একাধিক সূত্রে অর্থপ্রাপ্তি ও ঋণশোধে মানসিক ভাব মুক্তি। নিজ বুদ্ধি ও দক্ষতায় কর্মোন্নতি ও সুনাম। ... বিশদ
নুন-লেবুর শরবত
উপকরণ: পাতিলেবুর রস, বিটনুন, চিনির গুঁড়ো, জল ও বরফকুচি।
উপকারিতা: প্রাকৃতিক ওআরএস হিসেবে নিমেষে দেহমনকে চাঙ্গা করে তোলে। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে, দেহের ওয়াটার-ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক রাখে, লেবুর রসের ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, অ্যানেমিয়া, দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া, ঠোঁটের কোণে ঘা ইত্যাদি সমস্যা দূর করে। সর্দিকাশি ও জ্বরেও এই শরবত অত্যন্ত উপকারী। তবে বরফ বা ঠান্ডা জল ব্যবহার করা যাবে না। সাধারণ ঘরের তাপমাত্রায় পান করতে হবে এই পানীয়।
কাঁচা আম পোড়ার শরবত
উপকরণ: পোড়ানো বা সেদ্ধ করা কাঁচা আম, চিনি, বিটলবণ, গোলমরিচ গুঁড়ো, ভাজা জিরে গুঁড়ো, জল।
উপকারিতা: দেহের জল ও ইলেকট্রোলাইটিস ব্যালান্স ঠিক রাখে, ডিহাইড্রেশন দূর করে, হজম ভালো রাখে, কনস্টিপেশন দূর করে। কাঁচা আমের পটাশিয়াম রক্তের উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে (তবে এক্ষেত্রে শরবতে লবণ ব্যবহার করা যাবে না), ডায়াবেটিকরা চিনি ছাড়া এই শরবত খেতে পারেন। পটাশিয়াম রেস্টিকটেড ডায়েটে থাকলেও চলবে না এই শরবত।
বেলের শরবত
উপকরণ: পাকা বেলের শাঁস, গুঁড়ো দুধ বা দই, নুন, গুড় বা চিনি, বরফ, জল।
উপকারিতা: বেলে প্রচুর পরিমাণে সল্যুবল ডায়েটারি ফাইবার, ক্যারোটিনয়েডস, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম ইত্যাদি ছাড়াও যথেষ্ট পরিমাণে স্টার্চ ও কিছু পরিমাণে প্রোটিন আছে। কনস্টিপেশন, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, হজমের সমস্যা, হাইপারটেনশন, হাইপার লিপিডেমিয়া, আন্ডারওয়েট, অনিদ্রা ইত্যাদি বিভিন্ন রোগে বেলের শরবত উপযুক্ত। বেলের শরবতে ব্যবহৃত দুধ বা দই ক্যালশিয়াম ও প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এই শরবত।
ডায়াবেটিকরা বেলের শরবত খেতে চাইলে অল্প পরিমাণে খাবেন এবং এতে চিনি মেশানো যাবে না। বয়স্ক মানুষজনের জন্যে বেলের শরবত অত্যন্ত উপকারী। কারণ, হজমশক্তি ভালো রাখা, কনস্টিপেশন দূর করা, হাড়ের ভঙ্গুরতা প্রতিরোধ করা, ক্যাটারাক্ট বা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করা এবং ক্যান্সার ও অ্যালঝাইমার্স প্রতিরোধে সাহায্য করে এই বেল পানা বা বেলের শরবত।
আনারসের শরবত
উপকরণ: পাকা আনারস, জিরে ভাজার গুঁড়ো, বিটলবণ, গোলমরিচের গুঁড়ো, চিনি বা চিনির সিরাপ, লেবুর রস, জল, বরফকুচি।
উপকারিতা: আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস, ক্যালশিয়াম এবং ডায়েটারি ফাইবার থাকে। জ্বরজারি, সর্দিকাশি, ব্রঙ্কাইটিস, বদহজম, কনস্টিপেশন, জন্ডিস, জিভ ও ঠোঁটে ঘা, অস্টিওপোরোসিস ইত্যাদি সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে আনারস। দেহের ওয়াটার ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক রেখে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সাহায্য করে আনারসের শরবত। আনারসের ব্রোমেলিন এনজাইম হজম ও বিপাক ভালো রাখে এবং দেহের বাড়তি ওজন কমায়। ওবেসিটিতে এই আনারসের শরবত অত্যন্ত উপকারী। তবে তা হতে হবে চিনি ও লবণবিহীন। রক্তে যাঁদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি তাঁরাও চিনি ছাড়া এই শরবত খেতে পারেন। আনারসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মাঝারি ধরনের, তাই ডায়াবেটিকরা মাঝেমধ্যে খেতে পারলেও খাবেন অল্প পরিমাণে এবং অবশ্যই চিনি ছাড়া।
যাঁদের আনারস বা সাইট্রাস ফ্রুটে অ্যালার্জি আছে তাঁরা আনারসের শরবত খাবেন না। যাঁরা হজম সংক্রান্ত সমস্যা বা অত্যধিক অ্যাসিডিটিতে ভোগেন তাঁদেরও চলবে না এই শরবত। হার্টের রোগীরাও অবশ্যই মাত্রামাফিক খেতে পারেন আনারসের শরবত।
