কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায় ... বিশদ
বৈচিত্র্যের সম্ভার ভারতে অজস্র। তারই অন্যতম, মধ্যপ্রদেশের পাহাড় কেটে তৈরি করা খাজুরাহো মন্দির। যার প্রতি স্থাপত্যশৈলীতে লুকিয়ে কোনও না কোনও ইতিহাস। তার সঙ্গে জুড়ে থাকা ভারতের প্রাচীন শিল্প, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি বিশ্বজনীন।
পাহাড় কেটে খাজুরাহো মন্দির তৈরি করে চান্দেল রাজবংশ। মধ্যপ্রদেশের ছত্রপুর জেলার খাজুরাহো শহরের কাছে প্রাচীন হিন্দু ও জৈন মন্দিরের এই মিলিত স্থানে লুকিয়ে আছে ভারতের ইতিহাস। শোনা যায়, চান্দেল বংশের পতনের পর এই মন্দির লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিল। অনেক পরে, ব্রিটিশ সার্ভেয়ার টিএস বার্ট মন্দিরটি পুনরুদ্ধার করেন। এর কয়েক বছর পর মন্দির নিয়ে সব তথ্য একত্রিত করা হয়।
অনেক মন্দির জুড়ে তৈরি হয়েছে এই ঐতিহাসিক স্থান। যার মধ্যভাগে রয়েছে কেন্দ্রীয় মহাদেবা টেম্পল। সেই বেদিতে অধিষ্ঠিত দেবাদিদেব মহাদেব। আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অবয়ব বা প্রতিকৃতির মাধ্যমে পুরুষ ও নারীর নানা চিত্র ফুটে উঠেছে। খাজুরাহোর মন্দিরে ধর্ম, অর্থ ও মোক্ষ এই তিন ধরনের চিত্র পাহাড় কেটে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশের বেশ খানিকটা প্রান্তিক এলাকায় খাজুরাহোর মন্দিরগুলি অবস্থিত। চান্দেলা রাজত্বকালে রাজশিল্পীদের উদ্যোগে মন্দিরগাত্র জুড়ে কঠিন পাথরের গায়ে ফুটে উঠতে লাগল অদ্ভুত সব কারুকাজ।
পুরাণ বলে, বারাণসীতে হেতম্বী নামে পরমাসুন্দরী এক ব্রাহ্মণ কন্যা ছিলেন। অল্প বয়সে বিধবা হন। গ্রীষ্মের এক জ্যোৎস্না আলোকিত রাতে তিনি যখন সরোবরে স্নান করছিলেন, তখন তাঁকে দেখে চন্দ্রদেব মুগ্ধ হন। চন্দ্রদেব মানুষের রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে আসেন এবং হেতম্বী ও চন্দ্রদেব মিলিত হন। হেতম্বী গর্ভবতী হয়ে পড়েন ও নিজের ভুল বুঝতে পেরে চিন্তিত হন। চন্দ্রদেব ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে হেতম্বীর গর্ভে যে সন্তান আছে, সে হবে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী ও খাজুরাহোর প্রথম রাজা। হেতম্বী বারাণসী ত্যাগ করে বহু দূরে সন্তানের
জন্ম দেন। নাম রাখেন চন্দ্রবর্মণ। পিতার মতোই সে সাহসী ও শক্তিশালী হয়। হেতম্বী আর চন্দ্রদেবের প্রেমের নিদর্শন হিসেবেই খাজুরাহো গড়ে ওঠে।
আর একটি মিথ এইরকম— হেতম্বী ছিলেন কলিঞ্জর রাজ্যের রাজব্রাহ্মণ মণিরামের কন্যা। অল্প বয়সেই বিধবা হন। মণিরাম একদিন ভুল করে রাজাকে অমাবস্যার রাতকে পূর্ণিমা বলে ফেলেন। হেতম্বী পিতার এই ভুল জানার পর চিন্তিত হয়ে পিতার সম্মান রক্ষার্থে চন্দ্রদেবের কাছে প্রার্থনা জানান। চন্দ্র হেতম্বীর রূপে মোহিত হন ও তাঁরা মিলিত হন। হেতম্বী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। মণিরাম ঘটনাটি জানতে পেরে শোকে মুহ্যমান হয়ে নিজেকে অভিশাপ দিয়ে পাথরের মূর্তিতে পরিণত করেন। পরবর্তীতে হেতম্বীর সন্তান চন্দ্রতেয় চান্দেলা রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন ও খাজুরাহো মন্দির নির্মাণ করেন।
এই অনিন্দ্যসুন্দর মন্দিরটির অধিকাংশ মূর্তিই বেলেপাথর দিয়ে তৈরি হয়েছে। মূলত শিব, বিষ্ণু ও জৈনদের মন্দির হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এই মন্দির। খাজুরাহো মন্দিরে বিভিন্ন ধরনের মূর্তির প্রতিকৃতি রয়েছে। এই মন্দিরকে অনেক পণ্ডিতই ‘দেবতাদের উল্লাস কেন্দ্র’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আবার অনেকে মনে করেন, এই মন্দিরে তান্ত্রিক যৌনতার প্রাধান্য রয়েছে এবং তার প্রতিলিপিই এই মন্দিরে প্রতিফলিত হয়েছে। এই মন্দিরকে বলা হয় ‘টেম্পল অব লাভ’।
কীভাবে যাবেন: রেলপথে সাতনা স্টেশনে নামতে হবে। এলাহাবাদ থেকে মুম্বইগামী প্রতিটি ট্রেন সাতনা হয়ে যায়। সাতনা থেকে খাজুরাহো গাড়িতে ঘণ্টা তিনেক সময় লাগে। বাসে সময় লাগে চার ঘণ্টা। খাজুরাহোয় থাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হোটেল আছে।