কর্মসূত্রে বিদেশ যাত্রার প্রচেষ্টায় সফল হবেন। আয় খারাপ হবে না। বিদ্যা ও দাম্পত্য ক্ষেত্র শুভ। ... বিশদ
তবে, একটা অন্য দিকও রয়েছে। বর্তমানে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলি আর অচলায়তন কেন্দ্র নয়। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা সিলেবাসে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনে। সেই অনুযায়ী কোর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয়গুলিতেও কম্পিউটারের প্রবেশ ঘটেছে। সিভিল বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বহু কাজই এখন কম্পিউটারভিত্তিক। তার জন্য একদিকে যেমন চাই কম্পিউটারে জ্ঞান, তেমনই বিষয়গত বিদ্যার প্রয়োজনীয়তাও আবশ্যিক প্রাথমিক শর্ত। ভারত তথা পৃথিবীতে উন্নয়নের জোয়ার চলছে। এর জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের একটি সমন্বয় দরকার। সেই কারণেই প্রয়োজন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রকে। বিল্ডিং বা সাধারণ পরিকাঠামো তৈরি করতে কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারই প্রয়োজন হবে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে কখনও সেই চাহিদা মিটবে না। এমন পরিস্থিতি না হয় যে ভারতে প্রয়োজনীয় ইঞ্জিনিয়ার নেই। বিদেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ার ভাড়া করে কাজ চালাতে হচ্ছে।
আমেরিকা বা ইউরোপে একটি ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাহিদা কয়েক বছর বাড়ে আবার কয়েক বছর কমে যায়। এ দেশেও সেই ট্রেন্ড চলে। শুধু কম্পিউটার সায়েন্সে জোর দেওয়া হলে কোর বিষয়ে ভালো ইঞ্জিনিয়ারের অভাব অচিরেই দেখা দেবে।
আর এক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাবিদ অলোক টিব্রেওয়াল বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে কম্পিউটার সায়েন্সের চাহিদা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। প্রথম পছন্দ হিসেবে কম্পিউটার সায়েন্সকেই বেছে নিচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। তবে, সবাই যে কম্পিউটার সায়েন্স পড়বেন, তার কোনও কথা নেই। প্রচুর চাহিদার মধ্যে আসনও সীমিত। এমন অনেক ছাত্রছাত্রী কিন্তু আর্কিটেকচার পড়তে পারেন। সৃজনশীল মানসিকতা, লজিক্যাল সেন্স থাকলে এবং অঙ্ক ভালো পারলে আর্কিটেকচারে ভালো কিছু না করার কোনও কারণ নেই। মাথায় রাখতে হবে, আর্কিটেকচার মানেই তিনি যে শুধু বিল্ডিংয়ের নকশা বানাবেন, তা নয়। অনেকে ইন্টেরিয়র ডিজাইন বা অন্যান্য ডিজাইনিংয়ের দিকে যেতে পারেন। মেয়েদের জন্যও এই পেশা খুবই আকর্ষণীয়। অনেকেই জানেন না, অভিনেত্রী ঐশ্বর্য রাই নিজেও একজন আর্কিটেক্ট। কিছু কিছু প্রচলিত ধারণা আছে যে, আর্কিটেকচার ও ইঞ্জিনিয়ারিং একই বিষয়। আসলে তা একেবারেই নয়।
এ প্রসঙ্গে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক মনোজকুমার মুখোপাধ্যায় আরও পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বললেন। নিজের মত সোজাসাপ্টাভাবে দিতে পছন্দ করেন মনোজবাবু। তিনি বলেন, কোর ইন্ডাস্ট্রি আমাদের রাজ্যে খুব বেশি নেই। তাই সিভিল, মেকানিক্যাল বা ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে সেই ধরনের সংস্থায় চাকরি পাওয়া খুব কঠিন। চাকরি পেলেও বেতন এতই কম অফার করা হচ্ছে যে, সেখানে যেতে চাইছেন না প্রায় কেউই।
অর্থাৎ এ রাজ্যে কোর বিষয়গুলির সম্ভাবনা এখনও বেশ সীমিত। দেখা যাচ্ছে যে, কোনও বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েই সেই তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রেই চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা। সে ক্ষেত্রে যেমন চাকরি করবেন, তেমন কোর্স করাই বাঞ্ছনীয়। আর এখানেই আসে কম্পিউটার সায়েন্সের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি। কম্পিউটার সায়েন্স এখন বিভিন্ন স্পেশালাইজেশনে বিভক্ত। এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স, মেশিন লার্নিং, রোবটিক্স ও অটোমেশন, ডেটা সায়েন্স বা ডেটা অ্যানালিটিক্সের সুনির্দিষ্ট ভাগে বিভক্ত কোর্সগুলি। ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের পছন্দ, প্রয়োজনীয়তা ও যোগ্যতা অনুযায়ী কোর্সগুলি বেছে নিচ্ছেন। আগামী দিনে চাকরির ক্ষেত্রও তৈরি হবে এই স্পেশালাইজেশন ধরেই।
এ তো গেল বিটেকের কথা। মনোজবাবু মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পলিটেকনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রটিও কিন্তু বিশাল। কেউ দ্বাদশ পর্যন্ত আর্টস নিয়ে পড়েও এই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সুবাদেই এমটেক বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি করতে পারেন। কারণ এতে ভর্তি নেওয়া হয় দশম শ্রেণির নম্বরের ভিত্তিতে। দশম শ্রেণির যোগ্যতার ভিত্তিতে হওয়া প্রবেশিকার র্যাঙ্ক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির অন্যতম মাপকাঠি।
যেকোনও ক্ষেত্রেই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার দু’বছরের মাথায় বিটেকে ল্যাটারাল এন্ট্রি করা যায়। সেক্ষেত্রে জেলেট নামে একটি প্রবেশিকা দিতে হবে। এরাজ্যে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের সুযোগও বেশ ভালো রকম রয়েছে।
তবে, মনোজবাবুর মতে, ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া পেশাগত জীবন তৈরি হবে না, এমনটা মোটেও নয়। এখন বায়োটেকনোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, প্যারামেডিক্যাল, ফ্যাশন টেকনোলজি প্রভৃতির মতো প্রযুক্তিভিত্তিক পেশাদার কোর্সও রয়েছে। সেগুলির চাহিদাও যথেষ্ট বেশি। যেকোনও বিষয়ে সফলভাবে কোর্স শেষ করে ভালো চাকরি পাওয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
তবে অভিজ্ঞ মহলের মত, প্রতিটি বিষয়ের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চাহিদাই বছর বছর বাড়বে। কোনও বছর সেই বৃদ্ধির হার বেশি হবে, আবার কোনও বছর তা কম হবে। সময়ের ধারা মেনে অবশ্য কম্পিউটার সায়েন্সের চাহিদা এখনই কমবে না। এখন পর্যন্ত যা ধারা তাতে অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে প্রাথমিক বেতনের পরিমাণও অনেকটাই বেশি। তবে, সার্বিক উন্নতির হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সব বিষয়ের ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনই বাড়বে। আসল কথা হলো, কে কত ভালো ভাবে কোর্সটি শেষ করছে। সে ক্ষেত্রে যেকোনও প্রান্তেই চাকরি পেয়ে যাবেন তিনি।