পিতার স্বাস্থ্যহানি হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন-পাঠনে পরিশ্রমী হলে সফলতা ... বিশদ
১২ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার তাঁর ১৫৮তম জন্মদিন। তাঁর রোগজীর্ণ শরীরের অবসান ৪ জুলাই, ১৯০২। তাঁর প্রতিষ্ঠিত মঠ-মিশনে মৃত্যুর কোনও স্থান নেই, কারণ তিনিই তাঁর শিষ্যদের শিখিয়ে গিয়েছেন, চিরঞ্জীবী মানুষরা নতুন করে জন্ম নেন তাঁদের মৃত্যুদিনে। বিবেকানন্দের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আরও সব অদ্ভুত এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে মাত্র উনচল্লিশ বছরে তিনি যা ভেবে গিয়েছেন, করে গিয়েছেন এবং বলে গিয়েছেন তা সম্পূর্ণভাবে আজও মানুষের বোধগম্য হয়নি। আরও যা আশ্চর্য, এই সন্দেহপ্রবণ, তর্কমুখর এবং নিন্দুকের দেশের ১৩০ কোটি মানুষ কাউকেই পরিপূর্ণ এবং সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন সার্টিফিকেট দিতে সফল হয়নি। রঘুপতি রাঘব রাজারাম থেকে জওহরলাল নেহরু এবং তদীয় কন্যা ইন্দিরা গান্ধী সবারই তীব্র সমালোচনা হয়েছে, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর কারও ছাড় নেই আমাদের হাত থেকে। একমাত্র একজন ভারতীয় চল্লিশে না পৌঁছিয়েও কোনও অজ্ঞাত কারণে সকল মানুষের প্রিয়, কোনও আশ্চর্য কারণে তিনি সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে। সবাই জানতে চায় কোন বিষয়ে তিনি পৃথিবীর মানুষকে কী কী বলে গিয়েছেন, কেমন করে সব সমালোচনা এবং সব স্বার্থের উপরে উঠে গিয়ে সত্যের জয়কে আজও আবাহন জানানো সম্ভব।
বিবেকানন্দ নামের এই মানুষটি সত্যিই বিশ্বজনের বিস্ময়, তেইশ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করলেন এক পূজা মন্দিরের আচার্যের আকর্ষণে, তাঁর কথাতেই সাত পুরুষের ওকালতি পেশাকে বিসর্জন দিলেন এবং একদিন প্রিয় গুরুদেবের নির্দেশে সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন। তারপর কপর্দকশূন্য অবস্থায় ভ্রমণ করলেন সারা ভারত। দরিদ্রের পর্ণকুটির থেকে রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত সর্বত্র তাঁর অবাধ গতি, তারপর হঠাৎ তিনি নাম পাল্টালেন, নরেন্দ্রনাথ এবং বিবিদিষানন্দ থেকে রাজস্থানের এক তরুণ রাজন্যের পরামর্শে তিনি হলেন সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ। এই খেতড়িরাজই কেটে দিলেন জাহাজের টিকিট, ঠিক করে দিলেন কী পরতে হবে বিদেশে, কেমন হবে ত্যাগী সন্ন্যাসীর বেশবাস। তাঁরই কর্মচারীকে নির্দেশ দিলেন বোম্বাই শহরের জাহাজঘাট পর্যন্ত ওঁর সঙ্গে থাক। এই জাহাজের নাম দ্য পেনিনসুলার, বন্দর ছাড়ল ৩১ মে, ১৮৯৩। এই বিখ্যাত জাহাজে জাপানের কোবে বন্দরে ছেড়ে, ইয়োকোহামা থেকে আর এক জাহাজে চড়লেন এবং সেই রয়াল মেল সার্ভিস ‘এমপ্রেস অফ ইন্ডিয়া’ ইয়োকোহামা ছাড়ল ১৪ জুলাই ১৮৯৩। তারপর পৌঁছল কানাডার ভ্যাঙ্কুবরে। শুরু হল তিরিশ বছর বয়সের এক ভারতীয় সন্ন্যাসীর জয়যাত্রা অজানার সন্ধানে। তারপর এল স্মরণীয় সেই ১১ সেপ্টেম্বর ১৮৯৩, সময় সকাল দশটা, সামনে পাঁচ হাজার শ্রোতা। পশ্চিমের রুদ্ধদ্বার আকস্মিক এক অজ্ঞাত ভারতীয় তরুণের সামনে উদঘাটিত হল, ‘সিস্টারস অ্যান্ড ব্রাদার্স অব আমেরিকা’ শব্দগুলি আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অক্ষয় সংগ্রহে রূপান্তরিত হল।
