কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায় ... বিশদ
জামাকাপড় ধুয়ে যে পরিষ্কার করে, তারও প্রয়োজন হয় বাড়তি যত্ন। কোন কোন উপায়ে পরিষ্কার করা যায় এই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রটিকে?
জীবনকে সহজ করে তুলতে নানারকম অ্যাপ্লায়েন্সের ব্যবহার কমবেশি সব মধ্যবিত্ত বাড়িতেই আজকাল প্রচলিত। তবে সেসব গ্যাজেটস ও মেশিন ঠিকমতো পরিষ্কার না করলে তা নষ্ট হওয়ার শঙ্কা বেশি। যেমন অনেক বাড়িতেই দেখা যায়, ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করে প্রায় সব ধরনের পোশাক পরিষ্কার করছেন ঠিকই, কিন্তু ওয়াশিং মেশিনটিকেই নিয়ম মেনে পরিষ্কার করছেন না। দিনের পর দিন জামাকাপড় থেকে বেরনো ময়লা, সাবান জল ওয়াশিং মেশিনে জমে একসময়ে কাজ করার ক্ষমতা হারাচ্ছে মেশিনটি কিংবা অল্প কয়েক বছর যেতে না যেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এর মূল মোটরটি। কোথাও আবার ওয়াশিং মেশিনের ভিতরেই জন্ম নিচ্ছে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক।
কী কী জীবাণুর ভয়
ছত্রাকঘটিত সমস্যা: দীর্ঘদিন ধরে ময়লা জমে ওয়াশিং মেশিনের ভিতর মোল্ড ও ক্যান্ডিডার মতো ছত্রাক জন্মাতে পারে। এই দুই ছত্রাক থেকে সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের সংক্রমণ হতে পারে। ময়লা জমে থাকা ওয়াশিং মেশিনে জামাকাপড় কাচলে অনেকের ত্বকে সংক্রমণ হতে পারে। র্যাশ বেরতে পারে। ওয়াশিং মেশিনের ফিল্টারে ধুলোও জমে। শীতের পোশাকের রোঁয়া এই ফিল্টারে জমা হতে থাকে। তাই সেটি খুলে ভালো করে পরিষ্কার করা দরকার। নইলে ছত্রাক জন্মাতে পারে ওয়াশিং মেশিনে।
স্ট্যাফাইলোকক্কাসের ভয়: যে কোনও ভিজে, আর্দ্র জায়গায় জন্মায় স্ট্যাফাইলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া। দাদ, হাজার মতো অসুখ ও এগজিমা, কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিসের মতো অসুখ এই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে হয়।
ই কোলাই-এর চোখরাঙানি: ময়লা জলে এই ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। ওয়াশিং মেশিন ভালো করে পরিষ্কার না করলে সেখানে ময়লা জল জমে জন্মাতে পারে ই কোলাই। এই ধরনের ময়লা যন্ত্রে জামাকাপড় কাচলে পোশাকের সুতোর মধ্যে সূক্ষ্ম ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে থাকে ও তা কোনওভাবে পেটে গেলে ডায়রিয়া, মূত্রনালির সংক্রমণ ও তলপেটে নানা সংক্রমণ হতে পারে।
ওয়াশিং মেশিন সাধারণত দু’রকমের হয়। টপ লোডিং ও ফ্রন্ট লোডিং। এই দুই ধরনের মেশিন পরিষ্কার করার ধরন আলাদা। এদের কাজের ধরনও আলাদা। তাই টপ এবং ফ্রন্ট লোডিং— এই দুই ধরনের মেশিন পরিষ্কার করার ভিন্ন কৌশল রয়েছে।
টপ লোডিং হলে কী করবেন?
