পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে উন্নতি ও সাফল্যের যোগ। ... বিশদ
গাউট কথাটা এসেছে গাট্টা থেকে। আগেকার দিনে অভিজাত, বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত একটু ভারী চেহারার মানুষজনদেরই হতো এই রোগ। তাই গাউট বা গেঁটে বাতকে ‘ডিজিজ অব কিং অ্যান্ড ক্যুইন’ও বলা হয়। তবে অসুখটি এখন আর তা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সমাজের সর্বস্তরেই এই রোগ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু, বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, যাঁরা বিলাসবহুল জীবনযাত্রা পছন্দ করেন, স্থূলকায়, হাই প্রেশার-ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভোগেন, আমিষ খাবার (মাংস, সামুদ্রিক মাছ) প্রচুর পরিমাণে খেতে পছন্দ করেন— তাঁদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। আবার মদ্যপান এবং গাউটের মধ্যেও রয়েছে সম্পর্ক। যাঁরা অ্যালকোহল বেশি পান করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে গাউটের লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
গাউটের প্রকারভেদ...
গাউট বা গেঁটে বাতকে বলা হয় মেটাবলিক জয়েন্ট ডিজিজ। এগুলি সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা যায়, অ্যাকিউট, ক্রনিক ও ইন্টার ক্রিটিক্যাল গাউট। মূলত ইউরিক অ্যাসিডের গোলমালের জন্য এই রোগ হয়। পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার মাংস, সামুদ্রিক মাছ, অ্যালকোহলে থাকে পিউরিন। পিউরিন ভেঙে শরীরে তৈরি হয় ইউরিক অ্যাসিড।
একইসঙ্গে সিউডো গাউটও দেখা যায় কারও কারও। সেখানে এমএসইউ (মনোসোডিয়াম ইউরেট) নয়, সিপিপিডি আর বিসিপি ক্রিস্টাল তৈরি হয়। এরসঙ্গে ইউরিক অ্যাসিডের কোনও যোগ নেই। অত্যন্ত বিরল এই সমস্যা।
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা
সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ২-৭ মিলিগ্রাম ইউরিক অ্যাসিড ও মেয়েদের ক্ষেত্রে ২-৬ মিলিগ্রামের মধ্যে থাকতে হবে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা।
সমস্যার উৎস...
পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার থেকে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হওয়ার সময় কিছু ক্রিস্টাল তৈরি হয়। তার নাম এমএসইউ (মনোসোডিয়াম ইউরেট) ক্রিস্টাল। এই ক্রিস্টালগুলো অস্থিসন্ধির মধ্যে জমা হয়। এর ফলে সেখানে যে সাইনোভিয়াল সেল রয়েছে, তার সঙ্গে বিভিন্ন ক্রিয়া-বিক্রিয়া করে। তার ফলে প্রদাহ তৈরি হয়। দেখা গিয়েছে, যে সমস্ত ছেলেদের ক্ষেত্রে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ৭ মিলিগ্রামের বেশি এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ৬ মিলিগ্রামের বেশি, তাঁদের গেঁটে বাত বা গাউটে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
উপসর্গ...
গাউট প্রথমে শুরু হয় পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে। সাধারণত দেখা যায়, কোনও ব্যক্তি বিয়ে বাড়ি বা কোনও অনুষ্ঠান বাড়িতে গিয়ে প্রচুর খাওয়াদাওয়া ও মদ্যপান করলেন। পরদিন ভোরবেলা থেকেই তাঁর পায়ের বুড়ো আঙুলে ব্যথা ও তার সঙ্গে ফুলে লাল হয়ে যাওয়ার উপসর্গ দেখা যেতে পারে। এই হল অ্যাকিউট গাউটের একটা লক্ষণ। এছাড়া, যাঁদের শরীরের ওজন বেশি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস আছে, নিয়মিত মদ্যপান করেন (মূলত বিয়ার, হাই স্পিরিট), তাঁরাও এই সমস্যায় ভুগতে পারেন। অ্যাকিউট গাউট দু’-তিন সপ্তাহ স্থায়ী হলে বা বারবার ফিরে এলে তখন তাঁকে ক্রনিক গাউট বলে।
চিকিৎসা
শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে দু’ভাবে। শরীরে বেশি মাত্রায় তৈরি হলে বা ওভার প্রোডাকশন হলে এমন জটিলতা দেখা দিতে পারে। কিডনি কোনওভাবে ইউরিক অ্যাসিডকে বের করতে না পারলেও গোলমাল দেখা দেয়। চিকিৎসার শুরুতে প্রথমেই ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা পরীক্ষা করাতে হয়। তবে অনেক সময় ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা খুব বেশি না বাড়লেও রোগের উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে! আসলে ব্যক্তিবিশেষে অসুখের প্রকাশ ভিন্ন হতে পারে। তাই এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অনেক সময় জয়েন্টের মধ্যে থেকে ফ্লুইড বের করে মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে এমএসইউ ক্রিস্টাল দেখা হয়। আল্ট্রাসোনোগ্রাম, বিশেষ ধরনের সিটিস্ক্যান দিয়েও ক্রিস্টালগুলি দেখা হয়। এরপর বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে চিকিৎসা শুরু হয়।
ওষুধ
অ্যাকিউট গাউটের ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে নন স্টেরয়েডাল অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ ব্যবহার করা হয়। রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে আমরা যে ওষুধগুলি খাওয়ার পরামর্শ দিই, সেগুলি দিয়েই প্রথমাবস্থায় গাউটের চিকিৎসা হয়। এর ১-২ সপ্তাহ পর যখন ব্যথা খানিকটা কমে যায়, তখন ওই ক্রিস্টালগুলি বের করার জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। কিছু ওষুধ আছে যা কিডনি দিয়ে ইউরিক অ্যাসিড বের করে দেয়। তবে ওষুধ বন্ধ করা যায় না। একটানা খেয়ে যেতে হবে। তাতে নতুন করে গাউটের সমস্যা মাথাচাড়া দেওয়া প্রতিরোধ করা যাবে। তবে তার সঙ্গে ডায়েট ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন দরকার। আশা করা যায় তাতেই রোগী উপকার পাবেন।