স্কুলের ছাত্রাবস্থা থেকে আমরা শিকাগো বিশ্বসভায় বিবেকানন্দের অবিশ্বাস্য সাফল্যের কথা শুনে আসছি। স্বামীজির ভ্রাতা মহেন্দ্রনাথ দত্ত পরবর্তীকালে বলেছিলেন, ‘প্রথমে দশ মিনিট বক্তৃতার সুযোগ ছিল, সেই দশ মিনিটে সভাপতির আসন হইতে ঘণ্টার শব্দ হইল, স্বামীজি কাগজটি হাতে করিয়া যেমন বসিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন অমনি শ্রোতৃবর্গ কোলাহল করিয়া মহা আগ্রহ প্রকাশ করিতে লাগিল। স্বামীজি পুনরায় বলিবার জন্য ১০ মিনিট সময় পাইলেন। কিন্তু ১০ মিনিট উত্তীর্ণ হইলে আবার বসিবার যেমন চেষ্টা করিতে লাগিলেন, পুনরায় শ্রোতৃবর্গের আগ্রহ প্রকাশ পাইতে লাগিল। পুনরায় স্বামীজি বলিবার জন্য ৫ মিনিট সময় পাইলেন আবার, তাহার পর ৫ মিনিট পাইলেন, মোট তিরিশ মিনিট সময় পাইয়াছিলেন।’
প্রবীণ সন্ন্যাসী স্বামী লোকেশ্বরানন্দকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, মহারাজ এসব তো ১৮৯৩ সালের ঘটনা, কিন্তু এত বছর পরেও তাই নিয়ে সকলের এত উত্তেজনা কেন? স্বামী লোকেশ্বরানন্দ বলেছিলেন, শিকাগোর ১১ সেপ্টেম্বর ছোটখাট ব্যাপার নয়, তিরিশ বছর বয়সের এক সন্ন্যাসী আমেরিকার দ্বার উন্মোচন করলেন, ভারতেরও যে বিশ্ববাসীকে কিছু দেবার আছে তা স্বীকৃত হল। এরকম ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি।
‘আপনি তাহলে বলছেন, ভারতের নবজাগরণে আমেরিকানদের মস্ত একটা ভূমিকা রয়েছে।’
‘অবশ্যই আছে,’ বলেছিলেন লোকেশ্বরানন্দ। ‘তবে দেশের আধ্যাত্মিক নবজাগরণের জন্যে অতলান্তিকের ওপারে যাওয়ার প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়। স্বামীজি গিয়েছিলেন, ধনীর দেশ থেকে দরিদ্র ভারতের জন্য কিছু অর্থ সংগ্রহ করতে।’
কিন্তু সেই প্রচেষ্টা তো সফল হয়নি, দরিদ্রের জন্য টাকা তুলতে বিদেশে অথবা স্বদেশে কোথাও তো তেমন সফল হননি স্বামী বিবেকানন্দ। কিন্তু তিনি তাঁর বিপুল স্বীকৃতির সুযোগ নিয়ে দেশে ফিরে এসে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন বিশ্বের নবীনতম সন্ন্যাসী সংগঠন, যদিও সবাই জানে এই সন্ন্যাসী সঙ্ঘ পৃথিবীর দরিদ্রতমও বটে।
পরাধীন দেশের দরিদ্রদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিদেশে অর্থসংগ্রহ অসম্ভব জেনেও আমাদের বিবেকানন্দ কিন্তু হতোদ্যম হননি। তিনি চেয়েছিলেন আমেরিকায় স্পিরিচুয়াল ভারতের পদচিহ্ন অঙ্কিত হোক। অত্যন্ত কম সময়ে ঝটিকাবেগে তিনি আমেরিকায় যে কঠিনকর্মের ভিত্তিভূমি স্থাপন করেছিলেন তা আজও সে দেশে বেঁচে রয়েছে। বহু শতাব্দী আগে বুদ্ধের অনুরাগীরা সেই কাজ করেছিলেন, আবার তা হল পৃথিবীর আর এক প্রান্তে। উনিশ শতকের শেষ দশকে, পুরো বিশ শতকে এবং এই একবিংশ শতকেও সেই আধ্যাত্মিক যোগাযোগ আজও আমাদের বিস্ময়।