শসার শরবত
উপকরণ: কচি শসা, ধনেপাতা কুচি, বিটলবণ, লেবুর রস, পুদিনাপাতা, চিনি বা স্টিভিয়া, জল, বরফ, কাঁচালঙ্কা।
উপকারিতা: শরীরকে শীতল ও সতেজ রাখতে এই শরবতের জুড়ি নেই। যাঁরা ওজন কমাতে চাইছেন, তাঁরা প্রাণভরে পান করতে পারেন অত্যন্ত লো-ক্যালরির ভিটামিনস ও মিনারেলস সমৃদ্ধ এই শসার স্মুদি। ডায়াবেটিস থেকে হার্টের রোগী, ক্যান্সার থেকে কনস্টিপেশন, বদহজম থেকে গেঁটে বাত প্রায় সবক্ষেত্রেই চলতে পারে এই দুর্দান্ত টকঝাল শরবত। চিনির বদলে প্রাকৃতিক বিকল্প চিনি হিসেবে স্টিভিয়া ব্যবহার করতে পারেন।
তরমুজের শরবত
উপকরণ: তরমুজ, চিনি বা সুগার সাবস্টিটিউট, পাতিলেবু, বিটলবণ বা লো সোডিয়াম সল্ট।
উপকারিতা: তরমুজে ক্যালরির পরিমাণ অত্যন্ত কম, জলীয় ভাগ খুব বেশি হওয়ায় তীব্র দাবদাহের সময়ে এক গ্লাস ঠান্ডা ঠান্ডা তরমুজের শরবত পান করতে পারলে নিমেষে দেহের শুষ্কতা ক্লান্তি, দুর্বলতা দূর হবে, দেহ-মন হয়ে উঠবে তরতাজা। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন জাতীয় তীব্র শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস থাকে যা ব্রেস্ট ও প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
খাট্টা-মিঠা শরবত
উপকরণ: টকদই, কাজুবাদাম, কিসমিস, খেজুর, আখের গুড় বা চিনি, লবণ, জাফরান, বরফ ও জল।
উপকারিতা: অত্যন্ত সুস্বাদু উৎকৃষ্ট মানের এই শরবতে আয়রন, ক্যালশিয়াম, প্রোটিন, ক্যালরি, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিনস ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান থাকে। অপুষ্টি, ক্লান্তি, দুর্বলতা, আন্ডারওয়েট, অ্যানিমিয়া প্রভৃতি সমস্যা দূর করতে এই শরবতের জুড়ি নেই। গর্ভবতী মায়েদের জন্যেও উপকারী এই শরবত। শরীরের ওয়াটার ইলেকট্রোলাইটস ব্যালান্স ঠিক রাখা ও গরমে শরীরকে স্নিগ্ধ শীতল রাখা ছাড়াও ইনস্ট্যান্ট এনার্জি দেয় এই শরবত।
দইয়ের শরবত/ দইয়ের ঘোল/ ছাচ
উপকরণ: টকদই, চিনি/ মধু, বিটলবণ, পুদিনাপাতা, জিরে ভাজার গুঁড়ো, এসেন্স, বরফ, জল।
উপকারিতা: গরমে শরীর শীতল রাখার জন্যে বাঙালির ঘরে ঘরে দইয়ের শরবত পানের রেওয়াজ আছে। নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ সুস্বাদু এই পানীয়। প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, আয়রন, বি ভিটামিনস এবং প্রোবায়োটিকের গুণাগুণ থাকায় এই দইয়ের শরবত বা দইয়ের ঘোল হজমে সাহায্য করে। কনস্টিপেশন দূর করে, দাঁত ও হাড় ভালো রাখতে সাহায্য করে, মেটাবলিজম বাড়ায় ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। হাইব্লাডপ্রেশার, অ্যানিমিয়া, আইবিএস, গলব্লাডার স্টোন, ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগেও চলতে পারে দইয়ের ঘোল। তবে স্বাস্থ্যকর উপায়ে লস্যি বা দইয়ের ঘোল বানাতে হলে চিনিবিহীন, ননফ্যাট দই ব্যবহারই বাঞ্ছনীয়। ওজন কমাতে চাইলে অবশ্যই ডায়েটে রাখতে হবে এই উপকারী শরবত।
দক্ষিণ ভারতে এই দইয়ের শরবতের সঙ্গে বিভিন্ন পছন্দসই মশলা, আদার রস, হার্বস ইত্যাদি মেশানো হয়— যাকে বলে নিরমোর। আবার অন্ধ্রপ্রদেশে একে বলে মাজ্জিগা।
আম পান্না
উপকরণ: কাঁচা আম, চিনি, গোলমরিচ, জিরে ভাজার গুঁড়ো, কাঁচালঙ্কা, পুদিনাপাতা, ঠান্ডা জল, তুলসীপাতা, বরফ।
উপকারিতা: তীব্র গরমের দাবদাহ থেকে শরীর শীতল ও সতেজ রাখতে আম পান্নার জুড়ি নেই। মরশুমের জ্বরজারি, সর্দিকাশি ও হজমের গোলমাল দূর করতেও সাহায্য করে কাঁচা আম পান্না। কাঁচা আমে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও অন্যান্য ফাইটোকেমিক্যালস থাকে এবং পুদিনাপাতা, তুলসীপাতা, হার্বস ইত্যাদি পেট ঠান্ডা রাখে ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।