• ওয়াশিং মেশিনের ডিসপেনসর ড্রয়ারে লিক্যুইড সোপ বা সাবান রাখার জায়গা করা থাকে। এই সাবানই ধোয়ার কাজটি করে। কাচাকুচির পর এই ডিসপেনসর খাপে প্রচুর ময়লা ও সাবান লেগে থাকে। তাই কাচা শেষ হলেই এই ডিসপেনসরটি পরিষ্কার করে নিন।
• বেশিরভাগ ওয়াশিং মেশিনের ফিল্টার খুলে আলাদা করে পরিষ্কার করা যায়। সেখানে পোশাকের যাবতীয় ময়লা, ছেঁড়াখোঁড়া সুতো ও রোঁয়া জমা হতে থাকে। তাই প্রতিদিন কাচার পর ফিল্টার খুলে পরিষ্কার করুন। ওয়াশিং মেশিনের সঙ্গে দেওয়া কিটের মধ্যেই ফিল্টার পরিষ্কার করার নির্দেশিকা দেওয়া থাকে।
• কাপড় কাচার ড্রাম, ঢাকনা ও আনাচকানাচ ভালো করে পরিষ্কার না করলে তা দেখতেও খারাপ দেখায়। জামাকাপড় কাচার ড্রামটির ভিতরের অংশ গরম জল দিয়ে কিছুটা পূর্ণ করে তার মধ্যে বাজারচলতি ২-৩ কাপ সাদা ভিনিগার মিশিয়ে দিন। তারপর ওয়াশিং মেশিনটি চালিয়ে দিন। ভিনিগারে থাকে অ্যাসিটিক অ্যাসিড। তাই মেশিনের ভিতরটি ভালো করে পরিষ্কার হবে। অনেকে লেবু-জল দিয়েও কাজটি সারার কথা ভাবেন। তবে এই পদ্ধতি কাজে লাগালে ২-৩ কাপ পাতিলেবুর রস তৈরি করা একটু কঠিন। তাই ভিনিগারই হতে পারে সেরা বিকল্প। মেশিনের ঢাকনা, বাইরের কাঠামো পুরোটাই এই জল দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিতে পারেন।
ভিনিগার দিয়ে পরিষ্কারের পর প্রয়োজন বুঝলে আরও একবার বেকিং সোডা দিয়েও যন্ত্রটি পরিষ্কার করে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে কিছুটা বেকিং সোডা ওই ড্রামে ছড়িয়ে তারপর তাতে গরম জল ঢেলে যন্ত্রটি চালিয়ে দিন। পাইপ দিয়ে জল বেরিয়ে গেলে ভিতরটি শুকনো করে মুছে নিলেই ঝকঝক করবে ওয়াশিং মেশিন।
ফ্রন্ট লোডিং ওয়াশিং মেশিন পরিষ্কারের উপায়
• ফ্রন্ট লোডিং ওয়াশিং মেশিনে জলের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত গরম জল ভরে নিন। এবার ২-৩ কাপ সাদা ভিনিগার ডিটারজেন্ট ট্রে-তে দিন। এবার ওয়াশ অ্যান্ড স্পিন সাইকেলে মেশিন চালিয়ে দিন। ভিনিগারের অ্যাসিটিক অ্যাসিড মেশিনের ভিতর থাকা নোংরা ও জীবাণুকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।
• একবার এই সাইকেল শেষ হওয়ার পর ফের এই ডিটারজেন্ট ট্রে-তে ব্লিচ ভরুন। এতে ফ্রন্ট লোডিং ওয়াশিং মেশিনের ভিতরে জমে থাকা গন্ধ ও দাগও দূর হয়ে যাবে।
• দ্বিতীয়বার ব্লিচ দিয়ে ধোয়া হলে তৃতীয়বার সাধারণ গরম জল ও লিক্যুইড সোপ দিয়ে মেশিন ফের চালিয়ে দিন।
• এরপর ডিটারজেন্ট ট্রে-তে লিক্যুইড সোপ রেখে তাতে ভালো করে নরম সুতির কাপড় বা স্পঞ্জ চুবিয়ে নিন। এবার সেই সাবান-যুক্ত কাপড় বা স্পঞ্জ দিয়ে ডিটারজেন্ট ট্রে-টিও পরিষ্কার করে নিন।
• মেশিনের বাইরের অংশ যে কোনও ক্লেনজার স্প্রে দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন।
• ফ্রন্ট লোডিং মেশিনের দরজায় একটি রাবারের সিল থাকে। সেখানে ময়লা লেগে থাকলে ৩ লিটার জলে কাপ ব্লিচ মিশিয়ে পরিষ্কার কোনও স্পঞ্জ দিয়ে ঘষে সিলটি পরিষ্কার করে দিন।
• পরিষ্কারের পর মেশিনের ভিতর ও বাইরের অংশ শুকনো নরম কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছে নিন।
কাচাকুচি বেশি হলে এই পদ্ধতিগুলো ১৫-২০ দিন অন্তর প্রয়োগ করুন। কম কাচা হলে বা বাড়ির সদস্য সংখ্যা কম হলে অন্তত মাসে একবার এই উপায়ে ওয়াশিং মেশিন পরিষ্কার করে নিন। এছাড়া প্রতি চার-ছ’মাস অন্তর মেশিন সার্ভিসিং করান। এতে যে কোনও বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম অনেকদিন ভালো থাকবে।
মনীষা মুখোপাধ্যায়