দূরদর্শী স্বামীজি বুঝেছিলেন, এর জন্য বিশেষ প্রয়োজন কিছু ধৈর্যশীল ভারতীয়ের ত্যাগ। যেমন এক সময় বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা ছড়িয়ে পড়েছিলেন দূরদূরান্তে। নতুন যুগে নতুন ভাবে এই আপাত অসম্ভব কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বিবেকানন্দ কিছু উদার মার্কিনী অনুগামীর সাহায্যে। মার্কিন দেশের উদার মানসিকতা এই প্রচেষ্টার ভিত্তিভূমি, তাঁরা স্বাধীনভাবেই সে কাজ করবেন, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন ভারতের কিছু সন্ন্যাসীর সহযোগিতা যাঁরা নিজের দেশে থেকে অনেক দূরে চলে এসে কঠিন এক কাজের অংশীদার হবেন।
ভারতবাণীকে আমেরিকার দ্বারে পৌঁছে দেবার দুরূহ কাজে বিবেকানন্দ অনন্য, কিন্তু প্রথম নন। তাঁর আগেও দু’জনকে খুঁজে পেলাম, তাঁর পরেও আটজন। এঁদের নাম দেওয়া যেতে পায়ে একাদশ অশ্বারোহী। আশ্চর্যের বিষয় এঁরা সকলেই বাঙালি। প্রথমজনের নাম প্রতাপচন্দ্র মজুমদার। দুর্ভাগ্যক্রমে পরবর্তী সময়ে মার্কিনমুলুকে বিবেকানন্দের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য হয়েছিল। দ্বিতীয় অশ্বারোহী রবীন্দ্রনাথের দাদার জামাই মোহিনীমোহন চট্টোপাধ্যায়, ইনি বিদেশে গীতার ব্যাখ্যাদান বন্ধ রেখে স্বদেশে ফিরে সফল আইনজীবী হয়েছিলেন এবং ঠাকুর বাড়ির আইনি উপদেষ্টার কাজ ছাড়াও বিবেকানন্দ ও নিবেদিতার বিশেষ গুণগ্রাহী হয়েছিলেন। তৃতীয় অশ্বারোহীটি অবশ্যই স্বামী বিবেকানন্দ।
দূরদর্শী বিবেকানন্দ যাঁকে চতুর্থ অশ্বারোহী হিসেবে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তাঁর নাম স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ। শশী মহারাজ হিসেবে যিনি আজও এদেশের ভক্তজনের হৃদয়ে অবস্থান করছেন। তাঁর আমেরিকা যাবার জন্য বিবেকানন্দ সব ব্যবস্থা করেছিলেন, কিন্তু বিপদ বাধাল তাঁর এগজিমা। ডাক্তারদের পরামর্শ নেওয়া হল, তাঁরা ঠান্ডার দেশে যেতে বারণ করলেন। নিরুপায় বিবেকানন্দ তখন নির্বাচন করলেন তাঁর ভাই শরৎ মহারাজকে যিনি স্বামী সারদানন্দ নামে আজও অবিস্মরণীয়। ইংল্যান্ডে স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়ে সারদানন্দ যাত্রা করলেন আমেরিকার উদ্দেশে এবং সেখানে ক’বছর কাটিয়ে তিনি আবার ফিরে এসেছিলেন নবপ্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মঠ-মিশনের জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব নিয়ে এবং সেই সঙ্গে তিনি রচনা করেছিলেন অমর রামকৃষ্ণকথা— ‘লীলাপ্রসঙ্গ’। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সারদানন্দের সঙ্গে লন্ডনে দেখা হয়েছিল বিবেকানন্দ ভ্রাতা মহেন্দ্রনাথের এবং তাঁর স্মৃতিকথায় আমরা বক্তৃতায় অনভ্যস্ত ভারতীয় সন্ন্যাসীর এক মনোমুগ্ধকর বিবরণ পাই।
