আয় বৃদ্ধি ও গৃহসুখ বৃদ্ধি। কর্মস্থলে সাফল্য ও প্রশংসা লাভের সম্ভাবনা। শরীর-স্বাস্থ্য বুঝে চলুন। ... বিশদ
বৃদ্ধ হনুমান মানুষের কণ্ঠেই বললেন, আমি তো এক অশক্ত হনুমান। বৃদ্ধ। চলতে ফিরতেও পারি না। তুমি এক যুবক। শক্তিশালী এবং তেজোদীপ্ত। তুমি নিজেই সরিয়ে দাও।
ভীম এগিয়ে গিয়ে সেই চেষ্টাই করলেন। কিন্তু এ কী? এ তো নড়ানোই যাচ্ছে না। আশ্চর্য তো! প্রথমে হেলাফেলা করেছিলেন। অতএব একটু শক্তিপ্রয়োগ করলেন। নাহ! তাও কিছু হচ্ছে না। ব্যাপারটা বেশ অপমানজনক। ভীম প্রায় সর্বশক্তি নিয়োগ করলেন। তাকিয়ে দেখলেন বৃদ্ধ হনুমানের মুখে মৃদু হাসি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভীম বুঝলেন, কিছু একটা ভুল হচ্ছে। এই হনুমান কোনও সাধারণ প্রাণী হতেই পারে না।
ভীম করজোড়ে বললেন, আমি ক্ষমাপ্রার্থী। হার স্বীকার করছি। আমি দম্ভভরে ভেবেছি আপনি এক নিতান্তই দুর্বল প্রাণী। আর আমি ভূলোকের মহাশক্তিধর। সেই ভুল ভাঙল।
হনুমান এবার নিজের প্রকৃত রূপ ধারণ করলেন। নিজের শরীর বাড়িয়ে করলেন পাহাড়প্রমাণ। বুকে খোদিত রামসীতা। ভীম প্রণাম করলেন। এই মহান চরিত্র যে তাঁর ভ্রাতা সেটাও বুঝলেন ভীম।
ভীম বললেন, আপনি আমাকে আশীর্বাদ করুন। আর আমাদের পক্ষে থাকুন। আমরা একটা প্রলয়ঙ্করী যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে যাচ্ছি। একদিকে আমরা পাণ্ডব। অন্যদিকে কৌরব।
হনুমান বললেন, যুগ বদলে গিয়েছে। এটা এক অন্য যুগ। দ্বাপর যুগ। আমার কর্মকাণ্ডের যুগ সমাপ্ত। আমি তোমাদের কোনওরকম সহায়তা করতে পারব না। তবে আমার আশীর্বাদ আছে। আর আমি জানি তুমি যে কাজে যাচ্ছ সেটা সফল হবে। আমি সত্যের পক্ষে। আমি জ্ঞানের পক্ষে। তোমরা যেহেতু এই যুদ্ধে সত্যের পক্ষে, তাই জয় তোমাদের হবেই। ভীম আবার প্রণাম করে এগিয়ে চললেন।
এই কাহিনি তো সকলের অবগত। তাহলে কেন আবার উচ্চারিত? কারণ, দিল্লির আধুনিকতম কেন্দ্রস্থল কনট প্লেসের নিকটেই থাকা হনুমান মন্দিরে দিল্লিবাসীর এক অবশ্য গন্তব্য বহুকাল ধরে। আর বৃদ্ধ অথবা যুবক, পূজারিরা যুগ যুগ ধরে ভক্ত ও পর্যটকদের বলে আসছেন একটাই গল্প। সেটি হল, এই সেই স্থান যেখানে ছিল জঙ্গল। আর এখান থেকেই ভীম যাচ্ছিলেন হস্তিনাপুরে। এই সেই জমিখণ্ড যেখানে শুয়েছিলেন হনুমান। ভীমের দর্প ভঙ্গ করে তাঁকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। আর এই মন্দির নির্মাণের প্রাথমিক কাজ ভীম করে গিয়েছিলেন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে জয়ের পর।
