কাজকর্মে নতুন সুযোগ আসতে পারে। কর্ম সাফল্যে আনন্দ লাভ। ব্যবসায় উন্নতি। গবেষকদের পক্ষে শুভ। ... বিশদ
১৯৭৮ সাল। অসাধ্য সাধন করলেন ডাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়। ভারতে জন্ম নিল প্রথম টেস্ট টিউব বেবি, দুর্গা। সেই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন ডাঃ বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী, সঙ্গী ডাঃ সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার। ১৯৮৬ সালের নভেম্বরে ভারতের দ্বিতীয় টেস্ট টিউব বেবির জন্ম। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় চার দশক। চিকিৎসা পদ্ধতি আরও উন্নত হয়েছে। সাকসেসফুল কেসের হারও বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের (আইভিএফ) খরচ। নিঃসন্তান দম্পতিদের মুখে হাসি ফোটানোর যে স্বপ্ন ডাঃ মুখোপাধ্যায় দেখেছিলেন, খরচের বহরে তা আজ মধ্যবিত্ত, দুঃস্থ দম্পতির নাগালের বাইরে।
আইভিএফে খরচ কীরকম? কলকাতায় লো কস্ট আইভিএফ মোটামুটি এক লক্ষ টাকার আশেপাশে থাকে। সাধারণ আইভিএফে তা বেড়ে দেড় লক্ষ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে আড়াই লাখও হয়ে যেতে পারে। প্রশ্ন জাগে, কেন এত খরচ? সব থেকে বড় কারণ যন্ত্রপাতির দাম। অত্যাধুনিক যে সব মেশিন এই কাজে ব্যবহার করা হয়, তার দাম কোটিতে পৌঁছে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ওষুধ, চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান সহ আরও অনুষাঙ্গিক খরচ। এত কিছুর বোঝা শেষমেশ এসে পড়ে পেশেন্টের উপর। এছাড়া আমাদের দেশে এই চিকিৎসা মোটের উপর প্রাইভেট সেন্টারগুলিতেই হয়। ফলে নিঃসন্তান আম আদমির নাগালের বাইরেই থেকে যাচ্ছে এই চিকিৎসা।
খরচ কমার কি সম্ভাবনা নেই?
অবশ্যই আছে। তবে এক্ষেত্রে সরকারের আরও এগিয়ে আসার দরকার। সব প্রযুক্তির বিকাশের ক্ষেত্রেই একটা নির্দিষ্ট হারে খরচ বাড়ে। কারণ দিন দিন উন্নততর যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হতে থাকে। সেই উন্নত যন্ত্র ব্যবহার করায় চিকিৎসার খরচও বাড়ে। তবে একটা সময় পর তাতে আসে স্থিতাবস্থা। তারপর তা মানুষের সাধ্যের মধ্যে আনার চেষ্টা শুরু হয়। এখানেই ভারত সরকারের আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া দরকার। আইভিএফের খরচ কমাতে ছোট ক্ষেত্রেও যে গবেষণা চলছে, সেখানে কেন্দ্র যদি আর্থিক সহায়তা করে, তাহলে সুফল মিলবেই। তা হলে আগামী পাঁচ-দশ বছরের মধ্যে আইভিএফের খরচ অন্তত ২০-২৫ শতাংশ কমে যেতেই পারে।
তা হলে বর্তমানে কী উপায়?
শেষ কয়েক বছরে দেশের বড় কিছু শহরে সরকারি উদ্যোগে কিছুটা কম খরচে আইভিএফের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গেই প্রথম পিজি হাসপাতালে সম্পূর্ণ নিখরচায় আইভিএফের চিকিৎসা হচ্ছে। পাশাপাশি আগামী দিনে জেলার মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতালেও এই ব্যবস্থা চালু করার একটা প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে আইভিএফের প্রাথমিক যে চিকিৎসা রয়েছে, তা জেলার হাসপাতালেই হবে। তখন শেষ পর্যায়ের জন্য স্রেফ পিজিতে এলেই হবে। দূরদূরান্ত থেকে বারবার কলকাতায় আসার ঝক্কি পোহাতে হবে না।
একটা কথা মাথায় রাখতে হবে ৩০-৩২ বছরের মধ্যে আইভিএফ হলে তাতে সাকসেস রেট অনেক বেড়ে যায়। কারণ মহিলার এগ তখন বেশি সংখ্যায় ও তুলনামূলক ভালো অবস্থায় থাকে। সেক্ষেত্রে খরচ তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম পড়ে। মহিলার বয়স যদি ৩৫ প্লাস হয়ে যায়, তখন কিন্তু খরচ বাড়বেই।
কিন্তু এখন কেউ অল্প বয়সে বিয়ে করেন না। নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে তারপর বিয়ে, সন্তানের ভাবনা। তারপর কোনও কমপ্লিকেশন দেখা দিলে চিকিৎসার খরচ বাড়ে। এক্ষেত্রে ২৫-২৬ বছরে পৌঁছেই মহিলারা এগ সংরক্ষণ করে রেখে দিতে পারেন। আমাদের দেশে বিষয়টি অবশ্যই বাঁকা চোখে দেখা হয়। তবে বয়স কম থাকতে থাকতে এগ প্রিসার্ভ করে রেখে দিলে ভবিষ্যতে বেশি বয়সে কোনও সমস্যা হলে সহজে তার সমাধান সম্ভব। তখন খরচ কিছুটা হলেও কম পড়ে।
আরও একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। বর্তমানে ক্যান্সারের সংখ্যা বাড়ছে। কারও ধরা যাক পেলভিক অঞ্চলে রেডিয়েশন করা হল। এক্ষেত্রে সেই নারীর ডিম্বাণু নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। একই কথা পুরুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সেক্ষেত্রে রেডিয়েশন শুরুর আগেই এগ বা সিমেন সংরক্ষণ করে রাখা প্রয়োজন। তাতে পরবর্তী সময়ে সন্তানলাভ সম্ভব। কিন্তু সচেতনতার অভাবে অধিকাংশই সেটা আর করেন না।