প্লিজ, আর একটু সময় নিয়ে দেখবেন ডাক্তারবাবু!
অনেক দিন ধরেই পেটের সমস্যা রয়েছে। নিয়মিত ডাক্তার দেখাতে হয়। বাড়ির বয়স্ক সদস্যদেরও মাঝেমধ্যেই চেক-আপে নিয়ে যেতে হয়। বহু দিন ধরেই একটা কথা মনে হয়, তা হল চিকিত্সকদের আরও একটু সময়ানুবর্তিতা থাকা দরকার। বহুবার হয়েছে, যে সময়ে ডাক্তারের আসার কথা, সেই সময়ের বহু পরে চিকিৎসক চেম্বারে আসছেন। সব চিকিত্সকের কথা বলছি না। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমার মতো অনেককেই ডাক্তার দেখাতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। জানি আমাদের দেশে রোগী অনুপাতে ডাক্তারের সংখ্যা অনেকটা কম। তবু তিনি যদি আর একটু সময়ে চেম্বারে আসতে পারতেন, রোগীদেরই সুবিধা হত। এছাড়া রোগীর ভিড়ে ডাক্তারবাবুদের দেখি, অনেক সময় ঠিকভাবে কথা না বলেই প্রেসক্রিপশন লিখতে শুরু করেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা অনেক। অল্প কথাতেই হয়তো রোগীর কী সমস্যা অনুধাবন করতে পারেন। কিন্তু রোগী হিসেবে আমার সেক্ষেত্রে একটু সমস্যা হয়। একটা খুঁতখুঁতে ভাব থেকে যায়। তাই ডাক্তারবাবুরা আরও একটু ধৈর্য ধরে আমাদের কথা শুনলে খুব ভালো হয়।
প্রীতম ভড় (চন্দননগর), তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী
গ্রামের কথা ভাবে কে!
একজন ডাক্তার যে রোগের চিকিত্সা করছেন, সে বিষয়ে তাঁর খুব ভালো জ্ঞান থাকবে, এটা আমরা ধরেই নিই। তিনি সত্, নিষ্ঠাবান হবেন। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা আর হচ্ছে কই। আমি দিনহাটায় থাকি। আমাদের শহরাঞ্চলে কোনও সমস্যা না হলেও, একটু গ্রামে গেলেই দেখতে পাই চিকিত্সা ব্যবস্থার দুর্দশা। গ্রামীণ হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চিকিত্সকের অভাব রয়েছে। অনেক চিকিত্সকই বড় শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে আসতে চান না। অনুরোধ করব, এই প্রান্তিক মানুষদের কথা ভেবে ডাক্তারবাবুরা গ্রামেও প্র্যাকটিস করুন। পাশাপাশি, রোগীদের আরও সময় দেওয়া দরকার। বহু ডাক্তারকে দেখি, কয়েক মিনিটের মধ্যে একজনের চিকিত্সা করে ফেলছেন। যদি আরও সময় একেকজন রোগীর জন্য দেওয়া যায়, তাহলে খুব ভালো হয়। রোগীর শারীরিক সমস্যার সঙ্গে মানসিক সমস্যার দিকেও নজর চিকিত্সকের দেওয়া উচিত। সেইসঙ্গে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও তাঁর দৃষ্টি রাখা দরকার।
লগ্নজিতা দাশগুপ্ত (দিনহাটা), গৃহবধূ
চাই আন্তরিকতা, হৃদয়ের ছোঁয়া
ইদানীং রোগী-চিকিত্সকের সম্পর্কটা যেন বড্ড বেশি কেজো হয়ে গিয়েছে। কয়েক বছর আগেও দেখতাম চিকিৎসক রোগীর সঙ্গে কখনও বন্ধুর মতো, কখনও সন্তানের মতো ব্যবহার করতেন। এতে রোগীও অনেক সহজে ডাক্তারবাবুর কাছে নিজের সব সমস্যার কথা বলতে পারতেন। এখন অধিকাংশ চিকিত্সকের মধ্যেই সেই আন্তরিকতার অভাবটা চোখে পড়ে। অবশ্যই এখন পেশাদারিত্বের যুগ। কিন্তু ডাক্তারবাবুদের মধ্যে সেই পেশাদারিত্বের পাশাপাশি আন্তরিকতার মিশ্রণ থাকাটা দরকার। তিনি আরও বেশি মানবিক হোন। সেই মুন্নাভাই ছবিতে দেখেছিলাম, ডাঃ আস্থানা মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষা দিচ্ছেন, রোগীদের স্রেফ অসুস্থ শরীর হিসেবে দেখতে। যুক্তির খাতিরে তা হয়তো ঠিক বলে মেনে নিলাম। কিন্তু একজন রোগী হিসেবে কখনই চাইব না, আমার চিকিত্সক আমায় স্রেফ অসুস্থ একজন মানুষ হিসেবে ভেবে নিক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, চিকিত্সক রোগীকে এমন সব জটিল রোগের নাম বললেন, যে মূমুর্ষ মানুষটি আরও ভেঙে পড়লেন। এক্ষেত্রে যদি একটু সহজ সরল ভাবে ডাক্তারবাবু রোগীকে তাঁর কী সমস্যা, তা জানাতেন, তা হলে অবশ্যই ভালো হয়। কারণ, মানসিক ভাবে চাঙা থাকলেই তো তাড়াতাড়ি শারীরিক সুস্থতা মেলে। এছাড়া যদি কোনও রোগীর আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়, সেক্ষেত্রে কম খরচে কীভাবে তিনি চিকিত্সা করাবেন, তা যদি ডাক্তারবাবু একটু বুঝিয়ে দেন, একটু পাশে দাঁড়ান, তা হলে তো খুবই উত্তম।
অংশুমিত্রা মুস্তাফি (কলকাতা, হেদুয়া এলাকা), অধ্যাপিকা
লিখেছেন সায়ন মজুমদার