কয়েক বছর আমেরিকায় বেদান্তবাণী প্রচার করে স্বামী সারদানন্দ দেশে ফিরে আসেন বৃহত্তর দায়িত্ব নিতে। কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেন সারদানন্দ কেন রামকৃষ্ণ মঠ-মিশনের সভাপতি হননি? বলে রাখা ভালো, প্রথমবার তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন কিন্তু পরাজিত হন এবং পরবর্তীকালে সঙ্ঘ সভাপতি হবার জন্য বারবার অনুরুদ্ধ হয়েও তা নিতে রাজি হননি। সঙ্ঘের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন জীবনের শেষদিন পর্যন্ত।
মার্কিন দেশে আর এক ভারতীয় অশ্বারোহী অবশ্যই স্বামী অভেদানন্দ। তিনিই বেদান্তবাণী প্রচারে রামকৃষ্ণশিষ্যদের মধ্যে দীর্ঘতম সময় ব্যয় করেন ২৪ বছর এবং স্বদেশে ফিরে এসে আরও সময় কাটান। তাঁর দেহাবসান এদেশেই কলকাতায়। ভারতবাণী প্রচারে বিদেশে অক্ষয় কীর্তিস্থাপনের স্থপতি আর একজন রামকৃষ্ণতনয়, তাঁর নাম স্বামী তুরীয়ানন্দ। যাঁকে ভক্তগণ আজও হরি মহারাজ নামে পূজা করেন। কলকাতা থেকে দ্বিতীয়বার বিদেশযাত্রার সময় জাহাজে স্বামীজির সঙ্গী হয়েছিলেন দু’জন— তুরীয়ানন্দ ও স্বামীজির মানসকন্যা তথা অবিস্মরণীয়া শিষ্যা মার্গারেট নোবেল। নিবেদিতা নামে তিনি ভারতবর্ষকে অনন্তকালের অসীম কৃতজ্ঞতাপাশে বদ্ধ করে গিয়েছেন।
সপ্তম নিবেদিতপ্রাণ সন্ন্যাসীটি জন্মভূমি ত্যাগ করে সুদূর আমেরিকা যাত্রা করে আর ফেরেননি, সেখানেই বোমার ঘায়ে আত্মদান করেছিলেন। তাঁর নাম স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ। এককালে তিনি স্বদেশে সঙ্ঘের প্রথম মুখপত্র ‘উদ্বোধন’-এর সম্পাদক হয়েছিলেন।
আরও একজন রামকৃষ্ণশিষ্য ও বিবেকানন্দ চেলাকে আমরা মাঝে মাঝে ভুলে যাই, তিনি স্বামী নির্মলানন্দ। বিবেকানন্দের মহাসমাধির পরের বছর যে দু’জন সন্ন্যাসী আমেরিকায় গিয়েছিলেন, তাঁরা হলেন স্বামী নির্মলানন্দ (১৯০৩-১৯৩৬) এবং স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ (১৯০৩-১৫)। প্রথমজনের কর্মস্থান নিউইয়র্ক (ওয়েস্ট) এবং দ্বিতীয়জনের কীর্তিভূমি সানফ্রান্সিসকো। আমরা যেন ভুলে না যাই এই দ্বিতীয়জনই প্রথম রামকৃষ্ণতনয় যিনি বেদান্তবাণী প্রচারের সময় সভাপ্রাঙ্গণে ঘাতকের বোমায় আহত হয়ে কয়েকদিন পরে হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এইখানেই কিন্তু ভারতীয় সন্ন্যাসীদের প্রবাহ ছিন্ন হয়নি। অর্থাৎ সেই ১৮৯৩ সালে মার্কিনদেশে বেদান্তবাণী প্রচারের যে ধারাবাহিকতা শুরু হল, তা আজও অব্যাহত। যেসব সন্ন্যাসী জন্মভূমির আকর্ষণ ছেড়ে এতদিন ধরে মার্কিনমুলুকে বেদান্তবাণী প্রচার করেছেন তার একটি তালিকা সম্প্রতি জোগাড় করতে পেরেছি। সেই তালিকার বিশিষ্টদের কথা স্বামীজির এবারের জন্মদিন উপলক্ষে এদেশের মানুষদের মনে করিয়ে দেওয়ার বিশেষ ইচ্ছা। কিন্তু তার আগে বলার ইচ্ছা সংসারত্যাগী সন্ন্যাসীদের প্রবাসের জীবনযাত্রা এবং তাঁদের বেশবাস সম্বন্ধে কিছু খবরাখবর।
