সন্তানের দাম্পত্য অশান্তিতে মানসিক চিন্তা। প্রেম-প্রণয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ ও মনঃকষ্ট। ব্যবসার অগ্রগতি। ... বিশদ
দেখা যাক আয়ুর্বেদশাস্ত্র এ বিষয়ে কী বলছে? কীভাবে ফল খাওয়া যাবে তা নিয়ে আয়ুর্বেদে দুটো কথা বলা হয়েছে। দন্তনিষ্পীড়িত না যন্ত্রনিষ্পীড়িত অর্থাৎ দাঁতে চিবিয়ে ফল খাবেন না যন্ত্রে পেষণ করে? চরক সংহিতা অনুসারে চিবিয়ে ফল খেলেই উপকার বেশি। তাহলে সরাসরি ফলের গুণ আপনার শরীরে ঢুকবে। যন্ত্রনিষ্পীড়িত ফল খাওয়ার কী অসুবিধা, সেটাও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেহেতু যন্ত্র দ্বারা পেষণের ফলে কিছুটা সময় পেরিয়ে যায়, গুণাগুণও সেই পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হতে পারে। একে বলে কালাপেক্ষ। অর্থাৎ আপনি ফল যখন খাচ্ছেন, তখন গুণও সরাসরি আপনার শরীরে প্রবেশ করছে। কিন্তু যন্ত্রের পেষণের জন্য ফলের রস প্রকৃতির সংস্পর্শে আসছে, তার একটা সময়কালও থাকছে। ফলে তার গুণাগুণের পরিবর্তন হতে পারে।
একটা উদাহরণ দিয়ে বলি। ধরুন আখের রস। আখ রস করার সময় বিশেষ করে পঞ্জাব অঞ্চলে দেখবেন আখের খোসা না ছাড়িয়েই রস করে ফেলা হয়। আবার আমাদের এখানে খোসা ছাড়ানো হয়। তবে কন্দ বা গাঁটগুলো থেকে যায়। সেগুলো রস করে ফেলায় গুণের তফাত হয়। আখ ছাড়িয়ে চিবিয়ে খেলে যে সমস্যাটা হয় না। এটা অন্যান্য ফলের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য।
এছাড়াও কিন্তু ফল দিয়ে আমরা বিভিন্নরকম কুইজিন বা প্রিপারেশন তৈরি করি। যেমন ধরুন আম পান্না, বেলের শরবত ইত্যাদি। কচি বেল বা পোড়া বেলের শরবত বঙ্গদেশে বহুল প্রচলিত। পাকা বেলের শরবত যেমন হয়, তেমনই কাঁচা বেলের শরবতও হয়। কিন্তু পুড়িয়ে করা হয়। ‘পান্না’ শব্দটা এসেছে পানক থেকে। আয়ুর্বেদে পানক হল একটি আহার কল্পনা। প্রথমে পোড়ানো হচ্ছে, তারপর নিষ্পেষিত হচ্ছে, তারপর অনেকরকম আলাদা দ্রব্য যোগ করা হচ্ছে। যেমন মিষ্টির জন্য মিছরি, তারপর সৈন্ধব মেশানো হয়, অম্লদ্রব্য, শুকনো আদার গুঁড়ো মেশানো হয়। এইরকম অন্যান্য দ্রব্য মিশিয়ে একটা কল্পনা করা হয় বা একটা বিশেষ জিনিস বানানো হয় যা শরীরের পক্ষে উপকারী। ওর বদগুণটাকে কমিয়ে অন্য দ্রব্যের ভালো গুণগুলো আরোহণ করা। ফলের রসেও বিশেষ বিশেষ কল্পনার উল্লেখ আয়ুর্বেদে আছে। অর্থাৎ শুধু যন্ত্রনিষ্পেষিত ফলের রস নয়, তার সঙ্গে অন্যান্য দ্রব্য মিশিয়ে এমন কিছু তৈরি করা যা শরীরের পক্ষে উপকারী। তার আলাদা আলাদা গুণেরও উল্লেখ আছে। তবুও তুলনামূলকভাবে কাঁচা ফলের থেকে খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি থেকে পানক বানানো হলে তা কিন্তু বিষ্টঙ্গী। এই বিষ্টঙ্গী শব্দের অর্থ হল যা সহজে হজম হয় না। কিন্তু কাঁচা বেল বা আমের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয় না।