কতটা সত্যি এই কাহিনি? মিথ ও লোকশ্রুতি সত্য-মিথ্যার গ্রাহ্য করে না। কিন্তু আধুনিক দিল্লি এই কাহিনি বিশ্বাস করে। ভীম যে ভৈরব মন্দির স্থাপন করেছিলেন সেটা অনেকেই বিশ্বাস করে। তবে সেটি পুরনো কেল্লার পিছনে। যা ছিল একদা ইন্দ্রপ্রস্থ গ্রাম। সত্যি গ্রামের নামই ছিল ইন্দ্রপ্রস্থ। তাহলে কি এই গ্রাম ইন্দ্রপ্রস্থ আর পাণ্ডবদের রাজধানী তথা রাজপ্রাসাদ ইন্দ্রপ্রস্থও একই স্থানে? সেটাও বা কে বলবে? মহাভারত ইতিহাস? নাকি মহাকাব্য অর্থাৎ কাল্পনিক এক কাহিনি সেই নিয়েই তো টানাপোড়েন ইতিহাসবিদ, পুরাতাত্ত্বিক, ধর্মীয় মানুষের মধ্যে। সুতরাং ভৈরব মন্দিরের মতোই তার অদূরে এই কনট প্লেস নামক আধুনিক মার্কেট প্লেস কোনও এককালে যখন জঙ্গলে আকীর্ণ ছিল এবং সেখান থেকেই হেঁটে গিয়েছেন ভীম, দেখা হয়েছে অমর হনুমানের সঙ্গে, সেই জনশ্রুতির বিশ্বাসও মানুষের মধ্যে প্রোথিত। কিন্তু ওই জঙ্গলে কেন এসেছিলেন ভীম? সেকথাও বলা রয়েছে। দ্রৌপদীর জন্য একটি সুগন্ধযুক্ত ফুল খুঁজতে। যা কেউ কোনওদিন দেখেনি।
দিল্লির কনট প্লেসে থাকা হনুমান মহারাজজি মন্দিরে নাকি স্বয়ং তুলসীদাস এসেছিলেন? সেরকমও দাবি করা হয়। বলা হয়ে থাকে দিল্লির সম্রাটের সামনে তিনি ভজন শুনিয়ে হনুমান মন্দিরের উপর হিন্দুদের একচ্ছত্র অধিকার আদায় করেন। স্থাপিত হয় মন্দিরগাত্রে একটি অর্ধচন্দ্র। কেন? যাতে কোনও মুসলিম শাসক এই মন্দিরের দিকে নজর না দিতে পারে। অর্থাৎ ভাঙতে না পারে। এসব জনশ্রুতি ও বিশ্বাস। তবে বর্তমান আদলটি নির্মাণ করেন অম্বরের প্রথম মহারাজা মান সিংহ। সম্রাট আকবর তখন সিংহাসনে। পরবর্তীকালে আবার মহারাজা জয় সিং যখন অদূরেই নির্মাণ করলেন যন্তরমন্তর, তখন এই মন্দিরকে আবার সংস্কার করলেন। কনট প্লেসের বাবা খড়্গ সিং মার্গ থেকে প্রবেশ করে রৌপ্যনির্মিত মন্দির দ্বারে রামায়ণের চিত্রগাথা। দেওয়ালে তুলসীদাসের সুন্দরকাণ্ডের গোটা অধ্যায়। একা হনুমান? মোটেই নয়। রাধা-কৃষ্ণ আছেন। রয়েছেন শিব-পার্বতী। স্থান করে নিয়েছেন সন্তোষী মাতা! ভাঙা। গড়া। আবার ভাঙা। আবার গড়া। মহাকাব্য থেকে ইতিহাস। ভীম থেকে মানসিংহ। সত্যি এবং মিথের মধ্যে যতই টানাপোড়েন থাক, দিল্লির কনট প্লেসের হনুমান মন্দিরের মাহাত্ম্য ও আকর্ষণ আজও উজ্জ্বল!