বিশেষ কোনও কর্মের আর্থিক সংস্থান নিয়ে মানসিক চিন্তা বৃদ্ধি পাবে। আর্থিক ঝুঁকি নেবার আগে দুবার ... বিশদ
বয়স্কদের একাকিত্বের সমস্যা দূর করতে একটু সৃজনশীল কাজে সময় কাটানোর পরামর্শ দিলেন জেরোন্টোলজিস্ট মনোপ্রভা কউর। তাঁর কথায়, ‘একটা বয়সের পর একাকিত্ব আসাই স্বাভাবিক। বিশেষত চাকরিরতদের এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। কিন্তু সেটা কাটিয়ে ওঠার দায়ও তাঁদেরই। সময়টাকে একটু সৃজনশীলভাবে কাজে লাগাতে হবে। যে কোনও কাজ নয়, এমন কাজ যার প্রতি তাঁদের ঝোঁক রয়েছে।’
মনোপ্রভার কথায়, এই বয়সে নতুন করে কিছু শিখে সেই কাজ করার ধৈর্য থাকে না। ফলে এমন কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে যেটা আগে থেকেই জানেন। তারই কয়েকটা সম্বন্ধে ধারণা দিলেন তিনি।
নিজের ছবি আঁকার নেশাটাকে পেশায় বদল করতে পারেন। বাড়িতেই চালু করুন বাচ্চাদের আঁকার ক্লাস। কচিকাঁচাদের সঙ্গে সময়ও দিব্যি কেটে যাবে আর তাদের সংস্পর্শে এলে মনও ভালো থাকবে। পেশাগতভাবে করতে না চাইলে সেটাকে অবসরযাপনের সঙ্গী করে তুলুন। টিভি দেখে, গান শুনে ক্লান্ত লাগলে ছবির সঙ্গে সময় কাটান। গল্প বুনুন ছবির মাধ্যমে।
ক্রুশের কাজ, উল কাঁটার কাজ বা সেলাই এখন ভীষণ ট্রেন্ডিং। এমন কোনও কাজ যদি আপনার বাঁ হাতের খেল হয় তাহলে সেই বিদ্যাই আবারও ঝালিয়ে নিন। ক্রুশের পোশাক, কুশন কভার, বেড কভার, কার্পেট ইত্যাদি বানিয়ে তা বিক্রি করতে পারেন। আজকাল অনলাইনে বিক্রির সুযোগ প্রচুর। বাড়ির অল্পবয়সি সদস্যদের সাহায্যে হয়ে উঠতে পারেন ব্যবসায়ী। অথবা উলের সোয়েটার, মাফলার, জ্যাকেট ইত্যাদি বুনে নিজের প্রিয়জনকে উপহারও দিতে পারেন। জন্মদিন থেকে বিয়ের তারিখ সবক্ষেত্রেই নিজের হাতের তৈরি উপহারের কদর আলাদা হয়ে উঠবে। সেলাই জানলে রুমাল, ব্লাউজপিস ইত্যাদি বানিয়ে ফেলুন নিজের হাতে। তারপর তা অনলাইনে বিক্রিও করতে পারেন। নাহলে উপহারও দিতে পারেন।
বাগান করতে ভালোবাসেন? বাড়ির ব্যালকনি, উঠোন বা অন্যত্র ফুল, ফল, সব্জির গাছ করুন। সকাল বিকেল গাছের পরিচর্যায় বেশ কিছুটা সময় কেটে যাবে। শুধু তাই নয়, গাছে যখন ফুল ফুটবে তখন দেখবেন মনটা কেমন নিমেষে ভালো হয়ে যাবে। কোনও খারাপলাগা একাকিত্ব কিচ্ছুটি থাকবে না মনে। একটু বেশি জায়গা থাকলে তো ফল বা সব্জিও ফলাতে পারবেন। নিজের বাগানের ফুল, ফল, সব্জি স্বাদে গুণে অন্য সব কিছুকে হার মানাবে।
নাচ বা গানের শখ ছিল কোনও কালে? আবার নিয়ম করে সেই চর্চায় মেতে উঠুন। সময় ও সুযোগ থাকলে গানের ক্লাসে ভর্তি হতে পারেন। অবসর সময়ে আপন মনে গান গেয়ে দেখুন মন ভালো হবে। আবার কোনও ঘরোয়া অনুষ্ঠানে গান গাইতেও পারেন। লোকে শুনে মুগ্ধ হবে। নাচের অভ্যাসটা বজায় না রাখলে হয়তো পরবর্তীকালে তা হঠাৎ ধরে ফেলতে কষ্ট হবে। তবে চেষ্টা করে দেখুন না, লাভ বই ক্ষতি তো কিছু হবে না তাতে।
অনেকে নাট্যচর্চা করতে ভালোবাসতেন। সংসার আর কাজের চাপে সেই শখ চাপা পড়ে গিয়েছিল হয়তো, আবার সেই শখ জাগিয়ে তুলুন। কোনও নাটকের দলে নাম লেখাতে পারেন। পাড়ার অনুষ্ঠানে নাটকে অভিনয় করতে পারেন। সব মিলিয়ে দেখবেন সময় কেমন দুর্বার গতিতে কাটছে।
লেখালিখির শখ থাকলে তো কথাই নেই। নিজের ভাবনাগুলো উজার করে দিন খাতার পাতায়। গল্প, ভ্রমণকাহিনি, কবিতা, উপন্যাস যেমন ইচ্ছে লিখুন। আজকাল অনেক সংস্থা পাণ্ডুলিপি পছন্দ হলে নবীন লেখকের বই ছাপাতেও রাজি থাকে। কেউ আবার সামান্য মূল্যের বিনিময়েও নিজের লেখা প্রকাশ করতে পারেন। আর যদি প্রকাশের আলো নাও বা দেখে, অনলাইনেও লিখতে পারেন। আসলে নিজের ভাবনাগুলো লিপিবদ্ধ করার মজাই আলদা।
এই শখগুলো বজায় রাখলে দেখবেন নিজস্ব একটা গণ্ডি তৈরি হবে। বন্ধু বাড়বে। তখন আর পরিবারের কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না সময় কাটানোর জন্য। হঠাৎ গজানো বন্ধুর দলের সঙ্গে অনেকে বেড়াতেও যান। কেউ বা বাড়িতে আড্ডা দেন।
মোটমাট নিজস্ব শখে মন ভোলান। তাতে শরীর ও মন দুই-ই ভালো থাকবে। বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্বেচ্ছায় ও স্ফূর্তিতে বাঁচুন।