়ফ্রেন্ডের বাড়ি থেকে। আর সেই ব্যক্তির ফোনে বুধবার সকালে আসা ফোন নম্বর থেকে পরের সাফল্য। আরিয়ান খান। তাকে পাকড়াও করা হয় গল্ফগ্রিনে। সে জেরায় জানায়, মা আলিপুরে আছে। মঙ্গলবার থেকে। কিন্তু তার আগে? নাদিয়াল, তারপর গার্ডেনরিচ ও রাজাবাগানে তার ঘনিষ্ঠ ডনের আশ্রয়ে। সেখানে তল্লাশি চালায় পুলিস। আর রাতে আলিপুর থেকে গ্রেপ্তার হয় শ্বেতা। তৃতীয় সাফল্য। আরিয়ানের দেওয়া একটি নম্বরের সূত্রেই। 

রাশিফল