সন্তানের তীক্ষ্ণ বাক্য ও উদ্ধত আচরণে মনঃকষ্টের যোগ। কর্ম নিয়ে জটিলতার অবসান। অর্থকড়ি দিক অনুকূল। ... বিশদ
পরিশেষে প্রতিবেশী কৃষক হাজি পাঁচু শেখের কাছে খবর পেয়ে মহারাজ একদিন তাঁর সঙ্গে জমি দেখতে গেলেন। হাজি পাঁচু শেখ তাঁকে ৫০ বিঘার উলুখড়ের বিস্তীর্ণ এক প্রান্তর দেখালেন (বর্তমান সারগাছি আশ্রম যার ওপর প্রতিষ্ঠিত)। সেই জমি দেখে মহারাজের পছন্দ হলো এবং নির্জন সেই প্রান্তরে কিছুক্ষণ কাটিয়ে ফিরে এসে সঙ্গীকে জানালেন যে, তাঁর এই জমি পছন্দ হয়েছে।
নির্বাচিত এই জমি ছিল জমিদার হাজি মহরম আলির। মহারাজ শীঘ্রই এই জমি নেওয়ার জন্য মনস্থ করলেন। দু-দিন পরে জমিদারের সঙ্গে দেখা করে তিনি একটি প্রাথমিক আলোচনা করে এলেন। বহরমপুরের উকিল বৈকুণ্ঠবাবু সব ব্যবস্থা করে দিলেন। ঐ ৫০ বিঘা জমির কিছুটা অংশে ধান হতো, বিঘা ভুঁই ৮টাকা বিক্রি হতো, আর বাকি কতকটা প্রজা বিলি ছিল। জমিদার ৪ টাকা হিসাবে বিঘা ভুঁই খাজনায়, অর্থাৎ বার্ষিক ২০০ টাকা খাজনায় এই জমি পূজনীয় অখণ্ডানন্দ স্বামীকে কায়েমি বিলিবন্দোবস্ত করবার জন্য প্রস্তুত। এবং পুকুর খনন, ইট তৈরি, বৃক্ষ রোপণ-ছেদন প্রভৃতি জমিদারের সমস্ত অধিকার বিলি করতে রাজি—এই মর্মে দলিল লেখাপড়া হবে। বৈকুণ্ঠবাবু দলিল লিখে দেবেন। তখন পূজনীয় অখণ্ডানন্দ স্বামী বললেন, “আমার নামে জমি নেওয়া হবে না। এ তো আমার নিজের কিছু নয়—এ মিশনের, এ ঠাকুরের। মিশনের প্রেসিডেন্ট স্বামী ব্রহ্মানন্দের নামে নেওয়া হবে।” তিনি এই মর্মে দলিল করে দিতে বৈকুণ্ঠবাবুকে বললেন এবং বেলুড় মঠ থেকে Memorandum of Association যা আছে, তার নকল আনাতে বললেন। সব দেখে-শুনে বৈকুণ্ঠবাবু রামকৃষ্ণ মিশনের প্রেসিডেন্ট স্বামী ব্রহ্মানন্দ, সম্পাদক স্বামী সারদানন্দ ও স্বামী অখণ্ডানন্দ—এই তিন জনকে ট্রাস্টি করে দলিল মুসাবিদা করে দিলেন। পূজনীয় স্বামী ব্রহ্মানন্দ তখন পুরীতে ছিলেন, তাঁকে দলিল পাঠানো হলো। কিন্তু বাৎসরিক ২০০ টাকা খাজনার liability নিতে তিনি গররাজি। বৈকুণ্ঠবাবুকে তিনি বাৎসরিক খাজনা কমাবার প্রয়াসের জন্য চিঠি লিখলেন। স্বামী অখণ্ডানন্দকেও লিখলেন খাজনা কমাবার জন্য—“তুমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছ জানি, তবুও দেখ যদি আরও কমে।” বৈকুণ্ঠবাবুর প্রস্তুত করা মুসাবিদা অনুমোদন করার জন্য ব্রহ্মানন্দ স্বামীর কাছে পাঠানো হলো। পুরীতে বিহারীবাবু প্রমুখ আইনবিদরা উক্ত মুসাবিদায় ‘আশ্রম ইচ্ছানুসারে এই জমি ইস্তফা দিতে পারবে’, ‘এই জমির খাজনা বাকি পড়লে এই জমি থেকে জমিদার আদায় করে নেবেন’, ‘মিশনের অন্য সম্পত্তি ক্রোক, বিক্রি করতে পারবেন না’।