বিদেশের এই বেশবাস নিয়ে হাজার তর্ক এবং কিছু বিস্ময়। ধরা যাক এ-বিষয়ে সাহসী পথপ্রদর্শক স্বয়ং স্বামীজির কথা। ইতিহাস-প্রেমী এক স্বামীজি বলেছিলেন, সন্ন্যাসীর বেশবাস তো বহুযুগ ধরেই মানুষের জানা, কৌপীনধারী হয়েই তো তাঁরা বিশ্বপরিক্রমার জন্যে প্রস্তুত। স্বয়ং বিবেকানন্দ তো মহাপ্রয়াণের আগেই কৌপীন সম্বল করে বেলুড় মঠ থেকে বেলুড় বাজার পর্যন্ত সানন্দে ঘুরে এসেছিলেন। তাঁর যিনি পথপ্রদর্শক আচার্য তিনি তো ধুতি পরলেও সেই বস্ত্র শরীরে প্রায়ই রাখতে ভুলে যেতেন। কিন্তু ভুলে যাবেন না, তিনিও সাহেবদের প্যান্টে কৌতূহলী ছিলেন। একবার সাহেবদের এই ড্রেসে তিনি আগ্রহী হয়েছিলেন। বৈকুণ্ঠনাথ সান্যাল তাঁর লীলামৃতে বলেছেন, ‘তাঁর শ্রীঙ্গে অনেক সময় বস্ত্রখানি পর্যন্ত থাকত না। বসনখানি কক্ষদেশে রেখে বলতেন, তোরা সব ইয়ং বেঙ্গল আসা অবধি এত সভ্য হয়েছি যে, সদাই কাপড় পরে থাকি। মাইরি, আমি সভ্য হয়েছি।’
স্বদেশে এবং বিদেশে স্বামীজির বেশবাস নিয়ে কথা উঠলে এক সন্ন্যাসী রসিকতা করেছিলেন, এই প্যান্টালুন ইংরেজ বা ইউরোপীয়দের নয়, বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডার মধ্যপ্রাচ্যের কোনও এক জায়গায় আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এই পাতলুন পরায়। এ নিয়ে তাঁর সৈন্যদের মধ্যে যথেষ্ট অসন্তোষ হয়েছিল।
পাঠশালায় ধুতি পরলেও ছাত্রাবস্থায় নরেন্দ্রনাথ দত্ত যে প্যান্ট পরতেন তার ছবি নেই কিন্তু কিছু প্রমাণ আছে। তার পরবর্তী পর্বে বেশবাস নিয়ে যে বারবার মত পরিবর্তন হয়েছে তা নরেন্দ্রনাথের সন্ন্যাসজীবনের বেশবাসের আলোকচিত্র থেকেই পরিষ্কার। আমরা এই সময়েই তাঁর পাগড়ি পরা ছবি দেখতেও অভ্যস্ত। বিদেশে বেশবাস কী হবে সে নিয়েও রাজস্থানের খেতড়ির মহারাজের যথেষ্ট দুশ্চিন্তা ছিল এবং তার জের চলেছিল বোম্বাইয়ের জাহাজঘাটা পর্যন্ত।
রোম্যাঁ রোলাঁ লিখেছেন, সমুদ্রযাত্রা কালে স্বামীজি দুটি জিনিস ধারণ করলেন, একটি ঘন লাল সিল্কের আলখাল্লা ও গেরুয়া পাগড়ি, অপরটি ‘বিবেকানন্দ’ নাম। এই অপূর্ব অঙ্গাবরণ ধারণ করতে স্বামীজির কিন্তু দ্বিধা ছিল। খেতড়ি মহারাজের নির্দেশে মুন্সি জগমোহন বোম্বাই পর্যন্ত তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন এবং প্রথম শ্রেণীর টিকিট ছাড়াও বেশ কিছু উত্তম পোশাক উদার হস্তে কিনে দিয়েছিলেন। জাহাজে উঠে স্বামীজির গৈরিক বসন নেই, ট্রাউজার ও একটা লম্বা কোট পরেছেন, সেই সঙ্গে বুট জুতা। জাহাজের ডেকে তিনি পায়চারি করছেন এবং একটা চুরুট টানছেন, কিন্তু কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। মুন্সি জগমোহনের ধারণা ছিল যে তিনি নিজে অনেক ইংরেজের সঙ্গে মিশেছেন, সেইজন্য ট্রাউজার জামা-বুট পরা প্রভৃতি নিয়মকানুন তাঁর বেশ খানিকটা জানা আছে। সেইজন্য তিনি স্বামীজিকে সতর্ক করে ট্রাউজার পরবার প্রথা শেখানোর চেষ্টা করলেন।
