সন্তানের দাম্পত্য অশান্তিতে মানসিক চিন্তা। প্রেম-প্রণয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ ও মনঃকষ্ট। ব্যবসার অগ্রগতি। ... বিশদ
হ্যান্ডমেড নোটবুকের জগতে প্রায়ই এমন সুগন্ধিযুক্ত রঙিন কাগজের দেখা মেলে। লেখার জগতে ডিজাইনার নোটবুক বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। প্রিয় মানুষকে উপহার হিসেবেও নোটবুক দিতে ভালোবাসেন অনেকে। বাজারের হিসেব থেকে শুরু করে কবিতা, চিঠি বা অফিসের অ্যাসাইনমেন্ট লিখে রাখা, নোটবুকই ভরসা! নিত্য ডায়েরি লেখার মানুষও রয়েছেন অনেকে। কেউ আবার এমন নোটবুককে ব্যবহার করেন স্কেচবুক হিসেবে।
একটা সময় সাদামাঠা রুলটানা লাইন বা সাদা কাগজের খাতা মিলত সব দোকানে। বর্তমানে সেখানেও এসেছে বিবর্তন। বাহারি নোটবুকে ছেয়ে গিয়েছে বাজার। নানা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে হাতে তৈরি এই ধরনের নোটবুকের জনপ্রিয়তা আজ তুঙ্গে। শুধু ছোট ছোট উদ্যোগপতিরাই নয়, কর্পোরেট নানা সংস্থাও আজকাল এই ধরনের নোটবুক তৈরি করে।
বাড়িতেই এমন নোটবুক তৈরি করেন সৌম্যা প্রামাণিক। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মেয়েদের প্রশিক্ষণও দেন তিনি। জানালেন, ‘নোটবুকে কেউ লিখতে ভালোবাসে, কেউ আবার ছবি আঁকতে, কেউ বা নিত্য কাজের কিছু খসড়া লিখে রাখেন এতে। ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় এই নোটবুকের মলাট। আমি যেমন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন শাড়ির ছাঁটের টুকরো, নানা ফ্যাব্রিক, ছোট ছোট লেদারের অংশ, বেত, খড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করি এর মলাট। ভিতরের পাতা থাকে মূলত হ্যান্ডমেড কার্ট্রিজ পেপার। ডায়েরিগুলোর মলাটে স্ক্রিন প্রিন্ট বা আর্টওয়ার্কের উপর ল্যামিনেট করা হয়।’
তবে মলাটের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের বেশ কিছু পছন্দ আলাদা করে মাথায় রাখতে হয় তাঁকে। যেমন, নানা এমব্রয়ডারি, অ্যাপ্লিকের কাজ, নকশিকাঁথার কাজ, ব্লক প্রিন্ট, বাগরু, বাটিকের চাহিদা এক্ষেত্রে বেশি। নোটবুকে কতগুলো পাতা, পাতার ধরন কেমন, এগুলোর উপর নির্ভর করে মলাটের প্রকৃতি ও নকশা। কাগজ কত মোটা বা পাতলা তাও মলাট তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হয়। মলাটে অনেক সময় সুতো বা দড়ি দিয়ে নোটবুক বেঁধে রাখার নকশাও করা থাকে। সেখানে ব্যবহার করা হয় বিডস বা কাঠের বোতাম।
হ্যান্ডমেড নোটবুকের কাগজ নানা রকমের ফুল থেকে তৈরি করেন সোনারপুরের তৃণা দণ্ডপাট। তৃণা বললেন, বাংলাদেশের ফারিহা সান্ত্বনা ফুল থেকে কাগজ তৈরি করেন। হাতে তৈরি করা কাগজের প্রতি বাড়তি আগ্রহ থাকায় সান্ত্বনার কথা কানে আসে তৃণার। তারপর নিজেও চেষ্টা করেন ফুল থেকে ডায়েরির পাতা তৈরি করতে। কাগজ বানানোর অল্পবিস্তর অভিজ্ঞতা আগে থেকেই ছিল। নেট ঘেঁটে শিখে নিলেন ফুল সংরক্ষণ করে রাখার উপায়। নির্দিষ্ট ডাই, সলভেন্টের সঙ্গে ফুল মেশানোর প্রক্রিয়াও আয়ত্তে আনেন। কোন কাগজে কোন ফুলের রস ভালো ধরবে, কোন ফুলের রসে সব ধরনের কলম দিয়েই লেখা যাবে এসব অভিজ্ঞতা কাজ করতে করতে হয়েছে তৃণার। জানালেন, ‘গোলাপ, অপরাজিতা, জবা এমনকী, সর্ষে ফুল ও কফি বিন দিয়েও ডায়েরির পাতা তৈরি করেছি। তাই আমার বানানো পাতায় গন্ধও মেলে উপাদানের।’
কথায় কথায় বললেন, প্রতি ফুলের সংরক্ষণের ধরন আলাদা। কোথাও প্রয়োজন হয় রাসায়নিকের, আবার কোনও ফুলকে শুকনো বাতাসে রেখেই সংরক্ষণ করা যায়। কারও আবার দরকার পড়ে মাইক্রোআভেনের তাপ। তবে কাগজের সঙ্গে ফুল মেশে বলে এই কাগজগুলি একটু আঁশযুক্ত হয়। তবে এগুলো খুব মোলায়েম। শুধুমাত্র পেপার পাল্প দিয়ে কাগজ বানালে তা আবার খুব মসৃণ ও পাতলা হয়। অনেকে সেই ধরনের কাগজও পছন্দ করেন। খড়খড়ে ও একটু মোটা পাতা চাইলে এর সঙ্গে পুরনো কাগজ, কাঠ গুঁড়োও মেশানো যায়।
এই ধরনের ডায়েরি বানাতে কত সময় লাগে? এই প্রশ্নের উত্তরে সৌম্যা জানালেন, নকশাভেদে নির্ভর করে নোটবুক তৈরির সময়। সাধারণত একটা নোটবুক বানাতে ৫-৭ দিন সময় লাগে। নকশা অনুসারেই নির্ধারিত হয় দাম। এক একটা ফুলের কাগজের নোটবুক বিক্রি হয় ৫০০-১০০০ টাকার মধ্যে। সাধারণ হাতে বানানো অন্য নোটবুক ৮০-১৫০ টাকাতেও মেলে।
কোথায় পাবেন
অক্সফোর্ড বুকস্টোর, গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট সহ যে কোনও ভালো স্টেশনারি দোকানে এমন নোটবুক পাবেন। অনলাইনেও এমন নোটবুক অর্ডার করতে পারেন।