গত ১৫ই মে সুজাতা সদনে অনুষ্ঠিত হল বেহালা বাতায়ন নিবেদিত নাটক ‘হত্যাকারী’। নাটকটি লিখেছেন বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়। নির্দেশনা দিয়েছেন নবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি বধুহত্যাকে কেন্দ্র করে এই নাটকের ঘটনাচক্র আবর্তিত হয়। একাঙ্ক নাটকটি পুরোটাই অধ্যাপক নরেন পালের বৈঠকখানায়। নরেনবাবুর কাজের লোক সরস্বতী মন্ডল। তার বড় মেয়ে কলাবতী। এই কলাবতীই আগুনে পুড়ে মারা যায় শ্বশুরবাড়িতে। এই মৃত্যু নিয়ে সরস্বতীদের মনের মধ্যে যথেষ্ট সংশয় আছে। তাদের ধারণা তাদের মেয়েকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এই ধারণা আরও বেশি করে প্রকট করে দেয় নরেনবাবু। ছোটোবেলা থেকে তাঁদের বাড়িতে কাজ করা শুরু করে কলাবতী। নরেনবাবু একমাত্র মেয়ের সারাক্ষণের সঙ্গীও ছিল সে। স্বভাবতই তার প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত তাঁর পরিবার। কলাবতীর এই বিয়েতে নরেনবাবুর সম্মতিও ছিল না। তবুও তার মায়ের ইচ্ছার জন্য বিয়েতে আপত্তি করেননি তিনি। তবে যখন এই মৃত্যুর খবর এল তখন তিনি এটাকে মেনে নিতে পারেননি। অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য তাঁর তরফ থেকে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা তিনি নিয়েছেন। থানায় এফ আই আর করা থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া পর্যন্ত। তাই লোকাল থানা থেকে অফিসার ভবভূতি ভট্টাচার্য তদন্তে আসেন। তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে নরেনবাবু খুব একটা খুশি হতে পারেননি। কিন্তু অফিসার তাঁকে বুঝিয়ে দেন যে, পুলিশের কাজটা কত কঠিন। হাতে কোনও প্রমাণ ছাড়া কেবলমাত্র সন্দেহের বশে কাউকে গ্রেপ্তার করলে তাকেও জবাবদিহি করতে হবে। এখানে কোনও আবেগ নিয়ে কাজ করলে চলবে না। তিনি দেখিয়ে দিলেন যে কলাবতী মারা যাওয়ার পর তার ভাইকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা সোনার গহনা ফিরিয়ে দিয়েছেন। তার ওপর আছে লোকাল রাজনৈতিক চাপ। সব কিছু সামলে সঠিক প্রমাণ হাতে পেলে তবেই পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে। সাধারণ মানুষ হয়তো আবেগের বশে তার ভাবনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে কিন্তু পুলিশ তা পারে না।
আশ্চর্য লাগল ‘হত্যাকারী’ নাটকে ঘাতকই অদৃশ্য। অথবা বলা যেতে পারে সত্যিই কলাবতীকে হত্যা করা হয়েছিল কিনা তাও প্রমাণিত হল না নাটকের শেষে। ফলে নাটকের নাম শুনে দর্শকদের যে ভাবনা মনের মধ্যে ছিল তা কিন্তু নাটকে প্রতিফলিত হল না। স্বভাবতই এই নাটককে দর্শক মনগ্রাহী করে তোলা খুবই কঠিন। এছাড়া নাটকের প্রতিটি চরিত্রের অভিনয় নিয়ে আরও গভীর ভাবে ভাবনা চিন্তা করার প্রয়োজন ছিল।
চিন্ময় গড়গড়ি