মহেন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘স্বামীজির ট্রাউজার পায়ের শেষটা জুতোর গোড়ালিতে ঠেকেছিল। জগমোহনের ধারণা, যে ট্রাউজারের শেষটা জুতো থেকে দু-তিন আঙুল উঁচুতে থাকবে; কারণ তা না হলে পায়ের মোজা দেখতে পাওয়া যাবে না। সেইজন্য তিনি স্বামীজিকে অনবরত সতর্ক করে বলতে লাগলেন, ‘স্বামীজি ট্রাউজারটা গোড়ালিতে ঠেকান, একটু উঁচু করে পরুন।’ স্বামীজি এবার জগমোহনলালকে বললেন, আমি বাল্য অবস্থাতেই এই ধরনের পোশাকে অভ্যস্ত, এ বিষয়ে আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবার কোনও আবশ্যক নেই।’ আমাদের দুর্ভাগ্য দ্য পেনিনসুলার জাহাজে স্বামীজির কোনও ছবি আমাদের সংগ্রহে নেই। থাকলে প্যান্ট-পরায় অভ্যস্ত সন্ন্যাসী সম্বন্ধে আমাদের একটা ধারণা হতো।
আমেরিকা পর্বে স্বামীজির যেসব ছবি আমরা দেখেছি সেখানে কালো রঙের যে ঊর্ধ্ববস্ত্র তিনি পরিধান করেছেন তা খ্রিস্টীয় যাজকদের কথাই মনে করিয়ে দেয়। ধর্মমহাসভায় তিনি পাগড়ি পরিহিত ভারতসন্ন্যাসী। আর শিকাগো স্টুডিওতে তোলা যে ছবিতে তিনি বহুচর্চিত সেখানে তিনি গৈরিকবস্ত্র ও পাগড়িতে সুসজ্জিত। এই ছবিটাই আমাদের সবাইকে টানে। তাছাড়া জানা যায়, এই গৈরিক বস্ত্রাবৃত সন্ন্যাসী আমেরিকার রাজপথে কীভাবে দুষ্টদের দ্বারা নিগৃহীত হয়েছিলেন, কারণ উদ্ধত পথচারীদের ধারণা হয়েছিল এই লোকটি গেরুয়ারঙের বিছানার চাদর পরে প্রকাশ্য রাজপথে বেরিয়ে পড়েছেন, তাঁর কোনও লজ্জাশরম নেই।
রাজপথের দুশ্চিন্তা থেকেই বোধ হয় বিদেশে কোটপ্যান্ট-টাই পরা সন্ন্যাসীদের উদয়। স্বয়ং স্বামীজি এই কোটপ্যান্ট পরা সন্ন্যাসীদের স্রষ্টা। এদেশ থেকে যাঁরা বেদান্তবাণী প্রচারের জন্য আমেরিকাগামী যাত্রীজাহাজে অথবা পরবর্তী সময়ে উড়োজাহাজে চড়েছেন, তাঁরা এদেশ থেকেই কোটপ্যান্টের আগাম ব্যবস্থা করে নিতেন। এই সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ চোখে না পড়লেও বিভিন্ন স্মৃতিকথায় কিছু সংবাদ ছড়িয়ে আছে। ধরুন এক সন্ন্যাসীর কথা, যিনি তাঁর ‘পথিকের ডায়েরি’ স্মৃতিকথায় মনে করিয়ে দিয়েছেন ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মে স্বামীজি আমেরিকার উদ্দেশে জাহাজে উঠেছিলেন, সেই কথা মনে রেখে ৩১ মে ১৯৭১-এ বোম্বাই শহরে স্বামীজির মূর্তি প্রতিষ্ঠা উৎসবে অংশ নিয়ে ১ জুন ভোরে বোম্বাই বন্দর থেকে প্লেনে উঠেছিলেন। তাঁর গন্তব্যস্থল দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়াতে বেদান্ত সোসাইটি, যার পরিচিত নাম হলিউড বেদান্ত সোসাইটি।
স্বামী চেতনানন্দের প্রথম ব্রেকজার্নি প্যারিসের অর্লি এয়ারপোর্ট, সেখান থেকে ৫ জুন লন্ডনে, সেবার যাত্রাসময় মাত্র এক ঘণ্টা। লন্ডনের রামকৃষ্ণ আশ্রম যে অঞ্চলে তার নাম হলান্ডপার্ক। অধ্যক্ষ স্বামী ভব্যানন্দের সঙ্গে পার্কে বেড়াতে বেরবার সময় তাঁকে গৈরিক বস্ত্র ছেড়ে ‘প্যান্টকোট পরে বেরতে হল— নতুবা হিপিরা পিছু নেবে।’ এই প্যান্টকোট তিনি নিজেই কলকাতাতেই তৈরি করে নিয়েছিলেন। ৮ জুন লন্ডনকে বিদায় জানিয়ে আবার প্লেনে চড়া। তখন নিউইয়র্ক পৌঁছতে প্রায় ৭ ঘণ্টা সময় লাগত। নিউইয়র্ক শহরে তিনি স্বামী পবিত্রানন্দজির কাছে ছিলেন এবং যথা সময় ১০২ তলা এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং দেখতে বেরিয়েছিলেন বেদান্ত সোসাইটির বিশিষ্ট সভ্যজনের সঙ্গে। সেই সময় ভারতীয় সন্ন্যাসী আমাদের পরিচিত গৈরিক বেশে ছিলেন না কোট-প্যান্ট-টাই পরেছিলেন তার উল্লেখ ‘পথিকের ডায়রিতে’ নেই।
এবার তাঁর দেখা হল আর এক খ্যাতনামা সন্ন্যাসী স্বামী নিখিলানন্দের সঙ্গে এবং সেখানেই ‘দুপুরে ভারতীয় খিচুড়ি, তেলেভাজা ও চাটনি খেলাম।’ তরুণ সন্ন্যাসীকে স্বামী নিখিলানন্দ তাঁর বিখ্যাত ইংরেজি অনুবাদ ‘Gospel of Ramakrishna’ উপহার দিলেন।
১১ জুন আবার কেনেডি বিমানবন্দর— ‘আমি চললুম আটলান্টিক থেকে প্যাসেফিক মহাসাগরের কূলে— আমার নতুন কর্মস্থলে।’
লস এঞ্জেলস বিমানবন্দরে স্বামী অসক্তানন্দ ও স্বামী শ্রদ্ধানন্দসহ বেশ কয়েকজন সন্ন্যাসী এসেছিলেন। এয়ারপোর্টের মানুষ এত গেরুয়াপরা মানুষকে একসঙ্গে কখনও দেখেনি। একজন আমেরিকান এগিয়ে এসে বিদেশ থেকে সদ্য আগত যাত্রীকে বললেন, ‘জানি না আপনি কে? আপনি নিশ্চয় ইম্পর্ট্যান্ট লোক। একবার করমর্দন করতে চাই।’ নতুন আগন্তুক হাত বাড়িয়ে দিলেন।
এসব ১১ জুন, ১৯৭১ সালের কথা। তারপর অর্ধশতাব্দী পূর্ণ হতে চলেছে, সেই সন্ন্যাসী এখন সেন্ট লুইস বেদান্ত সোসাইটির অধ্যক্ষ, বহু ইংরেজি ও বাংলা বইয়ের সুপরিচিত লেখক স্বামী চেতনানন্দ। তাঁর জন্ম অবিভক্ত বাংলার খুলনা জেলায়, দেশবিভাগের পরে ১৪ বছর বয়সে বারাকপুরে চলে আসেন এবং দাদার সঙ্গে প্রথম যখন দক্ষিণেশ্বর মন্দির দেখতে আসেন তখন ক্লাস এইটের ছাত্র এবং কয়েক বছর পর অদ্বৈত আশ্রমে যোগাযোগ করেন এবং ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মদিনে (১৯৬০) অদ্বৈত মঠে যোগ দেন। তাঁর সন্ন্যাস গ্রহণ ১৯৬৯ সালে এবং তারপরের বছরই ঠিক হয় তাঁকে হলিউড বেদান্ত মঠে যেতে হবে স্বামী প্রভবানন্দকে সাহায্য করবার জন্য। সাত বছর হলিউডে থেকে ১৯৭৮ সালে তাঁকে যেতে হল সেন্টলুইস বেদান্ত সোসাইটিতে স্বামী সৎপ্রকাশনন্দকে সাহায্য করবার জন্য। পরের বছরই স্বামী সৎপ্রকাশানন্দের দেহান্ত এবং তখন থেকেই তিনি সেন্টলুইসে।
মার্কিন মুলুকে ভারতীয় সন্ন্যাসীদের কর্মজীবন কেমনভাবে কাটে তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেবার জন্য এই বর্ণনাটুকু দিলাম।
স্বামীজির পরে স্বামী সারদানন্দ, অভেদানন্দ, তুরীয়ানন্দ, নির্মলানন্দ, ত্রিগুণাতীতানন্দের আমেরিকা আগমনের কথা অনেকেই জানেন। কিন্তু তেমন জানা নেই তার পরবর্তী কোটপ্যান্টপরা সন্ন্যাসীদের কথা। সেই ১৯০৬ সাল থেকে যেসব সন্ন্যাসী আমেরিকায় বেদান্তের কঠিন দায়িত্বপালন করেছেন তাঁদের একটি তালিকা সম্প্রতি হাতে এসেছে। এঁদের প্রথম দশজনের নাম জানবার আগ্রহ অনেকের। এঁরা হলেন:
স্বামী বোধানন্দ ১৯০৬-১৯৫০ (নিউইয়র্ক, জয়েন্ট)
স্বামী পরমানন্দ ১৯০৬-১৯৪০ (বোস্টন)
স্বামী প্রকাশানন্দ ১৯০৬-১৯২৬ (সানফ্রান্সিসকো)
স্বামী সৎচিদানন্দ ১৯০৭-১৯১০ (লস এঞ্জেলস)
স্বামী রাঘবানন্দ ১৯২৩-১৯২৭ (নিউইয়র্ক ওয়েস্ট)
স্বামী প্রভবানন্দ ১৯২৩-১৯৯৬ (হলিউড)
স্বামী দয়ানন্দ ১৯২৬-১৯৩১ (সানফ্রান্সিসকো)
স্বামী অখিলানন্দ ১৯২৬-১৯৬২ (প্রভিডেন্স, বোস্টন)
স্বামী মাধবানন্দ ১৯২৭-১৯২৯ (সানফ্রান্সিসকো)
স্বামী গণেশ্বরানন্দ ১৯২৭-১৯৩৭ (শিকাগো)
মার্কিন দেশে রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের দীর্ঘ তালিকায় দেখেছি কেউ কেউ পরবর্তী সময়ে দেশে ফিরে এসেছেন, কিন্তু তাঁদের বেশিরভাগই আমেরিকাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। দীর্ঘতম সময় মার্কিন দেশে যাঁরা জীবন কাটিয়েছেন তাঁদের তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন—
স্বামী সর্বগতানন্দ (৫৫ বছর)
স্বামী প্রভবানন্দ (৫৩ বছর)
স্বামী বিযিদিষানন্দ (৫১ বছর)
স্বামী অশেষানন্দ (৪৯ বছর)
স্বামী চেতনানন্দ (৪৯ বছর)
এঁদের মধ্যে স্বামী চেতনানন্দই এখনও জীবিত এবং তাঁর কঠিন দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
অনেকেই জানতে চান, কার নির্দেশে গৈরিক সন্ন্যাসীরা কোট-প্যান্ট-টাই পরা সন্ন্যাসী হলেন? সহজ উত্তর, এর পিছনে রয়েছে স্বয়ং স্বামীজির সবুজ সঙ্কেত। যস্মিন দেশে যদাচার নির্দেশটি তো বহু যুগ আগেই আমাদের দূরদর্শী পূর্বপুরুষরা দিয়ে গিয়েছেন। এঁরা অনুষ্ঠানকালে এবং সোসাইটির কার্যকালে অবশ্যই গৈরিক বস্ত্রে আবৃত হন। কিন্তু পথেঘাটে তাঁরা কোটপ্যান্ট পরেন স্বামীজির প্রদর্শিত পথে। অনুসন্ধিৎসুরা জেনে রাখুন, স্বামী বিবেকানন্দ যেমন প্রথম দিকে মাথায় পাগড়ি পরেছেন তেমন ওয়েস্টার্ন স্টাইল প্যান্টও পরেছেন। বিশ্ববিখ্যাত হওয়ার পরে স্বদেশে ফিরে এসে স্বামীজি যে হাফপ্যান্ট পরে রেলের যাত্রী হয়েছেন, তার উল্লেখ রয়েছে কারও কারও স্মৃতিকথায়।
আমেরিকায় স্বামী সারদানন্দ, স্বামী অভেদানন্দ, স্বামী তুরীয়ানন্দের ওয়েস্টার্ন ড্রেসের ছবি আমরা কিছু দেখেছি। কিন্তু পরবর্তীকালের সন্ন্যাসীদের এই সব ছবি তেমন বহুল প্রচারিত হয়নি। বিশ্ববিজয়ী স্বামী বিবেকানন্দের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সুদূর মার্কিন দেশে বেদান্তবাণী প্রচারের প্রয়োজনে যাঁরা কোট-প্যান্ট-টাই পরেন তাঁদের কয়েকটি ছবিও এখানে প্রকাশ করা গেল।
এঁদের কয়েকজনের অবিশ্বাস্য জীবনকথা ইদানীং ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছে। তবু তাঁদের অনেকেই আজও আমাদের কাছে তেমন পরিচিত নন। এঁদের বেশ কয়েকজনের জীবনকথা ধরে রেখেছেন স্বামী চেতনানন্দ তাঁর সাম্প্রতিক প্রকাশিত ‘প্রাচীন সাধুদের কথা’ বই-এর প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডে। আমি অবাক হয়ে ভাবি, শৃন্বন্ত বিশ্বে বেদান্তবাণী প্রচারের জন্য কত মানুষ সেই ১৮৯৩ সাল থেকে কতরকম বেশে কতভাবে তাঁদের দুর্জয় প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন!
...........................................
সহযোগিতায় : উজ্জ্বল দাস